মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

নিহতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে গৃহহীন ১০ লাখ সহায়তা অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা দিয়েছেন কাতারের আমির : দুটি সীমান্ত পারাপার খুলে দিচ্ছে সিরিয়া

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সিরিয়া এবং তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে তুরস্কে এরইমধ্যে মৃতের সংখ্যা ৩২ হাজার ছাড়িয়েছে। সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত ৫,৮০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তুরস্কে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে এবং সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে যে, সিরিয়ায় এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

দুই দেশেরই উদ্ধারকারী দলগুলো এখন বিস্তীর্ণ এলাকায় উদ্ধার কাজ গুটিয়ে আনছে। কারণ জীবিত কাউকে উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। জাতিসংঘ বলছে যে, গত সপ্তাহের মারাত্মক ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হওয়ার পর দেশটিতে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে আরও দুটি সীমান্ত পারাপার খুলতে রাজি হয়েছে সিরিয়ার সরকার। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, ‘এটি একটি বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। আমরা এখন পর্যন্ত একটি সীমান্ত পারাপার ব্যবহার করছি।’ অনেক সিরিয় নাগরিক তাদের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশে সহায়তা না পৌঁছানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হওয়ার জন্য দেশটির উপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সাহায্য গোষ্ঠীগুলো বলছে, আসাদ সরকারের অব্যবস্থাপনা এবং দেশের সব এলাকায় উদ্ধার কাজে সংযুক্ত না হওয়াটাই মূল প্রতিবন্ধকতা।

সোমবার দামেস্কে প্রেসিডেন্ট আসাদের সাথে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর জাতিসংঘ নতুন দুটি সীমান্ত পারাপার খুলে দেয়ার এই ঘোষণা দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে- তুরস্কের সীমান্তের সাথে থাকা বাব আল-সালাম এবং আল রাই সীমান্ত পারাপার। এতে বলা হয়েছে, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় সীমান্ত পারাপার প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য খোলা থাকবে। বিবিসি রেডিও ফোরের ওয়ার্ল্ড টুনাইট প্রোগ্রামকে গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেছেন, ‘খুব শীঘ্রই আমরা অন্য দুটি পারাপার ব্যবহার করব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এটি ব্যবহার করতে হবে ততক্ষণ পর্যন্ত চুক্তিটি স্থায়ী হবে। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি ব্যবহার করা শুরু করব এবং আমি এটি ছাড়া আর কোন কিছুই ভাবতে চাই না।’

দুজারিক আরো বলেন, ‘আমি শুধু অনুমান করতে চাই যে, মানুষ এই সংঘর্ষে যে পক্ষকেই সমর্থন করুক না কেন এখন তারা রাজনীতিকে সরিয়ে রাখবে।’ তবে কবে নাগাদ দুটি সীমান্ত পারাপার চালু হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। তবে, দুজারিক সিরিয়ার পারাপারগুলি খোলার অনুমতির জন্য বিলম্ব করার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারি যে, জাতিসংঘের সাথে অধিভুক্ত নয় এমন অন্যান্য সাহায্য সংস্থাগুলি এই সীমান্ত ক্রসিংগুলি আগে থেকেই ব্যবহার করছে। আমাদের নির্দিষ্ট পরিধির মধ্যে কাজ করতে হয়, এটি জাতিসংঘের বৈশিষ্ট্য।’

প্রেসিডেন্ট আসাদ এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি। ভ‚মিকম্পের পর প্রথম কয়েক দিনে সিরিয়ার সরকার-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কিছু ত্রাণ সরবরাহ পৌঁছেছিল। মূলত রাশিয়া, ইরান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো বন্ধু রাষ্ট্রগুলো থেকে এসব সহায়তা আসে। কিন্তু সিরিয়ার বিধ্বস্ত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো কার্যত বিচ্ছিন্ন থেকে গেছে। এর কারণ এই অংশগুলিতে আন্তর্জাতিক মানবিক সাহায্য শুধুমাত্র তুরস্ক হয়ে যাওয়া একটি সীমান্ত পারাপার ব্যবহার করে পৌঁছাতে পারে। অথবা সিরিয়ার সরকার-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলির মধ্য দিয়ে সেগুলোকে পৌঁছাতে পারে।

তুরস্ককে সহায়তা অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা দিয়েছেন কাতারের আমির : এদিকে, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি জোর দিয়ে বলেছেন যে, তার দেশ ভ‚মিকম্পের প্রতিক্রিয়া কাটিয়ে উঠতে তুরস্ককে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে। রোববার ইস্তাম্বুলে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগানের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।

কাতার নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, দুই নেতা কাতার ও তুরস্কের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক এবং অঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেছেন। আল থানি ভ‚মিকম্পে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের জন্য এরদোগানের প্রতি তার সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন যে, কাতার সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে তুরস্কের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণকে সব ধরণের সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।

তুরস্কে নিযুক্ত কাতারের রাষ্ট্রদূত শেখ মোহাম্মদ বিন নাসের বিন জসিম আল থানি নিশ্চিত করেছেন যে, শেখ তামিম তার সফরের মাধ্যমে তুরস্ক এবং সিরিয়ার জনগণকে কাতারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সমর্থন দেখিয়েছেন। ‘বিশেষ করে যেহেতু দুর্যোগ যতটা আমাদের তুর্কি ও সিরিয়ার ভাইদের আঘাত করেছে, আমারাও ততটা আঘাত পেয়েছি।’

তিনি উল্লেখ করেছেন যে, কাতার ভ‚মিকম্পের বিপর্যয়ের প্রথম মুহ‚র্ত থেকে, তুরস্কের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং এ বিপর্যয়কর দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ প্রদানের জন্য সমস্ত ক্ষমতা ব্যবহার করেছে, এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জরুরী সাহায্য ও ত্রাণ প্রদান করেছে, যার প্রতিক্রিয়া এবং বেদনাদায়ক প্রভাব এখনও পর্যন্ত অব্যাহত আছে।

রাষ্ট্রদূত যোগ করেছেন যে এই ট্র্যাজেডির প্রথম মুহ‚র্ত থেকে, কাতার তুরস্কের সহায়তায় এসেছে এবং এর সবই আমিরের সফরে পরিণত হয়েছে, যা একটি স্পষ্ট বার্তা বহন করে যে, কাতার সবসময় তুরস্কের পাশে থাকে, ভাল ও খারাপ সময়ে এবং যে তারা এই যন্ত্রণাদায়ক দুর্যোগের অংশীদার। কাতারে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ড. মুস্তাফা গোকসু নিশ্চিত করেছেন যে, শেখ তামিমের তুরস্ক সফর অর্থবহ এবং এর তাৎপর্যপূর্ণ অর্থ রয়েছে, কারণ গত সপ্তাহে দেশের দক্ষিণে বিধ্বংসী ভ‚মিকম্পের বিপর্যয়ের পরে তিনি বিশ্বের প্রথম নেতা যিনি তুর্কি প্রজাতন্ত্র সফর করেন। সূত্র : আশরাক আল-আওসাত, বিবিসি নিউজ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন