বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

ইরাকি শরণার্থীর সাথে মেসিডোনিয়ান সীমান্তরক্ষীর প্রেম

| প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : বৃষ্টিভেজা যে দিনটিতে ববি ডোডেভস্কি প্রথম তার ভবিষ্যত স্ত্রীর দেখা পেয়েছিলেন, সেদিন তার কাজে যাওয়ার কথা ছিল না। ববি ডোডেভস্কি মেসিডোনিয়ার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একজন সদস্য। অন্য এক সহকর্মীর পরিবর্তে সেদিন তার ডিউটি পড়েছিল সীমান্তে।
সেদিন যে হাজার হাজার শরণার্থী মেসিডোনিয়ার সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করছিল, তাদের মাঝে ছিলেন ইরাক থেকে পালিয়ে আসা এক শরণার্থী নোরা আরকাভাজি। বিশ বছর বয়সী নোরা আরকাভাজি ইরাকের দিয়ালা প্রদেশ ছাড়েন ২০১৬ সালের শুরুতে। তখন সেখানে প্রচ- সহিংসতা চলছে। পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে নোরা ইরাক থেকে তুরস্ক, সেখান থেকে নৌকায় গ্রীসের লেসবন দ্বীপ হয়ে মেসিডোনিয়ার সীমান্তে পৌঁছান। বহু শরণার্থী তখন এই একই পথ ধরে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করছে। যখন তারা সীমান্তে অপেক্ষা করছে তাদের মেসিডোনিয়ার ওপর দিয়ে সার্বিয়ায় যেতে দেয়া হবে কিনা, তখন নোরার দেখা হলো মিস্টার ডোডেভস্কির সাথে। ডোডেভস্কির মনে হলো, নোরার চোখে এমন কিছু আছে, যেখানে লেখা রয়েছে তার নিয়তি।
ইউরোপে ঢুকতে চাওয়া শরণার্থীদের মুখের ওপর তখন একের পর এক দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। নোরার স্বপ্ন ছিল, তারা জার্মানিতে যাবে, সেখানে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে মিলে বসবাস করবে। নোরা ছয়টি ভাষায় পারদর্শী। যখন মেসিডোনিয়ার সীমান্তে তারা আটকে আছে, তখন নোরাকে পাঠানো হলো ডোডেভস্কির কাছে। কারণ নোরা ভালো ইংরেজি বলতে পারে।
দু’জনের মধ্যে প্রথম দেখাতেই যে প্রেমের মতো কিছু ঘটে গেছে, সেটা টের পেয়ে গেলেন ডোডেভস্কির এক মহিলা সহকর্মী। তিনি ডোডেভস্কিকে ঠাট্টা করে বলছিলেন, ‘তুমি তো মনে হয় কাজে মন বসাতে পারছ না। তোমার মগজটা মনে হয় কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে’।
ডোডেভস্কির এখন স্বীকার করতে লজ্জা নেই, প্রথম দেখাতেই তিনি আসলে নোরার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। মেসিডোনিয়ার এক ট্রানজিট ক্যাম্পে নোরা রেড ক্রসের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ শুরু করলেন। সেখানে কাজের ফাঁকে ফাঁকে ডোডেভস্কির সাথে প্রণয়ের সম্পর্ক গভীরতর হতে থাকল। ডোডেভস্কি নোরাকে নিয়ে গেলেন কাছের শহরের বাজারে। নিয়ে গেলেন নিজের মায়ের কাছে। অন্য দিকে ডোডেভস্কি যেভাবে শরণার্থী শিশুদের সাথে খেলায় মেতে উঠতেন, তা মুগ্ধতা ছড়াতো নোরার চোখে। তারপর এপ্রিলে এক রেস্টুরেন্টে খেতে খেতে ডোডেভস্কি নোরাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। নোরা বারবার বলছিলেন, তুমি কি আমার সাথে রসিকতা করছ?
ডোডেভস্কি ১০ বার করে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে জানালেন, এটা মোটেই রসিকতা নয়। উত্তর মেসিডোনিয়ার শহর কুমানোভোতে দুজনের বিয়ে হলো। ডোডেভস্কি অর্থোডক্স খ্রিস্টান চার্চের অনুসারী। অন্য দিকে নোরা হচ্ছেন কুর্দি মুসলিম। কিন্তু ধর্ম কোনো বাধা হলো না প্রেম আর বিয়েতে। বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা ছিল ২০ জন। নোরার পরিবারের অন্য সদস্যরা শেষ পর্যন্ত জার্মানিতে ঢুকতে পেরেছিলেন। কিন্তু প্রেমের ফাঁদে আটকে পড়ে নোরা রয়ে গেলেন মেসিডোনিয়াতেই। সেখানে ডোডেভস্কির আগের তিন সন্তানসহ তাদের পাঁচজনের সুখের সংসার। তবে শিগগিরই তাদের সাথে যোগ দিতে আসছেন পরিবারের ষষ্ঠ সদস্য। ‘আমি এখন সন্তানসম্ভবা, চার মাস চলছে’, হাসতে হাসতে জানালেন নোরা। সূত্র : বিবিসি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন