সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষাঙ্গন

অতিথি পাখির কলকাকলি ও বর্ণিল পাখি মেলায় উৎসবমুখর জাবি

| প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জান্নাতুল ফেরদৌস ও মাহবুব আলম : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত দেশের একমাত্র আবসিক ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরেও অতিথি পাখি এসেছে। অতিথি পাখির কিচির মিচির শব্দে ও বিকালে চক্রাকারে ঘুরে মুখরিত করে তোলছে ক্যাম্পাসকে। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠছে ক্যাম্পাস ও আশেপাশের এলাকা। ক্যাম্পাসের জলাশয়গুলোতে পাখির বিচরণ পাখীপ্রেমীদের মুগ্ধ করে তুলছে। পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গে ক্যাম্পাসবাসী এবং আশেপাশের এলাকার জনগনে।
পাখিরা প্রকৃতির অলংকার। গাছে গাছে পাখির ওড়োউড়ি দেখতে, কিচিরমিচির শুনতে কার না ভাল লাগে? কিন্তু এসব পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থলের পর্যাপ্ত অভাব হয়ে দাড়িয়েছে। বর্তমানে বিলুপ্তির পথে অনেক পাখি। তাইতো এসব পাখিদের রক্ষায় সবার মাঝে সচেতনতা তৈরী করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘পাখি মেলা-২০১৭’। সকালের কনকনে শীত আর কুয়াশাচ্ছন্ন আবহওয়াকে অতিক্রম করে দর্শনার্থীর ডল নেমেছে ক্যাম্পাস জুড়ে। বর্ণিল এই পাখি মেলায় উৎসবমুখর ছিল পুরো ক্যাম্পাস।
প্রতিবারের মত ‘পাখ-পাখালি দেশের রতœ, আসুন সবাই করি যতœ’ এ স্লোগানে দিনব্যাপী বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ১৬তম এ মেলা। শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে থেকে মেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবুল খায়ের। প্রধান অতিথির ভাষণে পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় সবাইকে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, বন্যপ্রাণি, পশু-পাখি আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতিকে রক্ষা করে। পরিবেশের বান্ধব পশু-পাখিকে ভালোবাসতে হবে। পাশাপাশি জীববৈচিত্র ও পাক-পাখালি সম্পর্কে আমাদের যেমন সচেতন থাকতে হবে ঠিক শিশু-কিশোরদের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধি করতে হবে। এ সময় তিনি প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা বাজেট ঘোষণা করবেন বলে জানান। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট পাখিবিশারদ ড. ইনাম আল হক, আইসিইউএন এর কর্মকর্তা ড. হাসিব, ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এটিএম আতিকুর রহমান প্রমুখ। দিনব্যাপী এ পাখিমেলার আয়োজনের মধ্যে ছিল- আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, অডিও-ভিডিও’র মাধ্যমে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান।
এছাড়াও মেলা থেকে, নতুন প্রজাতির পাখি সনাক্ত করার কৃতিত্বস্বরূপ তিনজন পাখি প্রেমীকে বিগবার্ড অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তরা হলেন- মিজানুর রহমান মিঠু, সালাহ উদ্দিন জাহিদ ও নাজমুল হুসাইন নিশাদ।
এবারের মেলায় পাখিবিষয়ক ৮টি সংগঠন তাদের স্টল সাজান। এগুলো হল- বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, কমিউনিটি বেজড ভালচার ফিডিং স্টেশন, জবির নেচার স্টেশন এন্ড কনজারভেশন ক্লাব, জাবির বাটারফ্লাই পার্ক এন্ড রিসার্চ সেন্টার, ঢাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের নেচার কনজারভেশন ক্লাব, ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার এবং জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি।  
প্রসঙ্গত, পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে এ পাখিমেলার আয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার।
শীতের ঘনঘটা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই লাল পদ্মশোভিত ক্যাম্পাসের জলাশয়গুলোতে অতিথি পাখির বিচরণ জলাশগুলোকে দিয়েছে নুতন সৌন্দর্য। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পাখির সংখ্যাও বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি জলাশয়ে পাখির সংখ্যা অনেক।
আত্মরক্ষার অব্যাহত প্রচেষ্টায় শীতের তীব্রতা যাতে তাদের আঁচ করতে না পারে সেজন্য হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে প্রতিবছর উত্তরের শীত প্রধান দেশ রাশিয়ার সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, চীনের জিনজিয়াং ও ভারত মহাসাগর থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখি দক্ষিণ এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আসে। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাস অন্যতম। এখানে প্রতিবছর অক্টোবর-নভেম্বর মাসের দিকে অতিথি পাখি আসে। দিন দিন পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জলাশয়গুলোতে এ বছর হরেক প্রজাতির পাখি লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে সরালি, ছোট জিড়িয়া, বামুনিয়া হাঁস ও বক জাতীয় পাখি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ক্যাম্পাসে প্রতিবছর পচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনি, ছোট জিড়িয়া, লালমুড়ি, মুরহেন, খঞ্জনা, নর্দান পিনটেইল, জলপিপি, নাকতা, চিতাটুপি, ছোট লাল গুড়গুটি, কোম্বাডাকসহ প্রায় দেড়শতাধিক প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে পাখির প্রজাতির সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে জলাশয়গুলোতে কয়ক হাজার সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে।
ক্যাম্পাসে ছোট বড় প্রায় ২২টি জলাশয়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ও পিছনের জলাশয়, প্রীতিলতা ও জাহানারা ইমাম হল সংলগ্ন, ভোটানিক্যাল গার্ডেনের এবং আলবেরনী হল সংলগ্ন জলাশয়ে পাখির বিচরণ বেশি। প্রতিদিন সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য পাখিপ্রেমীরা পাখি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন ক্যাম্পাসে। দর্শনার্থীরা পাখিদের যাতে কোন রকম বিরক্ত করতে না পারে সেজন্য এসব লেকগুলোকে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষনা করেছে।
প্রাকৃতিক নৈসর্গিক ক্যাম্পাসে অতিথি পাখিদের ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণ, পানির উপর উড়াউড়ি, সারাদিন খুঁনসুটি, জলকেলি, পড়ন্ত বিকালে ক্যাম্পাসের মুক্ত আকাশে শতাধিক পাখির চক্রাকার বিচরণ ক্যাম্পাসবাসীকে মুগ্ধ করে।
জলাশয়ের পাড়ে অনেক সরালি ঝাঁক বেঁধে উড়ছে সাই সাই করে। আবার পরক্ষণেই ঝপাৎ করে বসে যাচ্ছে জলাধারে। নিজেদের খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত কেউবা আবার আপন মনে সাঁতার কাটছে জলাশয়ের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। পরক্ষণেই উড়াল দিচ্ছে শূন্যে। পানকৌড়ি আর দুগ্ধধবল বক জলাশয়ের লাল শাপলা পাতার গা বেয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে সারদিন এখান থেকে ওখানে। জলাশয় তীরবর্তী গাছগুলোকে দুগ্ধধবল বক ঢেকে রেখেছে নিজেদের ডানার নীচে।
প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের উদ্যোগে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে পাখি মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক জরিপে জানা যায়, এই ক্যম্পাসে ১৯৯২, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২৫ হাজার অতিথি পাখির আগমন ঘটেছিল। তবে এ পর্যন্ত ওই রেকর্ড ভাঙ্গতে পারেনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মো: রাজিব শেখ ৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ৯:৪৬ এএম says : 0
পাখি অমাদের সবার প্রিয়। পাখি রাক্ষাতে আমাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। পাখি অমাদের পরিবেশ রক্ষাতে অসাধারন ভূমিকা পালন করে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন