শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

প্রসঙ্গ : রাসূলগণের উপর ঈমান

সত্যালোকের সন্ধানে

| প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এ, কে, এম, ফজলুর রহমান মুন্্শী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
 (ঙ) আমি তো বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য সুসংবাদদানকারী সতর্ককারী বৈ কিছু নই। (আল-আ’রাফ-১৮৮) (চ) নিশ্চয়ই হে নবী! আপনি উত্তম চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত। (আল ক্বলম-০৪) (ছ) অবশ্যই আমি তাদেরকে এমন কিতাব দিয়েছি যা নিশ্চিত জ্ঞানের দ্বারা বিশদ ব্যাখ্যা করেছি তা বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়েত ও করুণা। (আল আ’রাফ-৫২) (জ) আমি তোমাদের নিকট তাবলীগের জন্য পারিতোষিক কামনা করি না। আমার প্রতিদান তো রাব্বুল আলামিন দান করবেন। (আশ শুআরা-১০৯) (ঝ) আল্লাহতায়ালা তাদের মধ্যে তাদেরই শ্রেণীভুক্ত একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে আল্লাহর আয়াত পাঠ করে শোনাবেন, তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেবেন। (ঞ) সকল নবী-রাসূল উম্মতের নিকট আল্লাহতায়ালার সংবাদ বাহক ও দ্বীনের প্রচারক ছিলেন। কেননা তা তথা আখবার ও তাবলিগের মধ্যেই বিদ্যমান। কেননা নবী সংবাদ দেন আর রাসূল আহকাম কাক্সিক্ষত স্তর পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেন। এটি একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম বিষয়। আয়াতে উল্লিখিত সাদিকীন অর্থ নাছিহীন অর্থাৎ যারা সৃষ্টির কল্যাণ কামনা করে। (নিবরাস-২৮২-২৮৩)
প্রত্যেক নবীই মাসুম তথা নিষ্পাপ। অর্থাৎ কোন সগীরা বা কবীরা গুনাহ স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোনো নবী দ্বারা সংঘটিত হয়নি। নবীর ইসমাত বা মাসুম হওয়া এমন একটি বৈশিষ্ট্য যা কোনো প্রকার চাপ প্রয়োগ ছাড়াই নবীদেরকে গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহপাক ফরমান :(ক) যদি আমি তোমাকে দৃঢ়পদ/অবিচলিত না রাখতাম তবে তুমি তাদের প্রতি একটু ঝুঁকেই পড়তে। (বনী ইসরাইল-৭৪) (খ) তোমাদের সাথী (মুহাম্মদ সা.) বিপথগামী, বিভ্রান্ত হননি। (আন নাজম-০২) (গ) ওই মহিলা তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল, তিনিও আকৃষ্ট হয়ে পড়তেন যদি না তার রবের নিদর্শন প্রত্যক্ষ করতেন। (ইউসুফ-২৪) (ঘ) নবীগণ তাবলিগের ব্যাপারে বিশেষত শরয়ী বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত বিষয় উম্মতকে পথনির্দেশনা ও বিধানসমূহ উম্মতের নিকট পৌঁছাতে অসত্য হতে সম্পূর্ণ রূপে মুক্ত ছিলেন। উম্মতের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মতে, নবীগণ ওহী প্রাপ্তির পূর্বে ও পরে কুফুরী হতে মুক্ত ও নিষ্পাপ ছিলেন। (নিবরাস-২৮৩) (ঙ) গ্রন্থকারের মতে নবীগণ শয়তানী প্রতারণা, মিথ্যা, সগীরা বা কবীরা গুনাহ ইত্যাদি হতে স্বেচ্ছায় বা ভুলক্রমে, নবুওয়াতের কার্যক্রম আরম্ভ করার পূর্বে বা পরে মুক্ত ছিলেন অর্থাৎ তারা নিষ্পাপ ছিলেন। (মারামুল কালাম-৩২) (চ) নবীগণ সকলেই সগীরা-কবীরা গুনাহ থেকে পবিত্র ছিলেন। (শরহু ফিকহে আকবার-৫৬) (ছ) কাযী আয়ায বলেনÑ দেহ, মন ও মুখে শয়তানী প্রতারণা থেকে নবীর নিষ্পাপ হওয়ার ব্যাপারে উম্মত একমত পোষণ করে। (তাফসীরে খাযিন-২/২৭০) (জ) শরহুল মাকাসিদে উল্লেখ করা হয়েছে, গুনাহ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা হতে বিরত থাকার যোগ্যতা ও শক্তিকে ইসমাত বলে। (হাশিয়ায়ে খিয়ালী-১০৭) (ঝ) উসুলবিদ ইমামগণ বলেনÑ সকল নবী নিষ্পাপ। ভুলেও তাদের দ্বারা কোনো গুনাহ হবে না। আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে তাদের দ্বারা কোনো ভুলত্রুটি হওয়ার অবকাশ নেই। উস্তাদ আবু ইসহাক ইসফারায়িনী, আবুল ফাতাহ শাহরাস্তানী, কাযী আয়ায, শাইখ তাক্কী উদ্দিন সাবাকী প্রমুখ এ ব্যাপারে একমত। (আল ইয়ওয়াকিতু ওয়াল জাওয়াহিরু-২/২) আম্বিয়া কিরাম ব্যতীত অন্য কোনো মানুষ মা’সুম বা নিষ্পাপ নয়। আল আগাররুল মুযানি হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) দুই হাত উঁচু করে এ কথা বলতে বলতে আমাদের নিকট তাশরীফ আনলেন, “হে লোক সকল! তোমাদের রবের সমীপে ইস্তিগফার কর। অতঃপর তার নিকট তওবা কর। আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর সমীপে একশতবার ইস্তিগফার ও তওবা করি। উলামাগণ বলেন, রাসূল (সা.) এ কথা বলতেন। কেননা তিনি গুনাহ হতে মাসুম ছিলেন। অন্যদের জন্য এটা শোভনীয় নয়। কারণ তারা মাসুম নন। তাদের জন্য গুনাহ হতে তওবার মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন সম্ভব। (সুনান ত্বহাবী-২/৩৬৮)  এ পর্যন্ত আমরা রাসূলগণের ওপর ঈমান আনয়ন সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেছি এবং রাসূলগণের ওপর আমাদের ঈমান কেমন হওয়া উচিত এবং আমরা শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত হিসেবে তাঁর ওপর কতখানি সুদৃঢ় ঈমান থাকা আবশ্যক তা সাধ্যানুসারে বিশ্লেষণ করেছি। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ মুস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.)-এর ওপর পূর্ণ ঈমান আনয়ন ও তাঁর সুন্নাত মোতাবেক জীবন গড়ার তাওফিক এনায়েত করুন, আমিন!
তবে, ইসলাম বিদ্বেষী বহু সংখ্যক পৌত্তলিক, অগ্নি উপাসক, ইয়াহুদি ও নাসারা শুরু থেকে এ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ও কর্মের ওপর ত্রুটি আরোপ করেছে এবং করেই চলেছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে মুসলমান নামধারী বাতিল ফিরকা সমূহের সদস্যরা। যেমনÑ খারেজী সম্প্রদায়, রাফেজী সম্প্রদায়, মুতাযিলা সম্প্রদায়, মুশাব্বিহ সম্প্রদায়, জাহামিয়্যাহ সম্প্রদায়, মুরজিয়্যাহ সম্প্রদায়, জাবারিয়্যাহ সম্প্রদায়, কাদারিয়্যাহ সম্প্রদায়, আহলে তানাসুখ বা পুনর্জন্মবাদী সম্প্রদায়, কাদিয়ামী ও লাহোরী গ্রুপ, বাহাঈ সম্প্রদায়, ইসমাঈলী ও আলাখানী সম্প্রদায়, যিকরি ফিরকা, হাদিস অস্বীকারকারী, ফিরকা তাকলীদ ও মাযহাব অস্বীকারকারী সম্প্রদায়, ইজমা ও কিয়াস অস্বীকারকারী সম্প্রদায় ইত্যাদি। এসব বাতিল ফিরকার সদস্যরা রাসূলে পাক (সা.)-এর পবিত্র জীবনাদর্শে খুঁত বা ত্রুটি আরোপ করেই চলেছে অহরহ। তাদের কুটিল ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে নিজেদের ঈমান ও আকীদা মজবুত রাখার জন্য প্রত্যেক দ্বীনদার মুসলমানের উচিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের দলে শামিল থাকা। এর কোনো বিকল্প নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন