বিএনপি গত ১০ ডিসেম্বর নিয়ে খুব হম্বিতম্বি করেছিল বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, দালালি করে কারো ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন। বাংলাদেশের মানুষ নিজের দেশ সম্পর্কে এখন অনেক জানে। ইতিহাস সম্পর্কে জানে। আমাদের লক্ষ্য কী সেটাও তারা জানে। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলব আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে। বাঙালি জাতি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে গড়ে উঠবে। বাধা আসবেই, বাধা আসছে। ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ এ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন তারা (বিএনপি) আন্দোলন করবে সরকার উৎখাত করবে অনেক কিছু বলে যাচ্ছে। অনেক আয়োজন করেছে। আর আমাদের দেশে কিছু মানুষ থাকে যারা অসময়ে নিরব সময়ে সরব। যখন এই ১০ ডিসেম্বর নিয়ে বিএনপি হম্মি-তম্বি করছে, আমরাও দেখছি। তারা মিছিল করছে মিটিং করছে কোনো কিছুতে বাধা দিইনি। কিন্তু বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ তখন একটা মিছিল মিটিংও করতে পারত না। সব জায়গায় বাধা দিত। যেভাবে অত্যাচার করেছে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর মেয়েদের উপরে রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে কাপড়চোপড় ছিড়ে ফেলেছে। একদিকে ছাত্রদল একদিকে পুলিশবাহিনী দিয়ে। তারপরেও আমরা কিন্তু প্রতিশোধ নিতে যাইনি। আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নের দিকেই নজর দিয়েছি। আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়ন করবার জন্যই কাজ করেছি। কিন্তু ওরা আমাদের ওপর যা করেছে আমরা তার কিছুই করি নাই। তার পরেও দেশে-বিদেশে গিয়ে হাহাকার করে বেড়ায় কেঁদে বেড়ায়। মনে হচ্ছে বাইরের থেকে কেউ এসে লাইন করে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে সেই স্বপ্নে তারা বিভোর। হয়তো এক সময় সেটা করতে পেরেছে দালালি করে। এখন আর সেই দালালি করে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ নাই। বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন। বাংলাদেশের মানুষ নিজের দেশ সম্পর্কে এখন অনেক জানে। ইতিহাস সম্পর্কে জানে। আমাদের লক্ষ্য কী সেটাও তারা জানে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে অবদান আছে সেটি স্পষ্ট। যদি এই তথ্যগুলো আমরা বের না করতাম আর জাতির পিতার লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ যদি বের না হতো তাহলে... ভাষা আন্দোলন থেকে তাকে তো মুছেই ফেলা হয়েছিল। নামটাই মুছে ফেলা, এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য। যখনই যে কাজ করেছেন তখনই ইতিহাস থেকে তার নামটা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের অনেক তথ্য আপনারা পাবেন, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা যেসব রিপোর্ট দিয়েছিল সেখানে। আমি ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে সমস্ত রিপোর্ট সংগ্রহ করি। সেগুলো কপি করে আমাদের কাছে রাখি। আমাকে সহযোগিতা করে আমার বান্ধবী বেবী মওদুদ। প্রায় ২০টা বছর আমরা এর ওপরে কাজ করি, প্রত্যেকটা ফাইল আমরা দেখি। দ্বিতীয় বার যখন আমি ক্ষমতায় আসি, তখন সিদ্ধান্ত নিই এগুলো প্রকাশ করব। পৃথিবীতে কোনো নেতার ওপর কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। এই রিপোর্টটাই সর্বপ্রথম আমি প্রকাশ করলাম।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি অনেক নেতার ফাইল এনেছি, দেখেছি। কারও হয়তো একটা ফাইলের বেশি কিছু নেই। আর এখানে ৪৮টি ফাইল, ৪৬ হাজার পৃষ্ঠা। আমি যখন এটার এডিট করি, অনেক কিছু বাদ দিয়ে মূল যে তথ্যগুলো সেখানে নিয়ে এসেছি। তাতেও ১৪ খণ্ড হচ্ছে। ১১ খণ্ড ইতোমধ্যে ছাপা হয়ে গেছে। ১২ নম্বরটাও ছাপতে দেওয়া হয়েছে। ১৩ নম্বরটা এডিট করে দিয়ে দিয়েছি, আর ১৪ নম্বরটা করব। ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর যে অবদান সেই কথাটা কিন্তু স্পষ্ট এখানে আছে। যদি এই তথ্যগুলো আমরা বের না করতাম, আর জাতির পিতার লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী যদি বের না হতো তাহলে তাকে তো ভাষা আন্দোলন থেকে মুছেই ফেলা হয়েছিল।
আলোচনা সভার অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্ঠামণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, চিলচ্চিত্রের অভিনেতা নায়ক ফেরদৌস আহমেদ, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, কার্যনিবাহী কমিটির সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ হুমায়ুন কবির প্রমূখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন