কক্সবাজারে তুরস্ক-সিরিয়ার মত ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে প্রায় সকল স্থাপনা মাটিতে মিশে যাবে এমন আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তুরস্ক-সিরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভূমিকম্পের রেশ কাটতে না কাটতে বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় এমন আশঙ্কার কথা উঠে আসছে। গত শনিবার
কক্সবাজারে ৪ দশমিক ১০ মাত্রার ভূ-কম্পন অনুভূত হয়েছে। তবে এতে বড় কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারে হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি সহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় আরো বড় ধরণের ভূমিকম্পের শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায়না।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টা ৩৯ মিনিটে কক্সবাজার শহর, উখিয়া ও টেকনাফে এ ভূ-কম্পন অনুভূত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আবহাওয়া অধিদফতর কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, বিকেল ৪টা ৩৯ মিনিটে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ২০ দশমিক ৯০ অক্ষাংশ এবং ৯২ দশমিক ৩৩ দ্রাঘিমাংশে ভূকম্পনটির উৎপত্তি হয়েছে। যেটি ঢাকা থেকে ৩৭৭ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। এর ফলে কক্সবাজার জেলার মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকায়
৪.১০ মাত্রার ভূ-কম্পন অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পের ফলে টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। টেকনাফ উপজেলা মৎস্য কেন্দ্রের কার্যালয়ে ফাটল দেখা গেছে। এছাড়া আরো কয়েকটি বাড়ি ঘরে ফাটলের খবর জানা গেছে। টেকনাফ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিকেলে ভূ-কম্পন অনুভূত হওয়ায় তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বের হয়ে যান তিনি। পরে এসে গিয়ে অফিসের কয়েকটি জায়গায় ফাটল দেখেন তিনি।
টেকনাফ পৌর এলাকার বাসিন্দা দিদারুল আলম বলেন, 'গত ৬-৭ বছরে কয়েকটি ছোট ভূমিকম্প হয়েছিল। কিন্তু শনিবারের ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও তার বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে।' টেকনাফের বাসিন্দা আল আমিন বলেন, 'আমার জীবনে এত বড় ভূমিকম্প কখনও দেখিনি। কিন্তু এখানে অনেকে অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ করছে। ভূমিকম্পের ফলে এতে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি বেশি রয়েছে এখানে।' টেকনাফ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা মুকুল কুমার নাথ জানান, 'টেকনাফে বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্পের ঝাঁকুনির খবর পেয়েছেন তারা।
এর আগে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে সিলেটে ভূ-কম্পন অনুভূত হয়। ৪.৩ মাত্রার ওই ভূ-কম্পনে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের মেঘালয়। কয়েকদিনের ব্যবধানে দেশে মৃদু ভূ-কম্পন অনুভূত হলেও, তুরস্ক-সিরিয়ার ভয়াবহ ভূমিকম্পের ধারাবাহিকতায় এই ভূমিকম্পে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে আঘাত হানে রিখটার স্কেলে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প। ভূমিকম্পে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ওই দুই দুদেশের শত শত বহুতল ভবন। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েন বহু মানুষ। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে মৃতের সংখ্যা। সেই সংখ্যা বর্তমানে ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ।
তুরস্ক ও সিরিয়ার পর ভূমিকম্প একে একে আঘাত হানে চীন, তাজিকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ওমান এবং ভারতের সিকিম ও জম্মু-কাশ্মীরে। যদিও এসব দেশে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
গত দুই দশকে পর্যটনের সুবাদে কক্সবাজারের সাগর পাড়ে হুহুকরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে শত শত বহুতল স্থাপনা। বিশেষজ্ঞদের মতে এসব স্থাপনার অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। ৪.১০ মাত্রার ভূ-কম্পনে কিছু না হলেও ভূ-কম্পন
মাত্রা আরো একটু বাড়লে বড় ধরণের ঝুঁকির আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায়না।
ইন্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউট অব কক্সবাজর এর প্রেসিডেন্ট, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড মেম্বার প্রকৌশলী বদিউল আলম এপ্রঙ্গে বলেন, কক্সবাজার শহর এবং সৈকতে ইকোলোজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়ায় (ইসিএ) বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন করে অপরিকল্পিত বহুতল স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। তুরস্কের মত ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে সব বিল্ডিং মাটিতে মিশে যেতে পারে।
এদিকে সৈকতের ইসিএ এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণে উচ্চ আদালতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তার কার্যকারিতা নেই বহুদিন ধরে। কারো ক্ষমতার জোরে আবার কারো অর্থের জোরে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওই পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা কক্সবাজারের কলাতলী, হিমছড়ি, ইনানী, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে বহুতল ভবন নির্মাণ বন্ধ হচ্ছেনা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন