সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আবারো সরব কূটনীতিকরা

| প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পশ্চিমা দূতদের সাথে প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ চেয়ে জাতিসংঘের চিঠি : সাড়া নেই সরকারের : হতাশ বিরোধী দল
আহমদ আতিক : দেশের রাজনীতিতে ফের আলোচনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দূতিয়ালি। এবার ইসি পুনর্গঠন ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা নিয়ে আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দিয়েছে জাতিসংঘ; যেখানে থাকবেন পশ্চিমা বিভিন্ন  দেশের প্রতিনিধিরাও। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে চায় জাতিসংঘ। সংস্থার আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিনস সম্প্রতি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তবে বিদেশিরা চাইলেও সাড়া নেই সরকারের। বাংলাদেশি কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচন কমিশন গঠন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাই এ প্রক্রিয়ায় কারো প্রভাব ফেলার সুযোগ নেই। তারপরও কেউ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যথাসময়ে জানানো হতে পারে। অন্যদিকে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতদের সাক্ষাতের আবেদনে প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে সাড়া না পাবার ফলে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপির পক্ষ থেকে হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ইসি গঠন বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দফতর ১০ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানায়। জাতিসংঘের ওই অনুরোধে বলা হয়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেইক, কানাডার হাইকমিশনার পিয়েরে বেনোয়া লারামে, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জুলিয়া নিবেল্ট, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াটকিন্স প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে চান।
ছয় বিদেশি কূটনীতিক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, ইসি গঠনের বিষয় একান্তই বাংলাদেশের নিজস্ব। তা নিজস্ব প্রক্রিয়ায় হবে। এখানে বাইরের কারো কোনো মত দেয়ার সুযোগ  নেই। ফলে এ বিষয়ে কূটনীতিকদের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ কোথায়? তাছাড়া তাদের যদি সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হতো, এত দিনে তা হয়ে যাওয়ার কথা।
জানা গেছে, একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনসহ আরো বেশ কিছু বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করতে চান। অবশ্য বাংলাদেশের রাজনীতির টানাপড়েনে বিদেশিদের দূতিয়ালি নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতপার্থক্য কমিয়ে আনতে নানা সময়ই  দেখা গেছে তাদের তৎপরতা। সবশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতিসংঘের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারাঙ্কো ঢাকা সফর করেন বেশ কয়েকবার।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, এ দেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে আগ্রহী বিদেশিরা আগামী দিনে সম্ভাব্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হতে পারে সে বিষয়ে খোঁজ রাখছেন। নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার যে সংস্কৃতি এ দেশে গড়ে উঠেছে তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তারা এ  দেশে তাদের দূতাবাসের পরামর্শ চায়। দূতাবাসগুলোর আশঙ্কা, রাজনৈতিক ঐক্য না থাকলে আগামীতেও সহিংসতা ও অস্থিরতা হতে পারে। এসব অবশ্যই এ দেশের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করবে। তাই  বৈশ্বিক সম্প্রদায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠন দেখতে চায়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা সৃষ্টির জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া উন্মুক্ত হওয়া জরুরি বলে তারা মনে করে। উন্নয়ন সহযোগীরা চায়, এমন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক, যারা সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রবল চাপের মধ্যেও নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট গত সপ্তাহে এক ফেসবুক চ্যাটে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরো বেশি অংশগ্রহণমূলক করতে সহায়তা করতে চায়।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে  যৌথভাবে সাক্ষাৎ চাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, অতীতে  যেসব দেশ নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য-সহযোগিতা দিয়েছে তারাই ওই সাক্ষাৎ চেয়েছে। সাক্ষাতের জন্য তাদের এখনও সময় দেয়া হয়নি। কিন্তু সাক্ষাৎ হবে বলে তিনি আশাবাদী।
অপর এক কূটনীতিক বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে সহিংসতা ও অস্থিরতার কারণে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা প্রশ্নের মুখে পড়ে। আলোচনার মাধ্যমে ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে নির্বাচন ব্যবস্থা ঠিক করা সম্ভব না হলে আবার অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার  কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের বিকল্প নেই।
এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত ডিসেম্বরে ব্রাসেলসে এক বৈঠকে বলেছে, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে সক্ষম নির্বাচন কমিশন চায় ইইউ। এ  প্রেক্ষাপটেই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক চেয়েছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, নির্বাচন কমিশন গঠন প্রশ্নে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিদেশী কূটনীতিকদের বৈঠকের প্রয়োজন নেই। গোটা প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে বিদেশি কূটনীতিকরা এ সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কূটনীতিকদের জন্য একটি ব্রিফিংয়ের আয়োজন করতে পারে।
তবে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে এখন সরগরম রাজনীতির মাঠ। প্রায় সব রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপের পর সার্চ কমিটিও গঠন করেছেন প্রেসিডেন্ট। এরই মধ্যে যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপি। এ অবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আবারো আগ্রহী হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এ জন্য প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সাথে সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দিয়েছে জাতিসংঘ। এমনটাই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সংস্থাটির আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিনস। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে তিনি জানান, প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্য হলো, বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা। প্রেসিডেন্টের সাথে আর কী কী নিয়ে আলোচনা হতে পারে তাও ঠিক করে রেখেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। যার মধ্যে রয়েছে, একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন তৈরি। আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য একটি কমিশন গঠন। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। নির্বাচনের আগে-পরে সহিংসতা রোধ। নির্বাচন প্রক্রিয়া জনগণের সামনে স্পষ্ট করা। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও রাজনৈতিক চাপ মোকাবেলায় সক্ষম করা। যাতে জাতীয় নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচন সব দক্ষতার সাথে পরিচালনা করতে পারে।
বিদেশী কূটনীতিকদের এ গ্রুপটি মনে করে, এসব প্রক্রিয়া অবলম্বন না করলে, অতীতের মতো আবারও সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা বাধাগ্রস্ত করবে উন্নয়নকে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ প্রস্তাব বিষয়ে সাবেক কূটনীতিক হুমায়ূন কবির বলেন, বিশ্বায়নের যুগে যেকোনো দেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশিরা নিজেদের মতামত দিতেই পারেন। তবে তা মানা না মানা নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট দেশের ওপর। অতীতেও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক নানা মহলের তৎপরতা বিফলে গেলেও, এই কূটনীতিক মনে করেন, ব্যর্থতা-সফলতার দায়ভার বাংলাদেশের ওপরই বর্তায়।
এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও  সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের প্রেসিডেন্টই নির্বাচন কমিশন ঠিক করবেন। বিদেশী কারো নাক গলানোর প্রয়োজন নেই। তবে সৌজন্য সাক্ষাৎ হতেই পারে, কিন্তু দেশের কোনো বিষয় নিয়ে কথা নয়।  
বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপির মুখে হতাশার সুর। নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারকে দেয়া জাতিসংঘসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতদের সাক্ষাতের আবেদনের চিঠি ফলপ্রসূ হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এ নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে জাতিসংঘ বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়েছেন। অতীতেও তারা চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। তবে এবার সার্চ কমিটি গঠনের আগে চিঠি দিলে ফলপ্রসূ হতো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Masud ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ৪:১৬ পিএম says : 0
আগামী নির্বাচনের ইসি গঠনে সব দল এক সাথে বসে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে করলে দেশের জন্য ভাল হবে বলে আমি মনে করি।
Total Reply(1)
Nannu chowhan ২৭ এপ্রিল, ২০১৮, ৮:৪৪ এএম says : 4
You are right Mr.masud the problemis this government has no intention to bel the free fare elections,they like to hold the power forever that’s what some of their leaders openly telling.So we have to understand the fact..

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন