শিগগিরই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা প্রকাশ করবেন খালেদা জিয়া
সহায়ক সরকারের দাবিতে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে ২০ দলের আন্দোলন
রফিক মুহাম্মদ : দল গোছানোর পাশাপাশি বিএনপিতে চলছে আগামী নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সম্প্রতি দলের সিনিয়র নেতাদের সাথে বৈঠক করে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন গঠন এবং দল ও জোটের পরবর্তী করনীয় নির্ধারণ করতে বিএনপি চেয়ারপার্সন গত ৪ ফেব্রæয়ারি দলের সর্বোচ্চ ফোরাম স্থায়ী কমিটির সাথে বৈঠক করেন। পরদিন দলের ভাইস চেয়ারম্যানদের সাথে এবং ৬ ফেব্রæয়ারি ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেন। ৭ ফেব্রæয়ারি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদসহ সিনিয়র নেতাদের সাথে বেগম খালেদা জিয়া বৈঠক করেছেন। দলীয় সূত্র জানায়, এসব বৈঠকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত অলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে। সব বিষয় সার্বিক পর্যালোচনার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন সবাইকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। দলের চেয়ারপার্সনের এই নির্দেশ ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। দল পুর্নগঠনের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। চেয়ারপার্সনের গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। দলের চেয়ারপার্সন আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কী না এ নিয়ে গত কিছুদিন ধরে সর্বত্রই আলোচনা চলছিল। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হবে এবং আগামী নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারবেন না এমন ‘সাজানো ও পরিকল্পিত রিপোর্ট’ কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এতে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছু দ্বিধা-দ্ব›েদ্বর সৃষ্টি হয়। নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা হতাশাও নেমে আসে। তবে ‘বিএনপি চেয়ারপার্সনকে সাজা দিয়ে জেলে আটক করার পরিকল্পনা সরকারের নেই’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক এমন বক্তব্যে নেতাকর্মীদের মনের মেঘ কিছুটা দূর হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নেয়ার জন্য চেয়ারপার্সনের নির্দেশনা পাওয়ার পর তাদের হতাশা একেবারেই কেটে গেছে। ফিরে এসেছে আস্থা এবং আত্মবিশ্বাস।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তোড়জোর শুরু করেছে। ক্ষমতাসীন দলের অনেক মন্ত্রীর মুখে এখন নির্বাচনের কথা শোনা যাচ্ছে। বিএনপি এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে। বিএনপিতেও নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। বিএনপির এ নেতা বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকার নানামুখী চক্রান্ত ষড়যন্ত্রও করতে পারে। তারা বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায়। তাদের এ অপচেষ্টা কিছুতেই সফল হবে না। গত আট-নয় বছর ধরে এ সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর নানান অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। গুম, খুন, হামলা মামলা এসব করেও বিএনপিতে ভাঙন ধরাতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্য এখন সুদৃঢ়। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে বিপুল বিজয় ছিনিয়ে আনতে সবাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল ডেমক্রেটিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুদ্দিন মণি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ২০ দলীয় জোট নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুত। তবে আমরা চাই জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে এমন একটা নির্বাচন। ‘যার সাথে সরকার বিজয় হবে তার’ আওয়ামী লীগের এই নীতির নির্বাচন আমরা হতে দেব না। ‘জনগণ সাথে যার বিজয় হবে তার’ আমরা এমন নির্বাচন চাই। আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব এর প্রতিফলন যাতে হয় সে পরিবেশ এবং সে রকম সহায়ক সরকার হলে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। ২০ দলীয় জোটে সে রকম প্রস্তুতি চলছে।
নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে আপত্তি থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে এখনই কোন আন্দোলনে যাচ্ছে না বিএনপি। দলটির বর্তমান টার্গেট হচ্ছে নির্বাচন কালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করা। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আদলে না হলেও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার নতুন রূপরেখা খুব শিগগিরই বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রকাশ করবেন। এ রূপরেখা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও পাঠানো হতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের যে রূপরেখা প্রকাশ করবেন তা নিয়ে ২০ দলীয় জোট আন্দোলনে যাবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি নির্বচনের জন্য প্রস্তুত। তবে দলীয় সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না। অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন। ২০ দলীয় জোটসহ অন্যান্য অনেক রাজনৈতিক দলের দাবি নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের। এ দাবি আদায়ে এবার আমরা মাঠে নামবো। রিজভী বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন যিনি বারবার অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে অর্গলমুক্ত করেছেন, এবারও তিনি জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করবেন। গণতন্ত্রকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করবেন। সরকার নানা ছল-চাতুরির আশ্রয় নেবে। চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করবে। দমন-পীড়ন চালাবে। তারপরও এ সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী আজ ঐক্যবদ্ধ। জনগণকে সাথে নিয়ে সবকিছু মোকাবেলা করতে তারা প্রস্তুত। বিএনপির চেয়ারপার্সনকে দলকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারবে না। আগামী জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হতে হবে। সরকারের অশুভ কোনো পরিকল্পনা আর বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিএনপির জেলা পর্যায়ের নেতারা এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে চলছে তাদের মতবিনিময়। এই মতবিনিময়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতির নির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকারের নিপীড়ন নির্যাতনের ফলে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী অনেকটা বিপর্যস্ত। জেলা উপজেলা এমনকি অনেক ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে ডজন ডজন মামলা। নেতাকর্মীরা অনেকে বাড়ি থাকতে পারছেন না। এর মধ্যে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীর সাথে কেন্দ্রীয় নেতারা মতবিনিময় করছেন। তাদের সাথে আলোচনা করে এলাকার ৫ জন জনপ্রিয় নির্ভর যোগ্য নেতাদের তালিকা তৈরী করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দল পুর্নগঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, নানান প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে আমরা দল পুনর্গঠনের কাজ করছি। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা, রয়েছে সরকারের প্রতিবন্ধকতা। তারপরও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন