সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন হজ টিমের ডেলিগেটদের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের হজ ফ্লাইটের টিকিট দু’টি বেসরকারি ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে কেনার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তির অতি কাছের সুবিধাবাদী লোকেরা জোর লবিং চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এতথ্য জানা গেছে। কমিশন বাণিজ্যের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার লক্ষ্যেই সরকারি ডেলিগেটদের হজ টিকিট সরাসরি বিমান থেকে ক্রয় না করে বেসরকারি ট্রাভেলস এজেন্সির কাছ থেকে টিকিট ক্রয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হবার পথে। এ নিয়ে খোদ ধর্ম মন্ত্রণালয়ে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে।
সরাসরি বিমান থেকে হজ ডেলিগেটদের টিকিট ক্রয় না করে মৌখিকভাবে নির্বাচিত ওভারসীজ লিংকস লি: সহ দু’টি ট্রাভেলস এজেন্সি থেকে টিকিট ক্রয় করা হলে সরকার প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলেও জানা গেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম এ প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে বলেন, আপনার অভিযোগ ঠিক আছে। তবে কোনো সুবিধাবাদীর অনুরোধে বেসরকারি এজেন্সি থেকে ডেলিগেটদের হজ টিকিট ক্রয় করা হবে না। অতিরিক্ত সচিব বলেন, হজ অফিস ঢাকার মাধ্যমে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের টিকিট বিমান থেকে সরাসরি ক্রয় করা হয়। বিমান থেকে সরাসরি হজ ডেলিগেটদের টিকিট ক্রয় করা হলে আর্থিক ক্ষতির কোনো সুযোগ থাকবে না বলেও তিনি স্বীকার করেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ২০২২ সালের হজে ওভারসীজ লিংক ২৫৪ জন সরকারি ডেলিগেটের বিমানের টিকিট এবং আরেকটি ট্রাভেল এজেন্সি ৪১৫ জন বিভিন্ন হজ টিমের সদস্যদের বিমানের টিকিট ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে বিক্রি করেছে। এতে প্রায় ২ হাজার ৭৫ টাকা করে সরকারের লস হয়েছে।
২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (হজ) আবুল কাশেম মোহাম্মদ শাহীন এক অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করেছেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিকট হতে টিকিট ক্রয় না করে হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত বিভিন্ন টিমের সদস্যদের বিমান টিকিট ওভারসীজ লিংকস লি: ও গোল্ডেন বেঙ্গল ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসের কাছ থেকে ক্রয় করে কমিশন বাবদ অতিরিক্ত ১৬ লাখ ২৬ হাজার ৮শ’ টাকা পরিশোধ করা হয়। ফলে সরকারের আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ট্রাভেলস এজেন্সির নিকট থেকে আপত্তিকৃত অর্থ আদায়ের সুপারিশ করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এছাড়া ২০১৮ সালে ধর্ম মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রীয় খরচে ৩১৪ জন হজযাত্রীর টিকিট বিমান থেকে সরাসরি ক্রয় করেছে। এতে ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৯১ হাজার ৯৭৪ টাকা বিমানকে পরিশোধ করা হয়। হজ প্যাকেজ ২০১৮-এর ১.৮ মোতাবেক এজেন্ট কমিশন বাবদ প্রতিটি টিকিট ক্রয় মূল্যের সাথে ২ হাজার ৭৫ টাকা নির্ধারিত রয়েছে।
যেখানে ৩১৪টি টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো ট্রাভেল এজেন্সি নিয়োগ ছিল না সে ক্ষেত্রে এজেন্সি কমিশন বাবদ ৬ লাখ ৫১ হাজার ৫৫০ টাকা বিমানকে পরিশোধ করা সমীচীন হয়নি। অডিট অফিসার নাদিরা আক্তার ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি উল্লেখিত ৩১৪টি টিকিট ক্রয় বাবদ অতিরিক্ত পরিশোধিত ৬ লাখ ৫১ হাজার ৫৫০ টাকা বিমান থেকে আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা করার সুপারিশ করেছে। তৎকালীন ধর্ম সচিব মো. আনিছুর রহমানের সময়ে এ ঘটনা ঘটেছে। ধর্ম মন্ত্রণারয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবুল কাশেম ভূঁইয়া ইনকিলাবকে জানান, ওভারসীজ লিংক লি: সহ সংশ্লিষ্ট ট্রাভেলস এজেন্সির বিরুদ্ধের অডিট আপত্তির বিষয়গুলো বিধি অনুযায়ী নিষ্পত্তি হয়ে যাচ্ছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিসাব রক্ষণকর্মকর্তা মাসুদ আলম জানান, হজ ডেলিগেটদের বিমান টিকিট ক্রয় নিয়ে যেসব ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে অডিট আপত্তি ছিল তা অনেকটাই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে বলে শুনেছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন