ফিরোজ আহমাদ : পরিচিতি : শাহানশাহ ছৈয়্যদ জিয়াউল হক মাইজভা-ারী (কু.) ১০ পৌষ, ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ; ১২ রজব, ১৩৪৭ হিজরি এবং ২৫ ডিসেম্বর, ১৯২৮ সাল রোজ মঙ্গলবার সুবহে সাদেকের সময় মাইজভা-ার দরবার শরীফ, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রামে আগমন করেন। ১৯৮২ সালের ১২ অক্টোবর রোজ বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ২৭ মিনিটে চট্টগ্রাম শহরের বন্দর হাসপাতালে বেছাল হন। অছিয়ে গাউছূল আজম খাদেমুল ফোকরা শাহ সূফী হজরত ছৈয়্যদ দেলোয়ার হোসাইন মাইজভা-ারী (কু.) তার পিতা। মাইজভা-ারী ত্বরিকার প্রবর্তক হজরত আহমদ উল্লাহ মাইজভা-ারী (কু.) উক্ত বংশের প্রধান পুরুষ।
আল কোরআন ঘিরে জীবন : শাহানশাহ ছৈয়্যদ জিয়াউল হক মাইজভা-ারী (কু.)-এর বাণী ছিল, “হালাল খাও, নামাজ পড়, আল্লাহ আল্লাহ জিকির কর, সব সমস্যা মিটে যাবে”। যে কোন ইবাদত কবুলের পূর্ব শর্ত হালাল রুজি খাওয়া। হালাল রুজি না খেলে আমল-ইবাদত কবুল হবে না। এছাড়া নিজের আত্মার পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হলো হালাল রুজি তালাশ করা। সকল প্রকার বিপদে-আপদে নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা। সর্বদা জিকিরের সাথে থাকা। হালাল খাওয়া, নামাজ পড়া, আল্লাহর জিকির করা ও দুনিয়াবি যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা আল কোরআনের নির্দেশ। শাহানশাহ ছৈয়্যদ জিয়াউল হক মাইজভা-ারী (কু.) নিজের জীবনে আল কোরআনের এ মহামূল্যবান নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছেন এবং ভক্ত আশেকানদের হালাল খাওয়া, নামাজ পড়া ও সর্বদা জিকিরের সাথে থাকার জন্য নির্দেশ করেছেন।
কঠোর রিয়াজত : বাহ্যিক ভোগ-বিলাসকে ধূলোর সাথে মিশিয়ে কঠোর ত্যাগ ও সাধনার জীবন অতিবাহিত করেছেন। মনীষীরা বলেছেন, “এমন জীবন হবে করিতে গঠন, মরিলে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভুবন”। শাহানশাহ ছৈয়্যদ জিয়াউল হক মাইজভা-ারী (কু.) কঠোর রিয়াজতের মাধ্যমে চরিত্রের উন্নয়ন ও আত্মার পবিত্রতা অর্জন করেছিলেন। আল্লাহ সুবহানু তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য কঠোর রিয়াজত সাধনা করেছেন। মাঝে মধ্যে একাধারে ৮-১০ দিন ঘরের দরজা খুলতেন না। হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যেতেন। কাউকে না বলে হঠাৎ মাইজভা-ার থেকে পায়ে হেঁটে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গায় চলে যেতেন। তিনি সব সময় মজ্জুব হালতে চলতেন। পৌষ মাঘের কনকনে শীতের মধ্যে বাড়ির আন্দির পুকুরে দিনের পর দিন ডুবে থাকতেন। কবি নজরুল যথার্থই বলেছেন, “তুমি বুঝিবে না হায়, আলো দিতে পোড়ে কত প্রদীপের প্রাণ”।
মানব সেবা : শাহানশাহ ছৈয়্যদ জিয়াউল হক মাইজভা-ারী (কু.) মানবসেবার ক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-এর মানব সেবার আদর্শ অনুসরণ করেছেন। তিনি সমাজ সেবা ও জনকল্যাণমূলক কাজে অনেক অবদান রেখেছেন। গরিব ও দুঃখী মানুষ দেখলে তিনি বিচলিত হয়ে যেতেন। অকাতরে দুস্থ মানুষদের সহযোগিতা করেছেন। বর্তমানে হজরত শাহানশাহ জিয়াউল হক মাইজভা-ারী (কু.)-এর কর্মময় জীবনকে শিক্ষণীয় করার লক্ষ্যে তার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দাতব্য চিকিৎসালয়, দারিদ্র্য মোচন সহায়তা ও জনকল্যাণ প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পগুলো নিয়ে একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ট্রাস্ট থেকে ১০৩৪ জন দুস্থ ব্যক্তির মধ্যে ২ কোটি ১১ লাখ ২১ হাজার ৯৩০ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ২৭ হাজার দুস্থ ব্যক্তিকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। ১৬০ জন এতিমকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ১ হাজার ৭শ’ ছাত্র-ছাত্রীকে আধুনিক পদ্ধতিতে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে।
চারিত্রিক গুণাবলী : শাহানশাহ ছৈয়্যদ জিয়াউল হক মাইজভা-ারী (কু.)-এর চরিত্রের অনন্য উদারণ হলোÑ রাসূল (সা.)-কে অনুসরণ করা। তিনি নির্বিলাস সাদাসিধে জীবন যাপন করেছেন। তার মতো বিনয় ও উদারতা মানুষের মধ্যে কমই দেখা যায়। শাহানশাহ ছৈয়্যদ জিয়াউল হক মাইজভা-ারী (কু.) পার্থিব জীবনের চেয়ে পরকালীন জীবনকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছেন। সূরা হাদীদ-এর ২০নং আয়াতে বলা হয়েছে, যে পরকাল ছেড়ে পৃথিবীতে মশগুল রয়েছে। তার জন্য পরকালে কঠিন শাস্তি আর বিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ-বিলাস ছাড়া কিছুই নয়। শাহানশাহ ছৈয়্যদ জিয়াউল হক মাইজভা-ারী (কু.)-এর জীবনে পার্থিব মোহ-লোভ-লালসা বলতে কিছুই ছিল না। তিনি বলতেন, “নিজের ভিতর দৃষ্টি দাও, বহির্জগতের চেয়েও অপরূপ সুন্দর দৃশ্যাবলী দেখতে পাবে”।
তাসাউফের প্রচার : ইসলামে আত্মশুদ্ধি অর্জনে তাসাউফের চর্চা অত্যন্ত জরুরি। তাসাউফের চর্চা আপন সত্তাকে চিনতে সহায়তা করে। তাসাউফের চর্চার সুবিধার্থে শাহানশাহ ছৈয়্যদ জিয়াউল হক মাইজভা-ারী (কু.) ট্রাস্ট কর্তৃক প্রতি মাসে একটি তাসাউফভিত্তিক গবেষণাধর্মী মাসিক পত্রিকা “আলোক ধারা” নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে। মাইজভা-ারী ত্বরিকা ও সূফী মতাদর্শ জানার সুবিধার্থে জাতীয় প্রেসক্লাব লাইব্রেরি, জাতীয় গ্রন্থাগার, বায়তুল মোকাররম ইসলামিক ফাউন্ডেশন লাইব্রেরি, অন্যান্য পাঠাগার, পত্রিকার স্টল ও বিভিন্ন গ্রন্থাগারে আলোক ধারা পত্রিকা সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
মাইজভা-ারী একাডেমি প্রতিষ্ঠা : শাহানশাহ ছৈয়্যদ জিয়াউল হক মাইজভা-ারী (কু.) আমাদের মধ্যে দৈহিকভাবে নেই। কিন্তু তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের আদর্শ রেখে গেছেন। মাইজভা-ারী দর্শন ও সূফী মতাদর্শ বুঝার সুবিধার্থে ২০০২ সালে একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেখানে সূফী দর্শনের অনেক প্রকাশনা রয়েছে।
জিয়ারত : কবি নজরুলের ভাষা, “আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেব না ভুলিতে”। তিনি জাগতিকভাবে আমাদের মধ্যে নেই। তবুও মাইজভা-ার দরবার শরীফ, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রামে প্রতিদিন অসংখ্য ভক্ত আশেকান দেশে বিদেশ থেকে শাহানশাহ ছৈয়্যদ জিয়াউল হক মাইজভা-ারী (কু.) মাজার শরীফ জিয়ারতের জন্য আসেন। তার বার্ষিক উরসের সময় মাইজভা-ারে তিলধারণের ঠাঁই থাকে না।
ঠিকানা : ১২/১ পুরানা পল্টন, ৩য় তলা, ঢাকা-১০০০। মোবাইল : ০১৬৭৭-৪৫৪৭৬৩।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন