অধ্যক্ষ, এম. জায়েদ হোছাইন ফারুকী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
বিষয়টি অবশ্যই লক্ষণীয়, জয়ীফ হাদীস কোন প্রত্যাখ্যাত হাদীস নয়। ছহীহ অর্থ সনদ বিশুদ্ধ, আর জঈফ সনদ দুর্বল। আবার একই সনদের হাদীস কারো কাছে দুর্বল হলেও আবার কারো কাছে উহা ছহীহ হতে পারে, হয়েছেও তাই। মুয়াল্লাক হাদীস রয়েছে বোখারীতে। আবার মুরছাল রয়েছে মোয়াত্তা মালেকে। এগুলিতে ছহীহর শর্ত ভঙ্গ হয়েছে। তার পরেও রচয়িতা ও বিশ্ব মুসলিম এ হাদীসগুলোকে ছহীহর মধ্যে গণ্য করেছেন।
বিষয়টি সকলের বোধগম্য হওয়ায় দরকার যে, ‘‘ছিহাহ ছেত্তা’’ (৬টি বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ) ছাড়া অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে অসংখ্য ছহীহ হাদীস রয়েছে। যেমন মোছতাদরাক, ইবনে হিব্বান, মাছনাদে আহমদ। ইমাম বোখারীর উক্তি থেকেও তার প্রমাণ পাওয়া যায়। হাদীস সংকলন পরের, ফিকার গবেষণা আগের। এ বিবেচনায় ইমাম আযমের ছাত্রগণ ও গবেষকগণ শত শত বৎসর গবেষণা করে প্রমান করলেন যে প্রসিদ্ধ ৪টি মাযহাবই এসব ছহীহ হাদীসের মাপকাটিতে সঠিক এবং বাস্তব। একটি মাযহাব ও হাদীসের বিপরীতে নয়। এক হাদীসের বিপরীত হলেও অন্য হাদীসের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ অথবা অন্য হাদীসের আলোকে প্রতিষ্ঠিত। ইমাম বুখারীসহ ছিহাহ ছিত্তার ইমামগণতো শাফেয়ী হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন, যদিও তারা স্বতন্ত্র মোজতাহিদ হওয়ার যোগ্য। ইসলাম জগতের সেই মহান ইমামগণ কত বড় শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব তা ভেবেও কূল করা যাবে না। এদের সমপর্যায়ের হাদীস বিশারদ, ফিক্হ বিশেষজ্ঞ আলেম মুজতাহীদ কী পৃথিবীবাসী আজকের এ দুনিয়া উপহার দিতে পারে। ইমাম আযমের ন্যায় একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ ১৩০০ বৎসরে কী জন্মগ্রহণ করেছে। তাই তাদের বাদ দিয়ে আমরা নতুন কাকে অনুকরণ করবো। আমরাতো কুরআন হাদীস অধ্যয়ন করে ইজতেহাদ করার যোগ্যতাই রাখি না। আজকে যে বলা হয় মাযহাব মানার প্রয়োজন নেই। আমরা শুধু কোরআন হাদীস মানবো। কোরআন মানতে হলে একটি গবেষণা মানতে হবে। কারণ হাদীসতো বহুমুখী, বহুরূপী, শুদ্ধাশুদ্ধ, আগ-পর নানা বিষয় রয়েছে। আমরা কার কথা অনুসরণ করবো। যার কথা মানবো তারইতো তাকলীদ হলো। যারা বলে আমরা ‘‘হাদীস ওয়ালা’’ আমরা মাযহাব মানি না, তারা যেই হাদীসগুলি মানেন। যার গ্রন্থের হাদীস মানেন তারইতো অনুকরণ করা হলো, তাকলীদ করা হলো, মানাতো হয়ে গেল। তাহলে ভেবে দেখুন পরবর্তী কালে যাদের কথা শুনে মাযহাব ছাড়ার চিন্তা করলেন, তাদের মাযহাব মতাদর্শ মানলেন এতেইতো তাকলীদ তো হয়ে গেল। আসলে মাযহাব মানবো কেন? যারা মাযহাব মানে তারা বেদআতি ও গোমরাহ। এগুলি উগ্রতা ও ভ্রান্তি। এসব বিভ্রান্তি থেকে আমাদের চিন্তাচেতনা পরিহার করতে হবে। কাউকে কাফের ফতুয়া দেয়া থেকে জবানকে মুক্ত রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠিত ও শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় জীবনবোধই পারে উগ্রপন্থা থেকে উম্মাকে রক্ষা করতে হবে মুমিনের ঈমানের দাবী। একজন হক্কানী আলেম ও জ্ঞানী গুণী জনের জ্ঞানচর্চা। ইসলামকে তার ঐতিহ্য রীতি ও অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য শক্তি দিয়ে এগুতে হবে। কোন দিনই অতীতের ঐতিহ্য ও প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতি ভেঙ্গে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা যাবে না। এভাবে চরম উগ্রতা ও কাদা চূড়া-চূড়ী করে ইসলাম বিরোধী শক্তিকে শক্তিশালী করা হয় মাত্র। হারাম শরীফাইনের বিজ্ঞ ওলামা ও গবেষকগণ মত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও কখনও ওসব মহামনীষী জ্ঞানতাপস, ইসলামী ফকীহ ও মাযহাবী ইমামগণকে তিরস্কার করেনি, বরং স্বশ্রদ্ধ শ্রদ্ধাভরে সম্মান করে আসছেন যুগযুগান্তর থেকে। আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন সৌদী শেখ ও মুফতির সঙ্গে ঘণ্টাকালব্যাপী ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। পরিশেষে তিনি বললেন তোমরা মাযহাবী আলেমগণ ছহীহ হাদীসের উপর আমল করে আসছ। আর আমরাও ছহীহ হাদীসের উপর আমল করে আসছি। আমাদের নিকট আমাদের এ আমল যোগ্য হাদীসটি জোরালো বলে মনে হচ্ছে। আল্লাহ ভালো জানেন। মহান আল্লাহ আমাদের বিশ্বনবী, ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ী, তাবয়ে-তাবেয়ীন, মুজতাহিদ, শতাব্দীর মুজাদ্দিসগণের চিন্তাচেতনা, ব্যাখ্যা মতামতের আলোকে দ্বীন বুঝার-মানার তৌফিক দিন। দ্বীনি ক্ষেত্রে স্বঘোষিত, স্বরচিত, নিজের স্বকীয়, ইচ্ছা চিন্তাচেতনার উপর আমল করা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন