কৃষকের সঙ্গে কাজ করা, তাদের কাজ সম্পর্কে ধারণা এবং স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন অফিসের কার্যাবলী শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখাতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ আয়োজন করে সম্প্রসারণ মাঠ সফর। ৬ দিনব্যাপী এ মাঠ সফরে আমরা পশুপালন অনুষদের লেভেল-৪, সেমিস্টার-২ এর শিক্ষার্থীরা গিয়েছিলাম বগুড়া সদর উপজেলায়। আমাদের সঙ্গে ছিলেন সদা হাস্যেজ্জ্বল একজন মানুষ প্রফেসর ড. আসাদুজ্জামান সরকার স্যার, যিনি এ সম্প্র্রসারণ মাঠ সফরের আনন্দ আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেন।
সেই দিনটি ছিল রবিবার। আমাদের গ্রুপ শিক্ষকের পূর্ব নির্দেশনা মোতাবেক আমরা ভোর ৬ টায় উপস্থিত হই কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সামনে। সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে রওনা হলাম ৬ টা ৩০ মিনিটে। চারদিকে অন্ধকার আর শীতের আমেজ শিক্ষার্থীদের যেন বন্দী করে রেখেছে। আগের মতো বাসে উঠার পরেই নাচ-গানের প্রকোপটা একটু কমই দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা মেতে উঠে নাচ-গান আর হই-হুল্লুড়ে। ৫ ঘণ্টার জার্নি শেষে আমরা পৌঁছলাম বগুড়া সদর উপজেলায়। আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গায় সবাই নিজেদের জিনিসপত্র রেখে একটু ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা লাইভস্টক অফিসার ও উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন এ উপজেলার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা দেন। সারাদিন ক্লাস করার পর সন্ধ্যা ৭টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। সারাদিনের জার্নি, কøাস শেষে শরীর যখন ক্লান্তিতে আচ্ছন্ন ঠিক তখনই আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক নিজেই গান গাইতে শুরু করলেন। তখন ক্লান্তি গুলা যেন নিমিষেই উধাও। বন্ধু-বান্ধবীরা মিলে আমরাও শুরু করে দিলাম নাচ-গান।
এর মধ্যে মাঠ সফরের অংশ হিসেবে আমরা পরিদর্শন করি বগুড়া আদর্শ দুগ্ধ খামার, ডেইরি খামার, পল্লী উন্নয়ন একাডেমী এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন মহাস্তান গড়।
এ সফরের মাধ্যমে একটি উপজেলার সব প্রশাসনিক কাঠামো সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন লিখতে হয় থানা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা পশুসম্পদ অফিসারের কার্যালয়, উপজেলা ফিসারিজ অফিসারের কার্যালয়, স্থানীয় থানা, এনজিও, হাসপাতাল ও মহিলা বিষয়ক কার্যালয়সহ অন্যান্য জাতিগঠনমূলক প্রতিষ্ঠানের। এ ধরনের শিক্ষা সফর শুধুমাত্র টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিগুলোই করে থাকে।
শুধু একাডেমিক কর্মকা-ের মধ্যেই সীমিত ছিল না এ সফর। এ সফরেও অনেক বেশি আনন্দ। প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়া চলে। এ মহড়ার ফলে শেষ দিনে উপজেলা প্রাঙ্গণে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে শিক্ষার্থীরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় আপু, বগুড়া সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার শাহানা পারভীন স্যার আমাদের জন্য একটি বারবি কিউ পার্টির আয়োজন করেন।
সব কিছু ভালই চলছিল । কিন্তু পার্টির পরেই সবার মনে এক বিষণœœতা ভর করে বসল, সময় শেষ, ফিরতে হবে ক্যাম্পাসে। অভিব্যক্তি বর্ণনা করার সময় অরুন, রাশেদ, সাকিল, সোনিয়া, রিয়া, দিনা, জামি প্রায় কান্না জড়িত কণ্ঠে বলে উঠল, জীবনের শ্রেষ্ঠ ৬টি দিন ছিল এই কৃষি সম্প্রসারণ মাঠ সফর। আজীবন স্মৃতির মণি কোঠায় বাধা থাকবে এই দিনগুলি।
ষ মো.আব্দুল ওয়াহাব
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন