সউদী গমনেচ্চু দক্ষ কর্মীদের ভাগ্য খুলতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেবে সউদী আরব। দক্ষতার সার্টিফিকেট নিয়ে দেশটিতে গেলে কর্মীরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। রাজকীয় সউদী সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার এ সংক্রান্ত একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সউদী গমনেচ্ছু বাংলাদেশি কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে দক্ষতা যাচাই হবে, উত্তীর্ণদের সনদ দেয়া হবে। গৃহীত প্রকল্প ‘স্কিল ভেরিফিকেশন প্রোগ্রাম’ এর উদ্বোধন উপলক্ষে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে দেশটির ঢাকাস্থ দূতাবাস। বারিধারায় নবনির্মিত সউদী চ্যান্সরি কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দোহাইলাম নতুন নিয়োগ পদ্ধতির বিস্তারিত তুলে ধরেন।
দেশটির পাঁচ খাতে বিপুল পরিমাণ দক্ষ কর্মী নেবে। তবে খাতওয়ারি ওই নিয়োগের পূর্বে কর্মীদের দক্ষতার সনদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করেছে রিয়াদ। এতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলমসহ সংশিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্লাম্বার, ওয়েল্ডিং, অটোমোবাইল, ইলেক্ট্রিশিয়ান এবং এসি মোকানিক- এই পাঁচটি খাতে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিতে আগ্রহী সউদী সরকার। কর্মীদের দক্ষতা পরীক্ষার জন্য জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং সউদী সরকারি সংস্থা তাকানলের মধ্যে একটি প্রকল্প পরিচালন সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের দুটি প্রতিষ্ঠান ওই পরীক্ষা গ্রহণ বিষয়ক প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিবে। এজন্য কর্মীদের কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না।
একজন বাংলাদেশি যতবার ইচ্ছা ততবার পরীক্ষা দিতে পারবেন। উত্তীর্ণদের সার্টিফিকেটের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। সংবাদ সম্মেলনে সউদী আরবের রাষ্ট্রদূত বলেন, অদক্ষ কর্মীদের বেতন যদি ৮০০ থেকে ১২০০ রিয়াল হয়ে থাকে, তবে দক্ষ কর্মীদের বেতন হবে ১৫০০ থেকে ১৮০০ রিয়াল। এর মাধ্যমে তারা বেশি আয় করতে সক্ষম হবেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, ইতোমধ্যে এ ধরনের পরীক্ষা ভারত ও পাকিস্তানে চালু হয়েছে। প্রথাগত কর্মীদের এ ধরনের কোনও পরীক্ষা দেয়া লাগবে না। কিন্তু ওই পাঁচটি খাতে সউদী আরবে কাজ করতে হলে সার্টিফিকেট লাগবে।
এই সার্টিফিকেটের সুবিধার বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, জনশক্তিতে বিনিয়োগ করলে বাংলাদেশই বেশি লাভবান হবে। দ্বিতীয়ত, সার্টিফিকেটপ্রাপ্তরা অন্য দেশের কর্মীদের থেকে বেশি সক্ষম হবে। তৃতীয়ত তারা বেশি আয় করার সুযোগ পাবে।
পরীক্ষায় কী কী বিষয় থাকতে পারে এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, আরবি ভাষা ও কিছু রীতি-নীতি এবং তারা নতুন যন্ত্রপাতি যেমন-মাইক্রোওয়েভ ওভেন বা এধরনের যন্ত্র ব্যবহার করতে পারে কিনা, সেটি আমরা দেখবো। তিনি জানান, এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য একাধিক সউদী কোম্পানী আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। নতুন এই ব্যবস্থার কারণে প্রথাগত কর্মীদের সউদী আরবে যেতে কোনও বাধা নেই জানিয়ে ঈসা বিন ইউসুফ আল দোহাইলাম বলেন, প্রতিদিন আমরা গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার ভিসা ইস্যু করি।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম বলেন, অনেক দক্ষ কর্মী সউদীতে যান, কিন্তু তাদের কোনও স্বীকৃতি নেই। এই যাচাইয়ের মাধ্যমে ওই কর্মীদের দক্ষতার সনদ দেয়া হবে এবং সেটি দেবে সউদী কর্তৃপক্ষ। তাকানলের মাধ্যমে ওই সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে। নতুন ওই প্রোগ্রামের মহাপরিচালক ফাহাদ আলকাসিম বলেন, সউদী আরবে যাওয়ার আগে আমরা কর্মীদের দক্ষতা যাচাই করতে চাইছি। এদিকে, হজে বয়স সীমা ও করোনা পরীক্ষা বাধ্যবাধকতা বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে সউদী রাষ্ট্রদূত বলেন, করোনার কারণে গতবার হজে বয়স সীমা ও করোনা পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা ছিল। তবে এবার বয়সের কোনো সীমা থাকবে না। করোনা পরীক্ষার বিষয়টি সউদী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেখছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন