বিশেষ সংবাদদাতা : অনিয়ম ও দুর্নীতির ভারে আক্রান্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। পছন্দের কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে এই কোম্পানিটিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট। এ নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে। খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে- কেন বাজার দরের চেয়ে কয়েকগুন বেশি দামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে যন্ত্রপাতি কেনার কার্যাদেশ দেয়া হচ্ছে।
এই অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অপর দিকে, ক্রয় করা নিম্নমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে। সরকারকে ঠকিয়ে কারা এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছরÑ তা খতিয়ে দেখতে প্রয়োজনে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে পিডিবির একটি সূত্র জানায়, ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক শ্রেণির কর্মকর্তা, ঠিকাদার এবং কয়েকটি কোম্পানির কর্মকর্তার যোগসাজশে এ ধরনের অনিয়ম হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এ ধরনের কয়েকটি অনিয়মের অভিযোগ উল্লেখ করে এ ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছে পিডিবিকে। কিন্তু এসব অনিয়ম তদন্তে পিডিবি এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। ফলে দোষীরা যেমন শাস্তি পাচ্ছে না, তেমনি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগগুলো অমীমাংসিতই রয়ে যাচ্ছে।
পিডিবি সূত্রে জানা যায়, গত ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক শামীম আহম্মেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পিডিবির পরিচালক (ক্রয়) মো. আবু ইউসুফ এবং প্রধান প্রকৌশলী (উৎপাদন) এ এইচ এম কামাল সম্পর্কে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানাতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ বিভাগের উপ-সচিব সুরাইয়া আখতার জাহান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৩০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কিন্তু ওই দুর্নীতি অভিযোগগুলোর এখনো কোনো সুরাহা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ বলেন, উন্নয়ন ও যন্ত্রপাতি ক্রয়কাজে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং মন্ত্রণালয় থেকে কিছু অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে যতদূর জানা গেছে, এগুলোতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। কেউ কেউ উন্নয়ন কর্মকা-কে ব্যাহত করতে এ ধরনের অভিযোগ করেছে। তিনি জানান, অভিযোগগুলো তদন্তে কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনও দেয়া হয়নি। তবে সহসাই তদন্ত করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, দোষীদের দায়মুক্তি দেয়ার জন্য কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। নিরপেক্ষ তদন্ত করা হলে অনিয়মের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠত।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেয়া অনিয়ম-অভিযোগগুলোর মধ্যে একটি রয়েছে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বয়লার টিউব ক্রয় সংক্রান্ত। এটির প্রথম দরপত্রে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়Ñ সাংহাই ইলেক্ট্রিক পাওয়ার জেনারেশন সার্ভিস কোম্পানি থেকে টিউব কিনতে হবে।
পরে বলা হয়, সাংহাই বয়লার ওয়ার্কস থেকে টিউব সরবরাহ করতে হবে। কিন্তু এ দুই কোম্পানির একটিও বয়লার টিউব তৈরি করে না। পছন্দের কোম্পানি ছাড়া অন্য কেউ যেন দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য এ শর্ত দেয়া হয়। দুই কোটি টাকার বিনিময়ে পিডিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কাজ করেছেন।
শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্লেড কেনার দরপত্রে সিমেন্স জার্মানি থেকে ব্লেড সরবরাহ করতে বলা হয়। অথচ সিমেন্স নিজে এ ধরনের ব্লেড প্রস্তুত করে না। তারা অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিয়ে এটি সরবরাহ করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন