মুহাম্মদ বশির উল্লাহ : আমাদের মনে রাখতে হবে, দুনিয়াটা হলো একটা ধোঁকার কেন্দ্রস্থল। এখানে মানুষ উচ্চাকাক্সক্ষা পোষণ করে থাকে। আখিরাত ও আমল সম্পর্কে থাকে সদা উদাসীন। অতএব আমাদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন, অতি শীঘ্রই আমাদের মৃত্যবরণ করতে হবে। এ দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করতে হবে। এ দুনিয়াতে অল্প দিনের জন্য মুসাফির হিসেবে আমরা এসেছি। আমাদের উচিত আমলের মাধ্যমে পরকালের সামান সংগ্রহ করা। কিন্তু আমরা দুটি কারণে দীর্ঘাকাক্সক্ষা ও লোভ-লালসার ধোঁকায় পড়ে রয়েছি। এ সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা হলো।
এর প্রথমটি হলো, মানুষ যখন দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে এবং সে কেবলমাত্র খাহেশাত পূরণে নিমজ্জিত হয়ে যায় তখন তার জন্য মৃত্যু সম্পর্কে চিন্তা ও অনুধাবন করতে মুসকিল হয়ে যায়। যে ব্যক্তি যে বস্তুকে ভালোবাসে না সে বস্তুকে দূরে ফেলে রাখে। ঠিক তদ্রƒপ মানুষ আজ মিথ্যা খাহেশের মহব্বতে বিভোর। সেজন্য সে স্বীয় নফসকে এমন বস্তুর প্রতি ধাবমান রাখে যা তার মন পছন্দ করে। তারা সর্বাধিক পার্থিব বস্তুকে অগ্রাধিকার দেয়। কারণ, দুনিয়ার আনন্দ নগদ। সুতরাং তারা এতেই ব্যস্ত থাকে এবং দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে। আর সদা-সর্বদা বিদ্যমান তথা চিরস্থায়ী জিন্দেগীকে দূরে বলে মনে করে। যেমনÑ ধন-সম্পদ, ঘরবাড়ি, বিবি-বাচ্চা ও অন্যান্য আসবাবপত্র নিয়েই থাকে সদা ব্যস্ত। আর মৃত্যু সম্পর্কে থাকে একেবারেই গাফেল। মৃত্যু যে নিকটে, খুবই নিকটে দৃঢ়ভাবে তা বিশ্বাসই করতে চায় না।
ঘটনাক্রমে কোনো সময় মরণের কথা স্মরণ হলে অথবা তার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে তখন অনেকে বিভিন্ন তালবাহানা ও অজুহাত পেশ করে থাকে। আর বলে, সময়তো এখনও অনেক বাকি আছে; যখন বৃদ্ধ হব তখন তাওবা করে নেব। অবশেষে যখন বৃদ্ধ হয় তখন বলে এখনও সময় বাকি আছে। কিছু দিন পর তওবা করে নেব। এর কিছু দিন পর বলেÑ অমুক ঘরটি বানিয়ে, অমুক জায়গাটি আবাদ করে, অমুক স্থান সফর করে, অমুক কাজটি করে, ছেলে-মেয়েদের বিয়ের কাজটি শেষ করে ইত্যাদি। একটার পর একটা বাহানা। এভাবে একটা দশটাকে টেনে এনে আখিরাতের চিন্তা থেকে দূরে সরে রয়েছে। পরিশেষে দেখা যায় তার আর সংশোধন হওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলশ্রুতিতে মৃত্যু এসে তাকে গ্রাস করে নেয়। অথচ মৃত্যু যে কারো কোনো ইচ্ছা পূরণে সময় দেয় না সে ব্যাপারে আমরা সকলেই ওয়াকেবহাল। ফলে তাদের আফসোস ছাড়া আর কিছুই থাকে না। জাহান্নামিদের আফসোস কেবল মাত্র এ জন্যই হবে। এ সকল লোভ-লালসা ও উচ্চাকাক্সক্ষার মূল হচ্ছে দুনিয়ার মহব্বত ও তার প্রতি আকৃষ্টতা। তাই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “তোমাদের যে বস্তুকে মনে চায়, সে বস্তুকেই মহব্বত করতে পারো। কিন্তু জেনে রাখবে, তোমাদেরকে একদিন তা ছেড়ে যেতে হবে।” দ্বিতীয় হচ্ছে, মূর্খতা ও অজ্ঞতা। আজ মানুষ অজ্ঞতাবশত অধিকাংশ সময় স্বীয় যৌবনের আয়নায় মৃত্যু যে অতি নিকটে তা একেবারেই ভুলে যায়। কেউ নিজের সুস্থতা বিবেচনা করে মৃত্যুকে খুব দূরে মনে করে। কতই না আফসোসের বিষয়, ভয়াবহ মৃত্যুর জন্য মানুষ কোনো চিন্তাই করতে চায় না। হে গাফেল মানব সকল! তোমরা একটু চিন্তা করে দেখ, মৃত্যুর খবর না জানে যুবক, না বৃদ্ধ, না নারী, না পুরুষ? আর না এ কথা কেউ জানেÑ মৃত্যু শীতকালে আসবে না গ্রীষ্মকালে? রাতে আসবে না দিনে? এমনটি যদি কেউ জানত, তাহলে সেজন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে ফেলত। তাই এ বিষয়ে জ্ঞাত না থাকার কারণে দুনিয়ার মহব্বত ও উচ্চাকাক্সক্ষা তাকে সুনিশ্চিত মৃত্যু সম্পর্কেও গাফেল করে রেখেছে। তাই মরণকে স্মরণ ও গভীরভাবে চিন্তা করে দেখে না যে, সে কখন মৃত্যুর সুধা পান করবে এবং তখন তার কি পরিস্থিতি হবে? তার হাশর কেমন হবে? সে সর্বদা জানাজায় উপস্থিত থাকে কিন্তু ভেবে দেখে না, তার জানাজাও একদিন হবে। অথচ এভাবে অপরের লাশ বহন করতে সে স্বচক্ষে বারবার দেখে। অপরের মরণ পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু নিজের ক্ষেত্রে খবর নেই। না এ ব্যাপারে কেউ চিন্তা করে, একদিন মৃত্যুর সঙ্গে আমারও মোলাকাত হবে। কেননা, সে আজ পর্যন্ত মরণ নামক ব্যাধির শিকার হয়নি। আর যখন মৃত্যুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তখন কিন্তু একবারই করবে। তাই নিজেকে অপরের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা উচিত এবং সেই বিশ্বাসও ধারণ করা আবশ্যক, অতি শীঘ্রই আমার জানাজা এভাবে হবে। অবশেষে কবর নামক অন্ধকারে দাফন করা হবে। হতে পারে আমার কবরের জায়গা তৈরি করা হয়ে গেছে। প্রিয় বন্ধুরা! মৃত্যুর ক্ষেত্রে টালবাহানার কাজ করা একেবারেই নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। সকলেরই এ কথা উপলব্ধি করা উচিত, মৃত্যু থেকে গাফেল হওয়ার কারণ হলো, অজ্ঞতা আর দুনিয়ার মহব্বত।
এর থেকে পরিত্রাণের উপায় হলো, অজ্ঞতা দূর করা। স্বীয় অভিজ্ঞতার দ্বারা পূর্ণ সাবধানতা ও বিশুদ্ধতার সঙ্গে কাজ করা। অন্তরকে পবিত্র রাখা। কোরআন সুন্নাহর নির্দেশিত পথে চলা। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা গ্রহণ করা। পার্থিব মহব্বত দূর করা। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন