বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি : কিছু কথা

দিক দর্শন

| প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
বরং সিরাতে মুস্তাকিম এই দুই পথ থেকে ভিন্ন এমন একটি পথ, যা ভারসাম্য ও মধ্যমপন্থার দিশা দেয়।
ইসলাম ধর্ম যেভাবে মুতাদিল তথা ভারসাম্যপূর্ণ মাজহাব, তেমনি মুসলিমজাতিও মধ্যমপন্থী জাতি। কোরআনে কারিমেও এই সম্মানিত উম্মতকে মধ্যমপন্থি সাব্যস্ত করা হয়েছে। কেননা এরাই এই ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যমপন্থার ধর্ম ইসলামের অনুসারী। এরশাদ হচ্ছে ‘আর এভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী জাতি বানিয়েছি।’ (সূরা বাকারা : ১৪৩)।
মধ্যমপন্থী জাতির অর্থ হলো ভারসাম্যপূর্ণ উম্মত। আর তাদের এই ভারসাম্যতা আকিদা ও দৃষ্টিকোণের ক্ষেত্রেও রয়েছে, ইবাদত ও আমলের ক্ষেত্রেও রয়েছে, মুয়াশারা-সংস্কৃতি ও লেনদেনের মাঝেও রয়েছে, চারিত্রিকতা ও রাজনীতির মাঝেও রয়েছে।
ইমামদের দৃষ্টিতে ইসলাম মধ্যমপন্থা হবার ব্যাখ্যা
১. ইমামুত তাফসির আল্লামা জারির আত তিবরি (রহ.) বলেন, ‘আমার মতে মধ্যমপন্থা দ্বারা এমন মধ্যমপন্থী হওয়া উদ্দেশ্য যা দুটো দিকের মধ্যবর্তী অর্থে ব্যবহৃত। আর আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মদিয়াকে মধ্যমপন্থী হবার যে বিশেষত্ব দান করেছেন তা তাদের ধর্মে ভারসাম্যপূর্ণ হবার ফলেই। তাই মুসলমান খৃস্টানদের মতো বাড়াবাড়ি করেন না, যারা পাদ্রীত্বে এবং হজরত ঈসা (আ.)-এর ব্যাপারে প্রশংসা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ির শিকার হয়েছেন। মুসলমান ইহুদিদের মতোও ধর্মের বিধিবিধান থেকে কম করেনও না। যারা আল্লাহ তায়ালার পবিত্র গ্রন্থ তাওরাতের পরিবর্তন করেছেন, হজরত আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.)-কে হত্যা করেছেন, নিজেদের সৃষ্টিকর্তার ওপর মিত্থে শপথ করেছেন এবং পরে তা অস্বীকারও করে বসেছেন। বিপরীতে উম্মতে মুহাম্মদিয়া তো নিজেদের ধর্ম ইসলামের ব্যাপারে মধ্যমপন্থা ও ভারসাম্যতা অবলম্বনকারী। তাই আল্লাহ তায়ালা এদেরকে এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমÐিত করেছেন। কেননা আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় কাজ সেটাই, যা মধ্যমপন্থার হয়।’ (জামিউল বয়ান : ৩/১৪২)।
২. হজরতুল আল্লাম শায়খ আবদুর রহমান বিন নাসির আস সাদি (রহ.) এই মধ্যমপন্থী হবার আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যমপন্থী উম্মত বানিয়েছি। অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে ভারসাম্যপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে বানিয়েছি।
আর মধ্যম ও মাঝামাঝি বিষয়ের বিপরীতে যা হয়, তা সংশ্লিষ্ট বস্তুর কোনো একটি কিনারা ও দিক হয়ে থাকে। যাতে বিপদ ও হেলে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই আল্লাহ তায়ালা এই উম্মতকে ধর্মের যাবতীয় বিষয়ে মধ্যমপন্থী ও ভারসাম্যপূর্ণ জাতি হিসেবে বানিয়েছেন। হজরত আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.)-এর ব্যাপার বাড়াবাড়িকারী খৃস্টান এবং তাদের ব্যাপারে হ্রাসকারী ইহুদিস¤প্রদায়ের মাঝে এই মুসলিমউম্মাহ মধ্যমপন্থী ও ভারসাম্যপূর্ণ। কারণ ইহুদি-খৃস্টান নবীদের ওপর নিজেদের মনমতো পথপন্থায় ইমান আনতো। এই উম্মত শরিয়ত-বিধিবিধানেও মধ্যমপন্থী এভাবে, মুসলমানদের মাঝে না ইহুদিদের মতো কোনো ধর্মীয় কঠোরতা ও জোরজবরদস্তি রয়েছে, আর না খৃস্টানদের মতো কোনো বেপরোয়া হাবভাব রয়েছে। এই উম্মত পবিত্রতা অর্জন এবং পানাহারের ক্ষেত্রেও মধ্যমপন্থী। এরা ইহুদিদের মতো নয়। যাদের নামাজ কেবল ইবাদতের জায়গাতেই শুদ্ধ হতো। আর জল অপবিত্রতা থেকে তাদেরকে পবিত্র করতো না। শাস্তিস্বরূপ তাদের জন্য পবিত্র বস্তু নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। আর মুসলিমউম্মাহ খৃস্টানদের মতোও নয়। যাদের ধর্মে কোনো বস্তু অপবিত্রই হতো না। আর না তারা কোনো বস্তুকে নিষিদ্ধ মনে করতো। বরং তারা প্রতিটা জীবিত, মৃত বস্তুকে বৈধ মনে করতো। অথচ উম্মতে মুহাম্মদিয়ার জন্য পবিত্রতা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য পানাহার, পরিধানের বস্ত্রাদি, বিবাহের জন্য পবিত্র বস্তুকে বৈধ করে দিয়েছেন। আর অপবিত্র, নোংরা বস্তুকে নিষিদ্ধ করেছেন। তাই এই উম্মতের ধর্ম পূর্ণাঙ্গ, চরিত্র উচ্চমার্গীয় এবং কাজকর্ম সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (তাফসিরে সাদি : ১/৭০)।
ভারসাম্যতার অর্থ কী? ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহের মাঝে ভারসাম্যতাকে পূর্ণতা হিসেবে কেনো সাব্যস্ত করা হলো? বিষয়টি এভাবে বোঝা যায়, ভারসাম্যতা বলা হয় মূলত কোনো কিছু তার নির্ধারিত পরিমাপে রাখার নামকে। প্রতিটা বস্তু তার কমবেশি, ক্ষতি, লোকসান থেকে পূর্ণ বিরত থেকে বহাল থাকা। এর নামই সৌন্দর্য যা অঙ্গপ্রতঙ্গের মাঝে মিলিত হয়। তবে যদি মিলের বদলে অমিল ও ভারসাম্যহীন হয়, তাহলে তাকে অসৌন্দর্য বলে। যেমন কারোর নাক যদি পরিমাণের চেয়ে বেশি লম্বা বা ছোট হয়, কান যদি খরগোশের মতো বড় বড় বা ছোট ছোট হয়, গায়ের রঙ যদি অন্যরকম হয়, দাঁত যদি বড় বড় হয়, ঠোঁট যদি মোটা মোটা হয়, চোখ যদি ছোট বা পরিমাণের চেয়ে বড় হয়, তাহলে এসব ভারসাম্যহীনতা ও অমিল মানুষকে সৌন্দর্য থেকে দূরে সরিয়ে ফেলে। এভাবে ইসলামি শরিয়তে যাবতীয় বিধিবিধান ও শিক্ষাদীক্ষা খুব ভারসাম্যপূর্ণ। নিজ নিজ স্থানে যথার্থ। তাই এর পূর্ণতা এতেই যে, তাকে তার নিজ আদলে বহাল রাখা হবে। যদি এর চেয়ে খানিকটাও কমবেশি করা হয়, পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা হয়, তাহলে তার সৌন্দর্য শেষ হয়ে যাবে। এর আরেকটি উদাহরণ হজরত মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.) এভাবে দেন, ‘পৃথিবীর যতো নতুন, পুরোনো পন্থা দৈহিক সুস্থতা ও চিকিৎসার জন্য রয়েছে (যেমন ইউনানি, ভেদ, অ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক), সবগুলিই ঐকমত্য মানুষের শারীরিক সুস্থতা মেজাজের ভারসাম্যতার ওপর নির্ভর করে। আর যেখানেই এই ভারসাম্য কোনোভাবেই হ্রাস পাবে, সেটাই মানবদেহের অসুস্থতা। বিশেষকরে ইউনানি চিকিৎসাবিদ্যার মৌলিক নীতিমালাই হচ্ছে মেজাজ বোঝার ওপর নির্ভরশীল। মানবদেহ চার অংশের (রক্ত, গাঢ় কফ, হালকা কফ, পিত্ত) সঙ্গে মিলিত। এই চারটে থেকে সৃষ্টি হয় চারটে পদ্ধতি। মানবদেহের জন্য প্রয়োজন হলো উষ্ণতা, শীতলতা, আদ্রতা, শুষ্কতা। যতক্ষণ পর্যন্ত এই চার পদ্ধতি মানবস্বভাবের সামঞ্জস্যশীল সীমায় ভারসাম্যপূর্ণভাবে বহাল থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে সুস্থ ও সুস্বাস্থের অধিকারী বলা হবে। আর যখন এর মধ্য হতে কোনো একটি মানবস্বভাবের সীমারেখা অতিক্রম করবে বা সীমা থেকে হ্রাস পাবে, তাকে অসুস্থতা ধরা হবে। যদি তার সংশোধন ও চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে একটা সীমায় পৌঁছে এটাই মানবদেহের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই অনুভূতিপূর্ণ উদাহরণের পর আত্মিক, চারিত্রিকতার দিকে দৃষ্টি রাখলে অনায়েসেই বোঝা যায় এতেও ভারসাম্য ও ভারসাম্যহীনতার এমন পদ্ধতি রয়েছে। এর ভারসাম্যতার নাম আত্মিক সুস্থতা, আর ভারসাম্যহীনতার নাম আত্মিক ও চারিত্রিক অসুস্থতা। আর এই অসুস্থতার চিকিৎসা করে যদি পূর্ণ ভারসাম্যের ওপর না আনা হয়, তাহলে তার ফলাফল আত্মিকমৃত্যু।’ (মাআরিফুল কোরআন : ১/৩৬৬-৩৬৭)। আলোচিত উদাহরণ দুটির মাধ্যমে দুটো কথা স্পষ্ট হয় ১. বাহ্য সৌন্দর্য এবং ভেতরগত সুস্থতা দুটোই ভারসাম্যতার নাম। যখন ভারসাম্য না থাকবে, তখন না বাহ্য সৌন্দর্য অবশিষ্ট থাকবে, আর না-ই বা ভেতরগত সুস্থতা বিদ্যমান থাকবে। ২. ইসলামও এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ মাজহাব, যার শিক্ষাদীক্ষায় কোনো ভারসাম্যহীনতা নেই। বরং এর প্রতিটা বিধিবিধান, শিক্ষাদীক্ষা এমনভাবে নিজ স্থানে যথাযথভাবে বিদ্যমান, এর থেকে সামান্যও যদি সরে যায়, তাহলে তার সৌন্দর্য শেষ হয়ে যাবে; রশ্মি বিলীন হয়ে যাবে। তেমনিভাবে এই উম্মতও ভারসাম্যপূর্ণ জাতি। যাদের সৌন্দর্য মূলত এই মধ্যমপন্থী ও ভারসাম্যপূর্ণ হওয়ার মাঝেই। যা সিরাতে মুস্তাকিম ও সম্মানের পথের ওপর বিদ্যমান। না হয় তো তাদের সমস্ত সৌন্দর্য-পূর্ণতা শেষ হয়ে যাবে। তারা অসৌন্দর্য ও নিকৃষ্ট জাতির মাঝে গণ্য হতে থাকবে। তাই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা, খানিকটা হলেও কমবেশি করা থেকে বিরত থাকা চাই। এতেই ইসলাম ও মুসলমানের সৌন্দর্য ও পূর্ণতা। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির ফল সিরাতে মুস্তাকিম থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা এ কথাটি স্পষ্ট হলো, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করাটা মূলত ইসলামের পথ ও সিরাতে মুস্তাকিম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার নাম। কেননা যখন কোনো ব্যক্তি দীন ও শরিয়তের সীমাতিক্রম করে ফেলে, তখন তার দীন নিজ অবস্থায় আর কোথায় অবশিষ্ট রইলো? রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা সিরাতে মুস্তাকিমের একটি চমৎকার উদাহরণ পেশ করেছেন। তা হলো, একটি পথের দু’দিকে দুটি দেয়াল রয়েছে।
খোলা দরোজাও রয়েছে দুটি। পর্দা রাখা আছে তার ওপর। সেই পথে চলার জন্য একজন আহŸানকারী রয়েছে। যে সবাইকে ডেকে ডেকে বলছে, ‘লোকসকল! সিরাতে মুস্তাকিমের ওপর চলো। এদিকওদিক ঝুঁকিও না।’ আরেক আহŸানকারী পথের ওপরই মিলবে। তোমাদের মাঝে যখন কেউ সেই দরোজাগুলির মধ্য হতে কোনো একটি দরোজা খুলতে চাইবে, তখন সে বলবে ‘তোমার ভালো হবে, যদি দরোজাগুলি না খোলো। কেননা যদি খোলো, তাহলে হয়তো ভেতরে ঢুকে পড়বে। (যা নিষিদ্ধ)।’ রাসূল (সা.) বলেন, ‘পথ দ্বারা ইসলামের পথ, পর্দা দ্বারা আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা, খোলা দরোজা দ্বারা আল্লাহর নিষেধ করা বস্তু, আর সেই পথে আহŸানকারী দ্বারা আল্লাহর কিতাব, আর তার থেকে ওপরের আহŸানকারী দ্বারা আল্লাহর পথে উপদেশদাতা উদ্দেশ্য। যিনি প্রত্যেক মুমিনের অন্তরে আল্লাহর স্মরণ জাগাতে থাকেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৭৬৭১, মুসতাদরাকে হাকিম : ২৪৫, মুশকিলুল আসার : ৫/১৭০, আসসুন্নাতু লিইবনি আবি আসিম : ১৯, আসসুন্নাতু লিল মারুজি : ১৭)।
এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায় সিরাতে মুস্তাকিম এমন একটি পথ, যার দু’দিকে দেয়াল রয়েছে। আর সেই দেয়ালের মাঝে দরোজা রয়েছে। যার ওপর পর্দা রাখা আছে। এই দরোজাটি নিষিদ্ধ দরোজা। তা খোলার মাধ্যমে মানুষের জন্য সেই নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হবার আশঙ্কা রয়েছে। সেজন্য আল্লাহর ফেরেশতা যিনি আহŸানকারীরূপে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন, তিনি বলেন ‘একে খুলো না। না হয় এতে ঢুকে পড়বে।’ বোঝা গেল, সিরাতে মুস্তাকিম কমবেশি করা থেকে মুক্ত একটি মধ্যমপন্থার নাম। আর সিরাতে মুস্তাকিমই এমন পথের নাম, যা আঁকাবাঁকা হবে না, পরিষ্কার সহজ সরল হবে। ইমাম তাবারি রহ. বলেন, ‘সিরাতে মুস্তাকিম সেই সুস্পষ্ট পথ, যাতে কোনো আঁকাবাঁকা হবে না। এটি আরবি ভাষাভাষী সবার পরিভাষা। উম্মতের সমস্ত মুফাসসিরে কেরাম এ ব্যাপারে একমত’ (জামিউল বয়ান : ১/৩৭)।
কেউ যদি সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তকালে নামাজে দাঁড়ায় আর তার এই কাজটি শরিয়তসম্মত বলে দাবি করে তাহলে এটাকে ধর্মের কাজ বলা হবে নাকি ধর্মহীন বলা হবে? এমনিভাবে যদি কেউ নামাজের রাকাতে কমবেশি করে নামাজ আদায় করে, তাহলে কী এটা সেই নামাজ হবে যা আমাদের ধর্মে রয়েছে নাকি মনগড়া কিছু একটা করা হবে? ধর্মে যেসব জিনিসের কোনো অস্তিত্ব নেই, এমন কোনো বিষয় যদি কোনো ব্যক্তি নিজের তরফ থেকে ধর্মের নামে চালিয়ে দেয়, তাহলে কেবল দীন নাম দেবার ফলেই তাকে দীনের কাজ বলা হবে নাকি তাকে ধর্মহীন কাÐ সাব্যস্ত করা হবে? তার নাম ধর্ম বা ধর্মহীন বলা হবে না, বরং সে ধর্মের বিপরীত করেছে বলা হবে। বিষয়টি বোদ্ধাজনের কাছে অতি সুস্পষ্ট। তাই ধর্মে নিজের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের কমবেশি করাটা চরম পর্যায়ের সীমালঙ্ঘন। মূলত এই কাজের নামই গুলু ফিদ্দিন তথা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা। যা সঠিক পথ থেকে মানুষকে দূর করে দেয়। এর একটি অনুভূতিপূর্ণ উদাহরণ এমন ট্রেনের নির্ধারিত একটি পথ ও সীমারেখা আছে। যার ওপর ট্রেন চলতে থাকে। যখন সোজা এই পাতের ওপরই ট্রেনটি চলতে থাকবে, তখন লক্ষ্য পথে পৌঁছুতে পারবে। আর যখনই সেই পাত থেকে খানিকটা এদিকওদিক লাইনচ্যুত হবে, অমনিই ট্রেনটি দুর্ঘটনার শিকার হবে। মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছুতে পারবে না। আর তখন আমরা গাড়িটি নিজের সঠিক পথে রয়েছে বলে গণ্যও করি না। ঠিক এভাবেই যখন মানুষ ইসলামের নির্ধারিত পথ সিরাতে মুস্তাকিমের ওপর চলতে থাকে, খানিকটাও এদিকওদিক না করে, তখন সে সোজা তার উদ্দেশ্যিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে সক্ষম হতে পারে। অন্যথায় যখনই সামান্যও ওলটপালট করে ফেলে, তখন সে মঞ্জিলে মকসুদ থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে থাকে। এভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে সে দূরে যাবার ফলে নিজের মঞ্জিলে মকসুদ একদিন ভুলে যেতে বসে।
আরেকটি কথা লক্ষ্যণীয় রেলগাড়ি নিজের পাত থেকে যখন লাইন বদলায়, তখন প্রথমেই দূরে সরে যাবে বলে মনে হয় না কিংবা দূরে সরে যেতে পারে না। বরং ধীরে ধীরে সরে যেতে যেতে একসময় একেবারে লাইনচ্যুত হয়, তখন নিজের উদ্দেশিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারে না। এমনকি লাইন হারিয়ে কখনও উত্তর থেকে দক্ষিণে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে চলে যেতে থাকে। চরম দুর্ঘটনার শিকার হয় শেষমেশ। তেমনিভাবে ইসলামের সঠিক পথ সিরাতে মুস্তাকিম থেকে যারা দূরে সরে যেতে থাকে, তাদেরকে প্রাথমিকপর্যায়ে খুব একটা বেশি দূরে গেছে বলে মনে হয় না। অর্থাৎ খানিকটা বাড়াবাড়ি করে শুরু শুরুতে। একটু একটু বাড়াবাড়ি করতে দেখা যায় ধর্ম নিয়ে। কিন্থ একদিন সেই বিন্দু বিন্দু থেকে গড়ে ওঠে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবার বড় বড় সিন্ধু। দেখতে দেখতেই তারা সিরাতে মুস্তাকিম থেকে দূরবহুদূরে সরে যায়। সুতরাং ধর্ম নিয়ে কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি নয়, বরং ধর্মকে ধর্মের হুবহু স্থানে রেখে সিরাতে মুস্তাকিমের ওপর জীবনযাপন করা চাই। মহামহিম আমাদেরকে সেই তৌফিক দান করুন।
লেখক: শিক্ষার্থী, দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন