শাহিদ হাতিমী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
বলাবাহুল্য, মানুষের একটা ফিতরত হচ্ছে গোনাহের কর্মে ঝুঁকে পড়া! অবশ্য এটা শয়তানের প্ররোচনায়ই ঘটে থাকে। এই যে দেখুনÑ কেউবা মদ, ফেনসিডিল, ইয়াবা জাতীয় নেশাজাতদ্রব্য পান করে গোনাহে লিপ্ত! কেউবা নারী সঙ্গে মত্ত হয়ে যৌন চাহিদা পূরণে জিনার মতো পাপাচারে উন্মাদ ব্যস্ত! কেউবা অর্থবিত্ত, ধন-সম্পদের অঢেল পাহাড় গড়ার জন্য দেদার করছে গরিবের জমি দখল, ব্যবসায় দুর্নীতি, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ কুকর্ম ও ধিক্কিত গোনাহের কাজ! কেউবা করছে অবলীলায় ক্ষমতার অপব্যবহার!! গোনাহের কর্মে লিপ্ত মানুষ নামের আমাদের এই হতভাগা নারী-পুরুষরা অনেকটা জেনেও থামছে না! না মেনে, না থেমে, না ভেবে সামান্য সময়ের ক্ষণস্থায়ী মজালাগা এই পাপকর্মগুলো চালিয়েই যাচ্ছে! তারা ভুলে যায় মৃত্যু আমাদের কাউকেই রেহাই দেবে না! অথচ আমরা তারা অচিরেই পাড়ি জমাবো চিরকালীন জগতে, পরকালের অনন্ত জীবনে! যে জীবনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই! যে জীবনে রয়েছে মাত্র দুটি পথ, (১) জান্নাত (২) জাহান্নাম। রুহ আত্মা এবং মানুষকে পরিশীলিত ও পরিশুদ্ধ করার জন্য নিম্নের কর্মসূচিগুলো নিতান্তই উপকারী ও পালনযোগ্য- ১. ঈমান, ২. তাকওয়া, ৩. তাওবা, ৪. তাওয়াক্কুল, ৫. ইখলাছ, ৬. জিকির, ৭. কোরআন তেলাওয়াত, ৮. সুন্নতে রাসূলুল্লাহর অনুস্মরণ, ৯. নেক আমল করা, ১০. সালাত আদায়, ১১. সিয়াম সাধনা, ১২. যাকাত প্রদান, ১৩. হজ পালন, ১৪. ধৈর্য ধারণ, ১৫. শুকরিয়া আদায় করা, ১৬. আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ, ১৭. পশুত্ব চরিত্র বর্জন, ১৮. নিজেকে স্বাভাবিক রাখা, ১৯. পাপকর্ম থেকে মুক্ত থাকা, ২০. আল্লাহর প্রশংসা করা, ২১. কালেমার দাওয়াত প্রচার করা, ২২. দ্বীনি শিক্ষা অর্জন, ২৩. মা-বাবার সন্তুষ্টি অর্জন, ২৪. মানুষের হক আদায়, ২৫. আল্লাহওয়ালাদের সান্নিধ্য লাভ। মোদ্দাকথা, যারা সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতায়ালার বর্ণনা মতে এবং শেষ নবী বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর দেখানো পথে জীবনযাপন করে ইহকাল ত্যাগ করবেন তার জন্য রয়েছেÑ চিরসুখের ঠিকানা জান্নাত। আর যিনি আল্লাহর বর্ণনার অবাধ্য পথে, আখেরি রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শের বিপরীত তথা গোনাহের কাজ করে পরকালীন জীবনে চলে যাবেন, তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তিসহ চিরকষ্টের ঠিকানা জাহান্নাম। মনে রাখতে হবে আমরা আল্লাহকে না দেখলেও মহান মালিক কিন্তু আমাদের সব দেখেন, এমনকি তিনি অন্ধকার রাতে পিপীলিকা চলাকালীন পায়ের আওয়াজ শোনেন এবং পদচিহ্নও দেখেন! অতএব পারিভাষিক ভাষায় আমরা উল্লেখ করতে পারিÑ “আত্মশুদ্ধি এমন একটি বিষয়, যার দ্বারা রুহ বা আত্মাকে সংশোধন করা হয়, আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় এবং তার মারিফত অর্জন করা সম্ভবপর।” পারতপক্ষে আত্মশুদ্ধি ছাড়া কখনও একটি মানুষ নিঃস্বার্থ, নির্লোভ, নিরহংকারী, দুনিয়াবিমুখ ভালো মানুষ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। প্রকৃত মানুষের সুচিক্রমে যাপিত হোক প্রতিটি মানবাত্মার জীবন। রুহ আত্মা ও মানুষ নিয়ে আলোচনায় প্রতীয়মান হয়, মানুষ রুহ বা আত্মা এবং দেহের সমন্বয়ে গঠিত। একটি অপরটি ছাড়া অচল। আর দেহ মানুষের বাহ্যিক বিষয়। তাই এর অবকাঠামো আমাদের দৃষ্টিতে ভাসে। অথচ এই মানুষের দেহ কেবলমাত্র এই দুনিয়ার জীবনের জন্য। কিন্তু রুহ মানুষের মৌলিকত্ত্ব! আত্মা মানুষের আখিরাতের জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট। আত্মিক চিকিৎসা দৈহিক চিকিৎসার ন্যায় জরুরি। আর এটা বাতিনিভাবে করতে হয়। কেউ যদি আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সে আখিরাতে কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন করতে ব্যর্থ হবে। তাই আত্মার পরিশুদ্ধতা অর্জন করা একান্তভাবে অপরিহার্য একটি বিষয়। রুহের বাস্তবতাই মূলত মানুষের সজীবতা ও সঞ্জিবনী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন