শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

প্রসঙ্গ : মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধন

পথ নির্দেশ

| প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাওঃ এইচ এম গোলাম কিবরিয়া (রাকিব)
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
উক্ত ঘটনা বর্ণনা করে ১৮ নভেম্বর ২০১৬ জাতিসংঘ জানিয়েছে, রাখাইনে সেনা অভিযানে বহু রোহিঙ্গা মুসলিম জনসাধারণ নিহত হয়েছে এবং সেনাবাহিনী সেখানে বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করেছে এবং সাধারণ মানুষের বাড়িঘর জ্বালিয়ে এমন ভাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যে, মাত্র এক সপ্তাহে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্যে বলা হয়েছে, সেনা অভিযানে শুধুমাত্র ১২ ও ১৩ নভেম্বর ১৫ হাজার রোহিঙ্গা তাদের বাড়ি থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সবমিলে গত কয়েকদিনে ৩০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ বাংলাদেশসহ পাশর্^বর্তী দেশগুলোর কাছে তাদের সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রকাশিত কিছু ছবিতে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি গ্রাম পুড়ে সম্পূর্ণ ছাই হয়ে গেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক ব্র্যাড অ্যামামস বলেছেন, নতুন প্রকাশিত ছবিতে ব্যাপকহারে ধ্বংসযজ্ঞ দেখা যাচ্ছে, যা আগের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি।
এমনি করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর গণহত্যা ও চরম নির্যাতন চলছে। যা সেখানে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। তাই ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই তাদের বিষয় বিবেচনা করা সমগ্র বিশ^বাসীর কর্তব্য। এ অবস্থায় কোন বিবেকবান মানুষ নীরব থাকতে পারেন না।
সুতরাং, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত, অবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে মিয়ানমারের সাম্প্রদায়িক নির্যাতন-নিপীড়ন ও এথনিক ক্লিনজিং বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। মুসলিবিশ^কে এ ব্যাপারে ত্বরিত উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে প্রতিবেশী মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের এক্ষেত্রে অনেক করণীয় রয়েছে। যেমন, আশ্রয়প্রার্থী উদ্বাস্তু ও অসহায় রোহিঙ্গাদেরকে নিরাপত্তার সাথে শরণার্থীরূপে আশ্রয় দেয়া, কড়া প্রতিবাদের মাধ্যমে মিয়ানমারকে মুসলিম নিধন বন্ধে বাধ্য করা এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য তাদের নিজেদের দেশে স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে বসবাসের গ্যারেন্টিপূর্ণ সমাধানের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি এখন সময়ের বড় দাবি হয়ে পড়েছে। তেমনি ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক মুসলিম সংস্থাগুলোর এ ব্যাপারে বাস্তবমুখী ভূমিকা পালন করা অপরিহার্য।
সেই সাথে মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বিশে^র মানবতাবাদী জনগণকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া কর্তব্য। আমাদের মনে রাখতে হবে- সকলের নির্লিপ্ততাকে মিয়ানমার সরকার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে অসহায় রোহিঙ্গাদের নিপীড়নে। এ মর্মে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ হিসেবে আমরা বার্মিজ সকল পণ্য বর্জন করতে পারি। এ ছাড়াও শান্তিতে নোবেল পাওয়া অং সান সুচি’র নেতৃত্বাধীন সরকারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন ও নির্বিচারে হত্যাকা-ের দ্বারা সেখানে শান্তি ব্যাহত করার কারণে অং সান সু’র নোবেল পুরস্কার বাতিল বা ফেরত নেয়ার জন্য নোবেল কর্তৃপক্ষের নিকট আমরা দাবি জানাতে পারি। আর আমাদের দেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বিভিন্নভাবে সহায়তা ও সহযোগিতা করতে পারি। সর্বপরি আমরা মহান আল্লাহর কাছে এ ব্যাপারে আরজী পেশ করে দু’আ করতে পারি।
অং সান সুচি’র নেতৃত্বাধীন সরকারের ছত্রছায়ায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন ও নির্বিচারে হত্যাকা-ের তীব্র প্রতিবাদ করছি এবং তাদেরকে এ অন্যায় তৎপরতা থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। মিয়ানমরের সরকার ও উগ্র বৌদ্ধরা যদি মনে করে থাকে যে, পাশবিক কায়দায় মিয়ানমারকে মুসলিমশূণ্য করা যাবে, তাহলে তাদের অংকে চরম ভুল রয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য কখনো সফল হওয়ার নয়। ১৯৪৮ সন থেকে এ যাবতকালের দীর্ঘ ৬৮ বছরের ইতিহাসই তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। ঐতিহাসিকভাবেই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। হাজার হাজার বছর ধরেই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে বসবাস করেছেন। এই সত্যকে অস্বীকার করে রোহিঙ্গাদেরকে কখনো নিজ মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। বরং এ অন্যায়ের দ্বারা তাদেরকে চরমপন্থা ও সশস্ত্র লড়াইয়ের দিকেই ঠেলে দেয়া যাবে। যা মিয়ানমার সরকার ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের জন্য কখনো শুভ ফল বয়ে আনবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন