শেখ মো. কামাল উদ্দিন
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
সকল কর্মব্যস্ততার মাঝেও তিনি ইসলামী সাহিত্য রচনা করে গেছেন। তিনি নিম্নলিখিত অতি মূল্যবান গ্রন্থসমূহ রচনা করেন।
মেরাজুল আশেকীন : যাতে একজন মুসলিমের দৈনন্দিন জীবনের অতি জরুরি মাসয়ালা-মাসায়েলের শরয়ী ফায়সালা প্রদান করা হয়েছে। ঈমান, নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত, হালাল-হারাম, গোনাহে কবীরা, শিরক-বিদআত-এর বিবরণ। এতে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাবসহ যাবতীয় প্রসঙ্গ কোরআন ও সুন্নাহর উদ্ধৃতি দিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আওরাদে হাক্কানী বা যিকরে তরিকত : এত রয়েছে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ সংক্রান্ত বর্ণনা। কামেল পীরের পরিচয় ও শর্ত। একাধিক বা’য়াত এর বর্ণনা, ওয়াজের বয়ান, বিভিন্ন তরীকার যিকরের বয়ান, মোরাকাবা ও লতিফার বর্ণনা। বিভিন্ন খতম, তওবা সংক্রান্ত, কোরআন শরীফ পাঠের ফযিলতের বর্ণনা। বিভিন্ন অজিফা ও আছমায়ে হুছ্না এবং আড়াইবাড়ী দরবার শরীফের শাজারা। এছাড়াও আরো প্রয়োজনীয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
রোজার আদর্শ : এতে পবিত্র রমজান শরীফের রোজা ও অন্যান্য রোজার বিস্তারিত বয়ান ও রোজার প্রকারভেদসহ যাবতীয় প্রসঙ্গ আলোচনা করেছেন।
আত্তাহকীকু লিলহাক্কানী ফী খালকী নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম : উর্দু ভাষায় রচিত।
ফতোয়ায়ে হাক্কানীয়া (গান বাদ্য নাজায়েজ হবার দলিল)।
কোরআন হাদীসের আলোকে নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৃষ্টির তথ্য।
শরীয়তের দৃষ্টিতে জুমআর দ্বিতীয় আযান।
শরীয়তের দৃষ্টিতে রাজনীতি ও খিলাফত।
পীর সাহেব (র.) একদিকে শিক্ষা বিস্তার, বক্তৃতা, আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ ও অপরদিকে লেখনীর সাহায্যে ইসলামের সুমহান শিক্ষার আলো বিস্তার করে দ্বীন ও মিল্লাতের বিরাট সেবা করে গেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ন্যায় ও সত্য প্রচারে যাদের স্বার্থহানি ঘটে তারা এরূপ সত্যানুসারীদের বিরুদ্ধাচরণ করেই থাকে। এই মানসিকতার হাত থেকে আল্লাহর দ্বীনের কোন খাটি প্রচারকই রেহাই পাননি। সত্যান্বেষী মুসলমানদের কর্তব্য হলো-তার প্রতিটি বক্তব্য ও লিখনী চাই সেটি ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, যা-ই হোক-কোরআন হাদীসের মানদ-ে বিচার করা। কেউ তা না করে নিছক স্বমতের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা কিংবা অপর কোন স্বার্থে অযথা তার বিরুদ্ধাচরণ করলে এজন্যে আল্লাহর কাছে তাদেরই জবাবদেহী করতে হবে। আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা পরহেজগারী ও কল্যাণের কাজে সহযোগিতা করো। আল্লাহর অবাধ্যতা ও গুনাহের কাজে কারও সহযোগিতা করো না।” এই পথনির্দেশামূলক বাণীই হোক সকল সত্যানুসন্ধানীর ন্যায় ও অন্যায় অনুধাবনের মাপকাঠি।
তিনি প্রবল আগ্রহ ভরে পবিত্র হজ পালন করেছেন। তিনি মা-বাবা, ভাই-বোন নিজের উস্তাদ ও সকল মাইয়্যেতের জন্য প্রাণ খোলে দোয়া করতেন। বিশেষ করে তার উস্তাদ উপমহাদেশ বিখ্যাত আলেমে দ্বীন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররাম’র খতিব আল্লামা হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়েদ আমিমুল ইহসান (র.) ও আল্লামা হযরত মাওলানা আমিনুদ্দীন (র.)-এর কথা প্রায়সই স্মৃতিচারণ করতেন।
পীর সাহেব (র.)-এর উত্তরসূরী, ছাত্র, সাগরেদ, ভক্ত-মুরীদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্বীন কায়েমে নিয়োজিত আছেন। তিনি অসংখ্যবার পবিত্র মক্কা-মদীনায় গমনাগমন করে পবিত্র হজ্ব এবং উমরাহ পালন করেন। তার নির্দেশে দেশের বহু জায়গায় দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে।
আড়াইবাড়ী দরবার শরীফের পীর, আড়াইবাড়ী ইসলামিয়া সাঈদীয়া কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ, বহু গ্রন্থ প্রণেতা, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, অসংখ্য আলেমের উস্তাদ আল্লামা হযরত মাওলানা শাহ মুহাম্মদ গোলাম হাক্কানী (র.) তার অসংখ্য স্মৃতি, অনেক অমর কীর্তি দুনিয়ায় ফেলে দিয়ে লাখো লাখো ভক্ত অনুসারী, ছাত্র-শিক্ষকদের কাঁদিয়ে ২০০৯ সালের ২৬ এপ্রিল, ১৩ বৈশাখ ১৪১৬ বাংলা, ২৯ রবিউস সানী ১৪৩০ হিজরী, রবিবার, রাত পৌনে ৯টায় ঢাকা গ্রীণ রোডস্থ কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। পরদিন ২৭ এপ্রিল, ১৪ বৈশাখ, ১ জমাদিউল আউয়াল, সোমবার, বিকেল ৩টায় কসবা টি, আলী ডিগ্রী কলেজ প্রাঙ্গণে স্বীয় পুত্র মাওলানা মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ার সাঈদীর ইমামতিতে নামাযে জানাযা আদায় করা হয়।
অবশেষে ২৭ এপ্রিল সোমবার বিকেল চারটায় আড়াইবাড়ী দরবার শরীফে পিতা-মাতা ও ভাইদের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। তাঁর ইন্তেকালের পর বিভিন্ন এলাকায় হুজুরের কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তাঁর ওফাত উপলক্ষে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সম্মেলন ও ইসালে ছাওয়াব মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মহান আল্লাহতা’য়ালা মরহুম পীর সাহেব (র.)-এর সকল নেক কাজ কবুল করে জান্নাতের সুউচ্চ স্থানে আসীন করুন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন