স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল রোববার গুলিস্তান ও আশপাশ এলাকার সড়ক ও ফুটপাথ অবৈধ দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান শেষ করে ফিরে যাওয়ার সময় দৈনিক বাংলা এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ হকাররা। এ সময় পুনর্বাসন না করে হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে আজ সোমবার নগর ভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স ইউনিয়নের নেতারা।
গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খান মোহাম্মদ নাজমুস শোয়েব, মামুন সরদার, আবু সায়ীদ ও ডিএসসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা দেবাশীষ নাগের নেতৃত্বে এই অভিযান শুরু হয়। তারা বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল, দিলকুশা ও পল্টন এলাকায় অভিযান চালান।
মতিঝিল থেকে ফুটপাথের দোকান উচ্ছেদ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে পল্টনের দিকে যায়। বেলা ২টার দিকে পল্টন মোড় এলাকায় হকাররা সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে। এই হামলায় সিটি কর্পোরেশনের দু’টি গাড়ির কাচ ভেঙে গেলেও কেউ আহত হননি। পুলিশ কাউকে আটকও করেনি।
খান মোহাম্মদ নাজমুস শোয়েব বলেন, সিটি কপোরেশন থেকে বলা হয়েছিল ফুটপাথে হকাররা যেন কোনো দোকান নিয়ে না বসে। বসলে উচ্ছেদ করা হবে। কর্পোরেশনের ঘোষণা অনুযায়ী এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গুলিস্তান এলাকায় আমাদের অভিযান পরিচালনা করার কথা ছিল। ওই এলাকার ফুটপাথে কোনো দোকান না বসায় মতিঝিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।
দেবাশীষ নাগ বলেন, মতিঝিলে দৈনিক বাংলা মোড়, বায়তুল মোকাররম এলাকা, দিলকুশা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে, সোনালী ব্যাংকের সামনে ও এর আশপাশের ফুটপাথে দোকান উচ্ছেদ করা হয়।
হকার উচ্ছেদের সময় অনেক পথচারীকে এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে প্রশসংসা করতে দেখা গেছে। তারা এই উচ্ছেদকে উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলায় সীমাবদ্ধ না রেখে এটা স্থায়ী করার দাবি জানান। এসময় পূবালী ব্যাংক সংলগ্ন বটতলায় এক পথচারী বলেন, ব্যবসা করার বিরুদ্ধে কারোরই অবস্থান নেই বলে আমি বিশ্বাস করি। কিন্তু সেটা ফুটপাথ দখল করে কেন হবে? সিটি কর্পোরেশনের এ কাজের জন্য সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।
ব্যবসায়ী আবুল হাসনাত চৌধুরী বলেন, ফুটপাথে দোকান থাকলে ঠিকমতো হাঁটা যায় না। হাঁটতে হলে সড়ক ব্যবহার করতে হয়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। ফুটপাথে দোকান না থাকাই ভালো।
এসময় ফুটপাথের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সলিম উল্লাহ অভিযোগ করেন, দিনের বেলায় তার দোকান খোলা ছিল না। তারপরও তা ভেঙে দেয়া হয়েছে। আমরা তো মেইন রোডে বসিনি। পাশের গলিতে বসেছিলাম। তারপরও বুলডোজার দিয়া আমাগো মালামাল নষ্ট কইরা দিছে। দোকান সরিয়ে নিতে পাঁচ মিনিট সময় চাইলেও সিটি কর্পোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট তা দেননি বলে অভিযোগ করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সাহেব আলী।
মুহূর্তের মইধ্যে সব ভাইঙ্গা দিলো। আমাগোরে বলছিল সন্ধ্যার পর দোকান খুলতে। আমরাতো মেয়রের কথা অমান্য করি নাই। তাইলে আমাগো দোকান ভাঙল ক্যান?
গত ৮ জানুয়ারি নগর ভবনে এক বৈঠক শেষে মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষণা দেন, গতকাল রোববার থেকে সাপ্তাহিক কোনো কর্মদিবসে আর গুলিস্তান ও আশপাশ এলাকায় দিনের বেলায় ফুটপাথে হকার বসতে দেয়া হবে না। হকাররা দোকান নিয়ে বসতে পারবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর। তবে ছুটির দিনে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
অভিযান শুরুর আগে সকালে গুলিস্তান এলাকার ফুটপাথের দোকান বন্ধ থাকলেও বায়তুল মোকাররম ও জিপিওর সামনের সড়কে ফুটপাথের দোকান খোলা দেখা যায়।
নিষেধাজ্ঞার পরও কেন দোকান খোলা জানতে চাইলে মিজানুর রহমান নামের এক দোকানি বলেন, আমরা তিনবেলা খাইতে বসছি। এখন আমাগোরে যদি বলে একবেলা খাইতে হয়, তাহলে ক্যামনে হবে? এইভাবে তো ব্যবসা করা সম্ভব না।
গতকাল বিকালে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা চলে গেলে সেখানে বিক্ষোভ শুরু করেন হকাররা। এসময় বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স ইউনিয়নের নেতারা একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশও করেন।
ওই সমাবেশ থেকে পুনর্বাসন না করে হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে আগামীকাল সোমবার (আজ) নগর ভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স ইউনিয়নের উপদেষ্টা মোহাম্মদ হযরত আলী।
এসময় হকার নেতারা অভিযোগ করে বলেন, হকাররা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিল। সন্ধ্যার পর দোকান করার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের লোকজন কোনো কারণ ছাড়াই তাদের দোকানপাট ভাঙচুর করে। তারা মালামাল লুট করেছে। দোকানদারদের মারধর করেছে। ম্যাজিস্ট্রেটের পা ধরলেও তিনি শোনেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, উচ্ছেদের সময় কিছু লোক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। যারা এ কাজ করেছে তাদের ঠিক হকার বলা যাবে না। তারা পাশের গলি থেকে সিটি কর্পোরেশনের লোকজনকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
তবে এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশীষ নাগ।
আমার গাড়িতে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা অভিযান শেষ করেছি ঠিকমতোই। আমাদের বহরে অনেকগুলো গাড়ি ছিল। হয়তো পেছনের কোনো গাড়িতে ঢিল ছুড়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন