বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

জিজ্ঞাসার জবাব

| প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

১। শেখ মোহাম্মদ মোহাইমিনুল ইসলাম (মাহির), পাড়া ডগার, ডেমরা, ঢাকা।
জিজ্ঞাসা : জিকির কলবকে সজীব করে-বুঝিয়ে বলুন?
জবাব : জিকিরের অর্থ স্মরণ করা, মনে করা, উল্লেখ করা, বর্ণনা করা।
শরিয়তের আলোকে জিকির বলা হয়, মুখে বা অন্তরে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা এবং প্রশংসা করা, পবিত্র কোরআন পাঠ করা, আল্লাহর কাছে চাওয়া, তার আদেশ-নিষেধ পালন করা, তার প্রদত্ত নেয়ামত ও সৃষ্টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা।
ইমাম নববি (রহ.) বলেন, জিকির কেবল তাসবিহ, তাহলিল, তাহমিদ ও তাকবির ইত্যাদিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আনুগত্যের সাথে প্রত্যেক আমলকারীই জিকিরকারী হিসেবে বিবেচিত।
আল্লাহর জিকির এমন এক মজবুত রজ্জু, যা সৃষ্টিকে ¯্রষ্টার সাথে সম্পৃক্ত করে। তাঁর সান্নিধ্য লাভের পথ সুগম করে। মানুষকে উত্তম আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত করে। সরল ও সঠিক পথের ওপর অবিচল রাখে।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন-
‘হে মুমিনরা! তোমরা অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকির কর।’ ( সুরা আহযাব : ৪১)
এ আয়াতে বলা অধিক পরিমাণে জিকির বলতে কি উদ্দেশ্য তা আল্লাহতায়ালা অপর আরেক আয়াতে বলেনÑ
‘যখন তোমরা নামাজ আদায় করবে, তখন আল্লাহর জিকির কর দাঁড়িয়ে, বসে এবং কাত হয়ে। (সুরা নিসা : ১০৩)
এ কারণে আল্লাহতায়ালা মুসলিম ব্যক্তিকে দিবা-রাত্রি গোপনে-প্রকাশ্যে জিকির করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা আরো বলেনÑ
‘তোমরা প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশংকচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ করবে এবং তুমি উদাসীন হবে না।’ (সুরা আরাফ : ২০৫) তিনি আরো বলেনÑ
‘মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। এবং সকাল বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর।’ (সুরা আহযাব : ৪১-৪২)
আল্লাহর জিকিরকারী, তার নিদর্শনাবলী থেকে শিক্ষা লাভকারী : তারাই বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন।
অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছেÑ 'নিশ্চয় আসমান জমিন সৃজনে আর রাত-দিনের পরিবর্তনে নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য, যারা আল্লাহর জিকির করে দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৯০-১৯১)  
উল্লিখিত আয়াতে কারীমা দ্বারা এ কথা সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, জিকির দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে সর্বাবস্থায় করা জায়েজ। এমনকি নাপাক অবস্থায়ও। সুতরাং নাপাক থাকা অবস্থায় আল্লাহর জিকির করতে কোনো সমস্যা নেই। তবে উত্তম হলো পবিত্র অবস্থায় করা।
তবে নাপাক স্থান যেমন টয়লেট ইত্যাদিতে জিকির করা জায়েজ নয়। বাকি সকল স্থানে জিকির সর্বাবস্থায় করা জায়েজ।
আবুদ্দারদা রা. থেকে বর্ণিত : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনÑ আমি কি তোমাদেরকে এমন এক আমল সম্পর্কে অবহিত করব না, যা তোমাদের অধিপতির নিকট সবচেয়ে উত্তম ও পবিত্র এবং তোমাদের মর্যাদা অধিক বৃদ্ধিকারী এবং তোমাদের জন্য স্বর্ণ-রূপা দান করা ও দুশমনের মুখোমুখি হয়ে তোমরা তাদের গর্দানে বা তারা তোমাদের গর্দানে আঘাত করার চেয়ে উত্তম? সাহাবায়ে কেরাম (রা.) বললেন, হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ। বললেন, জিকরুল্লাহ (আল্লাহর জিকির বা স্মরণ)। (তিরমিজি : ৩২৯৯)
জিকির অন্তর দ্বারা হতে পারে, জিহ্বা দ্বারা হতে পারে, বা একসঙ্গে উভয়টা দ্বারাও হতে পারে। এর বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, যেমন :
১. মৌখিক জিকির : যেমন তাসবীহ; ২.তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীর ইত্যাদি; ৩.পড়া, যা কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত;
৩. প্রার্থনা; এটা বিশেষ জিকির, কেননা এ-দ্বারা আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভ হয়, ইহকাল ও পরকালের প্রয়োজন পূরণ হয়।
৪. ইস্তিগফার করা; আল্লাহতায়ালা নূহ (আ.)-এর কথা বিবৃত করে বলেনÑ ‘বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো মহাক্ষমাশীল।’ (সুরা নূহ ১০)
৫. অন্তর দিয়ে আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করা। এটা অন্যতম বড় জিকির;
৬. রকমারি ইবাদতের অনুশীলন করা : যেমন সালাত কায়েম, জাকাত প্রদান, পিতা-মাতার সাথে অমায়িক আচরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা, জ্ঞানার্জন ও অপরকে শিক্ষাদান ইত্যাদি। কেননা, সৎকর্মের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহকে স্মরণ করা।
জিকিরকে আমরা দুই ভাগে বিভক্ত করতে পারি। যেমনÑ
১. সাধারণ জিকির : যার কোনো নির্দিষ্ট সময় বা স্থান নেই। বিশেষ কিছু সময় বা স্থান ব্যতীত যে কোনো সময়ে বা স্থানে এসব জিকির করার অবকাশ আছে।
২. বিশেষ জিকির : যা বিশেষ সময়, অবস্থা ও পাত্র অনুসারে করা হয়। নিচে এমন কিছু সময়, অবস্থা ও স্থানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো যার সাথে বিশেষ বিশেষ জিকিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
সকাল-বিকাল : এর সময় হচ্ছে ফজর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত, আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। ঘুমানো ও ঘুম থেকে ওঠার সময়। ঘরে প্রবেশের সময়। মসজিদে প্রবেশ ও মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময়। অসুস্থতার সময়। বিপদাপদ ও পেরেশানর সময়। সফরের সময়। বৃষ্টি বর্ষণের সময়।
মোটকথা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রত্যেকটি ভালো কাজ যখন আল্লাহর স্মরণে করি।
প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন আমাদেরকে সব কাজে সর্বাবস্থায় তাকে স্মরণ করার তাওফিক দান করেন।
উত্তর দিচ্ছেন : মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৯:১৭ এএম says : 0
Thanx
Total Reply(0)
Alamin ১ মে, ২০১৮, ৫:২০ পিএম says : 0
তাসবিহর দোয়া ?
Total Reply(0)
মো আল আমিন ১ মে, ২০১৮, ৫:২৩ পিএম says : 0
তাসবিহ দোয়া আমাকে কি দিবেন প্লিস?
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন