সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইংরেজি নববর্ষ সংখ্যা

দুর্বিষহ বেদনার ২০১৬ এবং নতুন বছরের প্রত্যাশা

| প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গোলাম মাওলা রনি : ২০১৬ সালের বৈশ্বিক পরিস্থিতি ছিল দুর্বিষহ বেদনার। আমাদের দেশের অবস্থাও ভালো ছিল না। গুলশান হামলা, শোলাকিয়া ঈদগা ময়দানের ঘটনা যেমন সারা দুনিয়া তোলপাড় করেছিল তেমনি সারা দেশ তোলপাড় করা ঘটনার সংখ্যাও নেহায়েত কম ছিল না। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের অবরুদ্ধ অবস্থা, শর্তসাপেক্ষ বাক-স্বাধীনতা সরকার কর্তৃক সংজ্ঞায়িত উন্নয়নের গণতন্ত্রের দাপট, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারের সঙ্গে একীভূত ও মিলেমিশে একাকার হওয়ার দুরন্ত প্রতিযোগিতা, জ্ঞানীগুণী মেধাবীদের স্বেচ্ছা নির্বাসন এবং দুর্বৃত্তায়নের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির কারণে বাংলাদেশের শান্তিকামী মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও বেদনার অন্ত ছিল না। অন্যদিকে, সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং সরকারি চাকরি সুবিধাভোগীদের খুশির জোয়ার এবং লম্ফ-জম্ফ ছিল লক্ষ্য করার মতো।
২০১৬ সালের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য আমেরিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার কোথাও নিরবচ্ছিন্ন শান্তি ছিল না। বরং কিছু অশান্তি, হানাহানি এবং মারামারির ঘটনার নিমর্মতা মানব জাতির হাজার বছরের নৃশংসতাকেও হারিয়ে দিয়েছে। সিরিয়া, ইরাক এবং লিবিয়ায় মানবিক বিপর্যয় বিশ্ব বিবেককে সারাটি বছর বেদনাহত করে রেখেছে। ইয়ামেন, প্যালেস্টাইন, চীনের উরুমকী, কাশ্মীর এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সীমাহীন জুলুম-অত্যাচার নিঃসন্দেহে মানব জাতির অগ্রগতির চাকাকে পেছন ঠেলে দিয়েছে।
বিশ্বের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং পালাবদলের খেলাতেও ২০১৬ সালটি অনাগত ভবিষ্যতের অশনিসংকেত হিসেবে কাজ করেছে। মিসরের রাষ্ট্রক্ষমতায় পশ্চিমাদের পছন্দের লোক বসানো, ইউরোপের ঐক্য ভেঙে যাওয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণ, পুতিনের নেতৃত্বে বিশ্ব মোড়লীপনায় রাশিয়ার বিস্ময়কর উত্থান, বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি এবং একই সঙ্গে আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব বিস্তার বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষজনকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার রাজনীতিতে তুরস্ক ও ইরানের ঐতিহাসিক এবং হাজার বছরের ঐতিহ্যময় প্রভাব-প্রতিপত্তি পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় পুরো পশ্চিমা দুনিয়ার রাজনৈতিক শক্তিগুলো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থাপনা এবং অর্থনীতিতেও মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হয়েছিল বিগত বছরে। গ্রিসের দেউলিয়াত্ব, ইউরোপের মুদ্রা ইউরোর মূল্যমানে ধস, বেক্সিমির পর ব্রিটিশ পাউন্ড স্টালির মূল্য পতন, বিশ্বে জ্বালানি তেলের বাজারের ঐতিহাসিক পতন, স্বর্ণের দামের নজরিবিহীন অধঃগতি, পুরো ইউরোপ-আমেরিকার অর্থনৈতিক মন্দা, শেয়ারবাজার, রিয়েল এস্টেট এবং বিনিয়োগ ব্যবসায় একর পর এক ধসের কারণে বিশ্বময় হাজার হাজার কোম্পানিকে দেউলিয়ত্ববরণ করতে হয়েছিল। ফলে দেশে দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক হারে। সরকারগুলোর আয় হ্রাস পেয়েছে এবং জনকল্যাণ ও পেনশন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পৃথিবীর প্রায় সব দেশকেই অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক উৎস থেকে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ ঋণ নিতে হয়েছে।
২০১৬ সালে মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হয়েছে মানুষের চিন্তা-চেতনা, মন-মানসিকতা এবং নৈতিক চরিত্রে। প্রতিটি জনপদের মানুষের ভেতরে ছিল এক ধরনের প্রচ- হতাশা, ক্ষোভ এবং ভয়। দেশি-বিদেশি চক্রান্ত, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, পারিবারিক বন্ধন এবং ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও আস্থার ঐতিহ্যগত সম্পর্কগুলো বিগত বছরে কেমন যেন নড়বড় হয়ে গেছে। মানুষ মানুষকে ভালোবাসার পরিবর্তে ঘৃণা প্রদর্শন, একের দ্বারা অন্যের স্বার্থহানি, চৌর্যবৃত্তি, দখল, লুটপাট ইত্যাদি কুকর্মসমূহ অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় ২০১৬ সালে বেড়ে গিয়েছিল বহুলাংশে। বিশ্বের আবহাওয়া, জলবায়ু ও পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং নতুন করে হুমকির মুখে পড়েছে। বিগত বছরে আধুনিক সভ্যতার যথেচ্ছ শিল্পায়নের কারণে পৃথিবীর আলো-বাতাস, মাটি-পানি এবং বনজঙ্গলের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তা রোধ করার জন্য জাতিসংঘের উদ্যোগ বিগত বছরটিতে অগ্রসর তো হয়নি বরং আশঙ্কায় পিছিয়েছে।
বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক রাজনীতিতে গত এক দশকের টানাপোড়েন ২০১৬ সালে এসে নতুন রূপ নিয়েছে। বিশ্বের একমাত্র সুপার পাওয়ার হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাপট ২০১৫ সালে এসে প্রশ্নবিদ্ধ হতে শুরু করে। ২০১৬ সালে এসে প্রমাণিত হয় যে, বর্তমান বিশ্বে কোনো একক সুপার পাওয়ার নেই এবং বাস্তবে সেটা সম্ভবও নয়। মধ্যপ্রাচ্য আফগানিস্তান, কোরীয় উপদ্বীপ, জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপ এবং ন্যাটো বাহিনীতে মার্কিন সামরিক কর্তৃত্বের বিপর্যয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে লজ্জাস্কর পরাজয় এবং নাজেহালের ঘটনা বিশ্ব রাজনীতির হিসাব-নিকাশ সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া, চীন, ইরান, উত্তর কোরিয়া এবং তুরস্কের শক্তিশালী অবস্থান এবং পারস্পরিক মিত্রতা পৃথিবীর ভূ-রাজনীতির হিসাব-নিকাশে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সামাজিক অবক্ষয়, অশ্লীলতা, নীতিবহির্ভূত কর্মকা-, অশিক্ষা-কুশিক্ষা ইত্যাদির দাপটে বিশ্বের তাবৎ রাষ্ট্রসমূহে এক নতুন অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ধর্ম-বর্ণ সম্প্রদায়ের নাম করে নিত্য নতুন উগ্রবাদ পয়দা হয়েছে। ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বহু সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন। সামাজিক মাধ্যমের অপব্যবহার এবং সাইবার অপরাধের কারণে পুরোটা বছর লক্ষ কোটি ভুক্তভোগীকে নানারকম দুর্ভোগ-দুর্দশা পোহাতে হয়েছে। এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়, ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা-খরা ইত্যাদি। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির কারণে জনগণের জীবন যাত্রায় নাভিশ্বাস শুরু হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ, মাদক ব্যবসার অস্বাভাবিক বিস্তার, আন্তর্জাতিক মানব পাচার ইত্যাদি কারণে ধরিত্রী ক্রমেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
উপরোক্ত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জনগণের দুর্বিষহ বেদনার পরিমাণ তুলনামূলক কম ছিল। জনগণের সরকার না পাওয়ার বেদনা এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার ঘটনা বাদ দিলে উল্লেখ করার মতো জাতীয় ঘটনা খুব বেশি ছিল না। তবে সামাজিক ন্যায়বিচারের অভাব, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, গুম, ক্রসফায়ার, সুশাসনের ক্রমাবনতি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং স্বভাব বদলে দেওয়া, সরকারি অর্থের লোপাট, শেয়ার মার্কেট এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে হরিলুট, সরকারি নিয়োগ-বদলিতে অনিয়ম, দুর্নীতির বিস্তার, সরকারি কাজকর্মে দলীয় পা-াদের আধিপত্য ইত্যাদির সূচকে বাংলাদেশ তার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
পররাষ্ট্রনীতিতে অতিরিক্ত ভারত তোষণনীতি এবং বাড়াবাড়ি  পর্যায়ের ভারতপ্রীতির কারণে দেশের স্বাধীন ও স্বার্বভৌম মনমানসিকতাসম্পন্ন জনগোষ্ঠী ভীষণভাবে অপমানিত রোধ করেছে। জঙ্গিবাদ দমনের নামে মসজিদ এবং মাদ্রাসাগুলোতে সরকারি নজরদারি এবং ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদেরকে জঙ্গি সন্দেহে পাইকারি হারে তল্লাশি এবং গ্রেফতারের ঘটনায় রাষ্ট্র এবং জনগণের স্বাভাবিক সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। মানুষের অভিমানী মন নানা কারণে সরকার থেকে বিমুখ হয়ে গা বাঁচিয়ে চলার নীতি গ্রহণ করেছে। বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার কারণে সরকারের মধ্যে জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার বালাই ছিল না। সরকারের কোনো স্তরের নেতা-কর্মী বা সরকারি কর্মকর্তাদের
বিগত বছরে জনগণকে সম্মান-সমীহ অথবা ভয় পাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়নি। উল্টো জনগণই তাদের ভয় পেয়েছে এবং তাদের থেকে নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে রেখেছে।  
সরকারি সেবা-পরিসেবার মান না বাড়ালেও সর্বস্তরে সরকারি ট্যাক্স বেড়েছে বহুগুণ। আয়কর, ভূমিকর পৌরকর, ভ্যাট, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস, তেল, পানি বিল ইত্যাদির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দ্রব্যমূল্য। সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বিগুণ বেতন বৃদ্ধি সার্বিক বাজার পরিস্থিতি এবং বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের ওপর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করেছে। দেশের প্রধানতম রপ্তানি খাত গার্মেন্ট সেক্টর পড়েছে নিদারুণ বিপর্যয়ের মুখে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার সূত্র ধরে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে পশ্চিমা ক্রেতারা এদেশীয় গার্মেন্ট মালিকদের নানা জটিল শর্তের জাল ফেলে দিন দিন গার্মেন্টের মূল্য কমিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে সরকার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি এবং অন্যান্য খাতের হার বৃদ্ধি করে পুরো সেক্টরটিকে নতুন করে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে। ফলে সারাটি বছর সরকারের মুখে হাসি থাকলেও জনগণ সেই হাসির সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি।
২০১৬ সালের দুর্বিষহ বেদনার খতিয়ান বর্ণনা করতে গেলে মহাভারত রচিত হয়ে যাবে। আমরা বরং পুরনো সেই স্মৃতিকথার প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে ২০১৭ সালের প্রত্যাশা নিয়ে কিছু কথা বলি। নতুন বছরে আমরা একটি যুদ্ধমুক্ত বিশ্ব যেমন কামনা করি, তেমনি গণতান্ত্রিক দেশসমূহের বহুজাতিক রক্তচোষা কোম্পানিগুলোর দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঠকিয়ে অর্থ কামাইয়ের লোভী মন-মানসিকতাকে ফিরে পেতে চাই না। বিশ্বব্যাপী শিক্ষা, বাণিজ্য এবং জনগণের সমঅধিকারের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ কার্যকর ভূমিকা পালন করুকÑ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যাশা একটু বেশি। আমরা সবার আগে চাই গণতন্ত্র। আমাদের ভোটের অধিকার এবং নিজেদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের চিরায়ত প্রথার উৎসব থেকে আমরা কোনো মতেই বঞ্চিত হতে চাই না। আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়া দুর্নীতি, অনিয়ম ও অবিচারের রাহুগ্রাস থেকে  আমরা মুক্তি চাই। জনগণের বাক-স্বাধীনতা এবং চিন্তার স্বাধীনতার প্রশ্নে আমরা কোনো আপ করতে চাই না। সামাজিক ন্যায়বিচার আমাদের প্রাণের দাবি। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, জুলুম এবং অত্যাচারের বীভৎসতা থেকে দেশবাসী মুক্তি চায়। মানুষের অধিকার নিয়ে রাষ্ট্রের সংবিধানে যে সুন্দর সুন্দর কথামালা রয়েছে আমরা সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগ নতুন বছরে আশা করছি।
আমাদের জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্য সঠিক এবং নির্ভুলভাবে রক্ষিত হোক এমন প্রত্যাশা আমাদের সকলের। মানুষের অপছন্দের বিষয়সমূহ যেন জোর করে পছন্দের তালিকায় ঢুকিয়ে দেওয়া না হয় অথবা জনপ্রিয় এবং ভালো লাগার বিষয়সমূহে অহেতুক কলঙ্কের কালিমা লেপন করে জাতীয় চরিত্র এবং রুচি-অভিরুচির বিস্তৃত অপভ্রংশ চালু করা না হয় সেদিকেও যেন সকল পক্ষ নজর দেয়Ñ এমন আশা-ভরসা নতুন বছরে আমরা করতেই পারি। আমাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা, সাহিত্য, সংস্কৃতির হাজার বছরের ঐতিহ্য এবং বাঙালির চিরায়ত জীবনগাথা নতুন বছরে অটুট থাকুক এমন প্রত্যাশা রেখে আজকের প্রসঙ্গের ইতি টানছি।  
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন