সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষাঙ্গন

বছর শেষে খুশির জোয়ার

| প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জাকারিয়া হাসান : গত ২৯ ডিসেম্বর সারাদেশে একযোগে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা (পিএসসি), অষ্টম  শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল। পাশের হার ও জিপিএ বিবেচনায় গতবারের থেকে ভালফল এটি। এবারের প্রাথমিক সমাপনীতে ৩২ লাখ ৩০ হাজার ২৮৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ২৫০ জন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) পাসের হার ৯৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৮৯৮ জন এবং ইবতেদায়িতে পাসের হার ৯৫.৮৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৯৪৮ জন।
অন্যদিকে এবার জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় মোট ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫৯ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ২১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৭৫ জন। এরমধ্যে জেএসসিতে অংশ নেয় ১৯ লাখ ৯৩ হাজার ৩১৬ জন, পাস করেছে ১৮ লাখ ৯১ হাজার ৪৯৬ জন। জেডিসিতে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৭৯ জন। গতবারের চেয়ে জেএসসিতে এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে। জেএসসিতে পাসের হার বেড়েছে দশমিক ৫৮ শতাংশ। জেডিসিতেও বেড়েছে ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
এবার জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৫৯। গতবার ছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০২ জন। এবার জেডিসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৫২৯ জন। গতবার এ সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৭৬১ জন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এ সাফল্যের পর সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুপুরের পর থেকেই আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা। তাদের এই বাঁধভাঙা আনন্দ দেখে মনে হয় এমন রেজাল্টের জন্যই যেন তারা প্রস্তুত ছিল। তারা বলেন এমন ফলাফল হলেই কেবল পরিশ্রম স্বার্থক হয়।
গত বছরের তুলনায় গড় পাসের হার বেড়েছে দশমিক ৭৩ শতাংশ। ২০১৫ সালে গড় পাসের হার ছিল ৯২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এবার পাসের হার জেএসসিতে ৯২ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও জেডিসিতে ৯৪ দশমিক ০২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৮৮ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৩ জন। এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৫১ হাজার ৩২৫ জন।
অন্যদিকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে ছিল। গড় পাসের হারের দিক থেকেও মেয়েরা এগিয়ে। ছাত্রদের পাসের হার ৯৮.৪৪ শতাংশ। আর ছাত্রীদের পাসের হার ৯৮.৫৬ শতাংশ। এই পরীক্ষায় পাসের হার বিবেচনায় বরিশাল বিভাগ শীর্ষে রয়েছে। আর ৬৪ জেলার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মুন্সীগঞ্জ।
অন্যদিকে ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৮১৮ জন শিক্ষার্থী। ইবতেদায়িতেও পাসের হারে ছাত্রীরা এগিয়ে। ছাত্রদের পাসের হার ৯৫.৬৩ শতাংশ। আর ছাত্রীদের পাসের হার ৯৬.০৮ শতাংশ। এই পরীক্ষায় ফলাফলের দিক দিয়ে রাজশাহী বিভাগ শীর্ষে। আর জেলার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে লালমনিরহাট।
নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, এবার সরকারের বহুমুখী প্রচেষ্টার ফলে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো সম্ভব হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আর কখনোই প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগ দেয়া হবে না বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।
দুপুর ১২টার পরপরই পিএসসি ও জেএসসিসহ সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হতে থাকলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে আনন্দ উল্লাস দেখা যায়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মিষ্টি বিতরণ করতেও দেখা গেছে। রাজধানীর আজিপুরের ভিকারুন্নেসা নূন স্কুল, আজিমপুর গার্লস স্কুল, উদায়ন স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখা যায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা রাস্তায় নেমে আনন্দ উল্লাস করছেন। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভি চিহ্ন দেখিয়ে আনন্দ উল্লাস ও সেলফি তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে।
মিরপুর মনিপুর স্কুলের শিক্ষার্থী জুই বলেন,তিনি এবারের জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার মা রোকসানা পরভীন  বলেন, সারা বছর মেয়েকে নিয়ে কষ্ট করেছেন। এ কোচিং থেকে ও কোচিং এ দৌড়ে বেরিয়েছেন। আর এখন কষ্টের ফল হাতে পেয়ে আনন্দটাও একটু বেশি।
শিক্ষার্থী সায়মা খাতুন বলেন, ‘রেজাল্টের আগে খুবই টেনশনে ছিলাম। অবশেষে জিপিএ-৫ পেয়েছি। এ রেজাল্টে আমার আব্বু, আম্মু বড় ভাইয়াসহ সবাই অনেক খুশি হয়েছে।’
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, শিশুদের পরীক্ষায় সেরা ফলাফল অর্জন আমাদের অভিজ্ঞতা ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টার ফসল। শিশুবান্ধব পড়ার পরিবেশ, দক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা ছিল বলেই আমরা প্রত্যাশা মতো ভালো করতে পারছি।
দেশসেরা রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড
এবারের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় সারাদেশের মধ্যে সেরা ফলাফল করেছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড।
চলতি বছরের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের দুই লাখ ২৬ হাজার ৮৯২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪০ হাজার ৪৭১ জন। পাস করেছে দুই লাখ ২১ হাজার ৬১৭ জন শিক্ষার্থী।
৯৩ হাজার প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাস
প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী
প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় এবার ৯৩ হাজার ৬৭৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। কেউ পাস করতে পারিনি ৮১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় শতভাগ পাস করেছে ৮৫ হাজার ১১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কেউ পাস করতে পারেনি এমন প্রতিষ্ঠান ৫৫টি। অন্যদিকে ইবতেদায়িতে শতভাগ পাস করেছে ৮ হাজার ৫৬৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কেউ পাস করতে পারিনি ২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই পরীক্ষায় গত বছর মোট ৯১ হাজার ২২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবাই পাস করে। আর ১৪৮টি প্রতিষ্ঠানের সবাই ফেল করে। এই হিসাবে এবার শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ২ হাজার ৪৫২টি। আর শতভাগ ফেল প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে ৬৭টি।
ভাল ফলের কারণ
ইংরেজি ও গণিতে পাসের হার বাড়ায় সার্বিক পাসের হার বেড়েছে। গতবার ৮ সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে ইংরেজিতে পাস করে ৯২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এবার এ হার বেড়ে হয়েছে ৯৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এবার গণিতে পাস করেছে ৯৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। গতবার গণিতে পাস করে ৯৬ দশমিক ১৮ শতাংশ।
পিইসিতে এবার ইংরেজিতে ৯৯ দশমিক ২৭ শতাংশ ও গণিতে ৯৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ পাস করে। ইবতেদায়ি সমাপনীতে ইংরেজিতে ৯৯ দশমিক ২৩ এবং গণিতে ৯৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ পাস করে।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, গ্রামের শিক্ষার্থীরা গণিত ও ইংরেজিতে দুর্বল হওয়ায় গ্রামের পাসের হার কম। অন্যদিকে শহরের শিক্ষার্থীদের চিত্র উল্টো। ইংরেজি ও গণিতে বাড়তি নজর দেয়ায় এ দুটি বিষয়ে পাসের হার বেড়েছে। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষার গুণগত মান আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী যে মান দরকার তা থেকে আমরা অনেক পেছনে আছি। আমাদের ছেলে-মেয়েদের মান উন্নত করাই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের দুর্বল বিষয়গুলোর প্রতি আমরা বাড়তি যতœ দিয়েছি। শিক্ষার্থীরা সাধারণত ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানে দুর্বল থাকে। এ বিষয়গুলোর জন্য অতিরিক্ত ক্লাস নেয়া হয়েছে। এ কারণে ভাল ফল করেছে। এছাড়া আমরা মনিটররিং কর্মকা- জোরদার করেছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন