দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে মাঘের মধ্যভাগ থেকে শীত বিদায় নিয়ে বসন্তের আবহাওয়ার পরে ফাল্গুনের শুরু থেকেই ঠান্ডায় কাবু সাধারণ মানুষ। মাঘের মধ্যভাগের পরে দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ পরিবার শীতের গরম কাপড় তুলে রাখলেও গত দু দিনে তা আবার নামাতে হয়েছে। ফেব্রুয়ারীতে বরিশালে স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকার কথা। কিন্তু মাঘের শেষে তাপমাত্রার পারদ ১৮ ডিগ্রী ছুঁই ছুঁই করলেও এখন তা ১২ ডিগ্রীর নিচে। আবহাওয়ার এ অস্বাভাবিক আচরণ কৃষি সহ জনস্বাস্থ্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
এমনকি দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে এবার ‘মাঘের শীত বাঘের গায়’এর পরিবর্তে তাপমাত্রায় বসন্তের আমেজের সাথে ঘন কুয়াশায় আম সহ মৌসুমী ফলের মুকল ও গুটির পাশাপাশি বোরো বীজতলার ক্ষতি আশংকা তড়ান্বিত হয়েছে। কিন্তু আকষ্মিকভাবেই গত দুদিনে তাপমাত্রা ১৮ থেকে ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে। আবহাওয়ার এ বিরূপ আচরনে গমের ছত্রাকবাহী ‘ব্লাস্ট’ সহ মাঠে থাকা গোল আলুও ‘লেট ব্লাইট’ রোগে আক্রান্তের সম্ভবনা ক্রমশ বাড়ছে। আবাহাওয়ার নানামুখি আচরনে এবার দক্ষিণাঞ্চলে বোরো সহ শীতকালীন সবজি আবাদ ও উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় এবার বীজতলা তৈরীর লক্ষ্য অতিক্রম করলেও পৌষের শুরু থেকে তাপমাত্রা অব্যাহত ভাবে স্বাভাবিকের নিচে থাকার পাশাপাশি ঘন কুয়াশায় ‘কোল্ড ইনজুরী’ নিয়ে শংকিত কৃষিবীদগনও। চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে ৩ লাখ ৭০ হাজার হেক্টরের বোরো ধান থেকে প্রায় ১৭ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রনালয়।
কিন্তু ধারাবাহিকতা বিহীন আবাহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরনে কৃষির পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। পৌষের মধ্যভাগে বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে যাওয়ায় কৃষি সহ জনস্বাস্থ্যেও ব্যাপক বিপর্যয় নেমে আসে। নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে ইতোমধ্যে প্রায় ১০ হাজার রোগী চিকিৎসা গ্রহন করেছে। শিশু ও মেডিসিন বিভাগ সমুহের মেঝেতেও রোগীদের ঠাই হচ্ছিল না। এমনকি শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে এক সপ্তাহে অন্তত ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডাজনিত রোগে।
মাঘের শুরু থেকে ভরা শীতে দক্ষিণাঞ্চলে এবার তাপামাত্রার পারদ ১৭-১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসেও উঠে গিয়ে শীত উধাও হতে শুরু করে। এমনকি মধ্য মাঘর পরে বরিশালে তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৬-৭ ডিগ্রী ওপরে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ৩০ ডিগ্রীর ওপরে উঠে যায়। যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২-৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশী ছিল। ফেব্রæয়ারী মাসে বরিশালে সর্বোচ্চ স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৮.২ ডিগ্রী থাকার কথা। কিন্তু ৪ দিন আগেও বরিশালে তা ৩০ ডিগ্রীর ওপরে উঠে গেলেও গত দুদিনে আবার ২৮ ডিগ্রীতে নেমেছে।
আবহাওয়া বিভাগ থেকে মৌসুমের স্বাভবাবিক লঘুচাপ বঙ্গোপসাগরে অবস্থানের কথা জানিয়ে আগামী ৩ দিনে তাপমাত্রার পারদ ক্রমশ ওপরে উঠবে বলেও জনান হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন