অর্থনৈতিক রিপোর্টার : আজ থেকে ৭ দিনে যে কোনো নতুন ব্যবসা শুরু করা যাবে। বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে ২৮ দিনের মধ্যে। আর ভবনের অনুমোদন পাওয়া যাবে ৬০ দিনের মধ্যে। এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম।
গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ সহজকরণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের প্রেক্ষিতেই নতুন ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সব ধরনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমরা সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়ম আরও সহজ করেছি। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। আজ থেকে তা কার্যকর হবে। এর মধ্যে প্রথমেই ব্যবসা শুরু করার পদ্ধতি। বর্তমানে ব্যবসা শুরু করতে ২০ দিন সময় লাগে। নতুন নিয়মে ৭ দিনের মধ্যে শুরু করা যাবে। বিনিয়োগের দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে রাজউক থেকে নির্মাণ কাজের অনুমতি। বর্তমানে একটি বিল্ডিংয়ের অনুমতি নিয়ে ২৭৮ দিন সময় লাগে। নতুন নিয়মে ৬০ দিনের মধ্যে রাজউক অনুমোদন দেবে। দেশের বিনিয়োগের অন্যতম সমস্যা বিদ্যুত। এ কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠানে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করলে সংযোগ পেতে ঝামেলা পোহাতে হতো। বুধবার থেকে আবেদন করার ২৮ কার্যদিবসের মধ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠানে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যাবে, যা আগে ৪০৪ দিন সময় লাগত। এটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
তিনি আরও বলেন, দেশে বিনিয়োগ অন্যতম একটি সমস্যা কর। বর্তমানে ২১ ধরনের কর দিতে হয়। এছাড়াও কর পরিশোধের ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা রয়েছে। অনলাইনে কর পরিশোধ করা যায় না। এতে ব্যবসায়ীদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। আমরা সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে কর পরিশোধ সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, ব্যবসা শুরু করতে অন্যতম একটি সমস্যা হলো পুঁজির অভাব। এ জন্য ব্যাংকের ঋণের দরকার হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সহজে ঋণ পাওয়া যায় না। এছাড়া সিআইবিতে (ক্রেডিট ইনফরমেন ব্যুরো) ঋণ গ্রহীতাদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। তাই পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেয়ার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়াও জমির নিবন্ধন পদ্ধতি, ক্রস বর্ডার ট্রেডিং, শিল্পের চুক্তি বাস্তবায়ন এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছেÑ বিশ্বের কোনো দেশে কত সহজে ব্যবসা করা যায়, প্রতি বছর এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। ওই রিপোর্টকে ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট বলা হয়। আর বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ ডুয়িং বীজনেস রিপোর্টে দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। এর মূল কারণ সরকারের অস্থিরতা এবং কার্যকর সংস্কারের অভাব। এর ফলে দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে না।
ওই রিপোর্টে ব্যবসার পরিবেশকে ১০টি বৃহত্তর নির্দেশিকা বা বিষয়ে বিন্যস্ত করে সেগুলোর অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। এ সূচকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৯। এছাড়া অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি, বৈদেশিক বাণিজ্য, চুক্তির বাস্তবায়ন, অসচ্ছলতা দূরীকরণ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। যে পাঁচটি সূচকে সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে সেগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে ব্যবসায় শুরু। এ সূচকে গতবার বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১১। এ বার তা ছয় ধাপ কমে ১১৭ হয়েছে। ঋণের প্রাপ্যতা সূচকে ১২৮ থেকে পাঁচ ধাপ কমে ১৩৩ হয়েছে। সম্পত্তি নিবন্ধন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর পরিশোধ সূচকে গতবারের চেয়ে এক ধাপ করে পিছিয়েছে বাংলাদেশ। সার্বিকভাবে বার্তা হল বাংলাদেশে সহজে ব্যবসা করা যায় না।
কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, বিশ্বব্যাংকের ডুয়িং বীজনেস রিপোর্ট বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ বাড়াতে বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক করা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যাতে সহজে ঋণ পায় সেজন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি জমি ক্রয়, শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন এবং শ্রমিকদের প্রশিক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, উৎপাদিত পণ্য যাতে সহজে রফতানি করা যায়, সে বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। তারমতে, অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অনেক অর্জন রয়েছে। কিন্তু এতদিন উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ী যে সব অর্জন করেছে, তা হাত পা বাধা অবস্থায়। অর্থাৎ তাদের অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। আর ভবিষ্যতে তারা যাতে হাত খুলে ব্যবসা করতে পারে তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, বিডার উদ্যোগে ১৮টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রমে আরও গতি বাড়াতে কী করবে, সে সংক্রান্ত কর্মসূচী তারা দিয়েছে। এসব কর্মসূচি সমন্বয় করে প্রকাশ করা হল। তিনি বলেন, বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। আর এজন্য বিডা গঠন করা হয়েছে। আর শিগগিরই তার সুফল পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, প্রতিবছর মে মাস পর্যন্ত সময়কাল হিসাব করে ডুয়িং বীজনেস রিপোর্ট প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। আশাকরি আগামী রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশে সহজে ব্যবসা করা যায়, সেটি ওই রিপোর্টে প্রতিফলিত হবে।
বড় খেলাপিরা কীভাবে ঋণ পান প্রশ্ন এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্টের
দেশে কালো ও খেলাপি ঋণ বাড়ছে। আর বিভিন্ন তথ্য থেকে টাকা পাচারেরও তথ্য আসছে। কিন্তু এসব ব্যাপারে কেউ তেমন কোনো কথা বলছে না। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে তিনটি বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ এসব কথা বলেন। এ সময়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন বড় খেলাপিরা ঋণ পায় কীভাবে?
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য তিনটি বিষয়ে জোর দেয়ার সময় এসেছে। এরমধ্যে প্রথম হল কালো টাকা। তারমতে, ভারতে ৬২ শতাংশ কালো টাকা রয়েছে। আর কালো টাকা মুক্ত করতে সম্প্রতি নোট বাতিলসহ তারা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ কত তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব নেই। তিনি বলেন, দেশে কালো টাকার পরিমাণ কত, মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় তা উল্লেখ করা উচিত। তিনি বলেন, আরও উদ্বেগের বিষয় হল দেশ টাকা পাচারের তথ্য আসছে বিভিন্ন রিপোর্টে। কিন্তু এই ব্যাপারে কেউ তেমন কোনো কথা বলছে না। ফলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। শুনেছি কিছুদিন আগে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৩ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে তা ৭০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু কীভাবে এই ঋণ দেওয়া হয়। কারা এই ঋণ নেয়, তা খতিয়ে দেখতে হবে। মাতলুব আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। ঋণ দেয়ার সময় সতর্ক না হলে পরবর্তীতে তা আদায় করা কঠিন হয়। বাংলাদেশ ব্যাংককে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন