কানাডার ফেডারেল কোর্টের মূল্যায়ন
ইনকিলাব ডেস্ক : বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল ‘বিএনপি’ সন্ত্রাসবাদের সাথে যুক্ত ছিল, আছে এবং থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন কানাডার ফেডারেল কোর্ট। স্বেচ্ছাসেবক দলের জুয়েল হোসেন গাজী নামের এক সদস্যের কানাডা ইমিগ্রেশনের রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন করলে তা বাতিল করে দিয়ে কানাডার আদালত এ মত দেয়। এর আগে কানাডার ইমিগ্রেশন পুলিশও একই কারণ দেখিয়ে জুয়েলের আশ্রয় বাতিল ঘোষণা করে।
এরপর জুয়েল আবার জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে আপিল আবেদন করেন। কিন্তু ফেডারেল কোর্টের বিচারপতি হেনরি এস ব্রাউন ইমিগ্রেশন পুলিশের সাথে একমত হয়ে বাতিল সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, হরতালের সময় যে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য হয়েছে দলটির সদস্যরা যে তার সাথে যুক্ত নয় তা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি।
কানাডাভিত্তিক বাংলা নিউজ পোর্টাল নতুনদেশ ডটকম জানিয়েছে, কানাডা সরকার বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেনি বলে আবেদনকারীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে আদালত বলেন, ‘তালিকাভুক্তি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। এটি কানাডার গভর্নর কাউন্সিল ঠিক করে। এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইস্যু জড়িত থাকে। আমি এই যুক্তি গ্রহণ করছি না’।
কানাডা তালিকাভুক্ত করেনি বলেই ইমিগ্রেশন অফিসার বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন নাÑ এমন কোনো যুক্তিও এই মামলায় আসেনি। ফেডারেল আদালতের বিচারক হেনরি এস ব্রাউন গত ২৫ জানুয়ারি মামলাটির রায় ঘোষণা করেন। জুডিশিয়াল রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি, বিএনপির পরিচালিত লাগাতার হরতাল এবং হরতালকে কেন্দ্র করে পরিচালিত সন্ত্রাসী তৎপরতা সম্পর্কে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
মোহাম্মাদ জুয়েল হোসেন গাজী নামে ঢাকার মিরপুরের স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ হওয়ার পর তিনি ফেডারেল কোর্টে জুডিশিয়াল রিভিউ আবেদন করেছিলেন।
রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল তাকে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে প্রথম পর্যায়ের অনুমোদন দেয়া হলেও ২০১৬ সালের ১৬ মে তাকে কানাডায় প্রবেশের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। বিএনপির সদস্য হওয়ায় তাকে কানাডায় প্রবেশের অনুপযুক্ত ঘোষণা করে বলা হয়, ‘বিএনপি সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিল, লিপ্ত আছে বা লিপ্ত থাকবেÑ এটি বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে’।
এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কানাডার ক্রিমিনাল কোডের ধারা তুলে ধরে বলেন, ‘বিএনপির ডাকা হরতাল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বিএনপি কর্মীদের হাতে মালামালের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও মৃত্যু এবং আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। আমি লক্ষ্য করেছি অতীতে কোনো কোন ঘটনায় বিএনপির নেতৃত্ব নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে এবং সন্ত্রাসী তৎপরতার নিন্দা করেছে। কিন্তু বিএনপির দাবি দাওয়া সরকারকে মানতে বাধ্য করতে লাগাতার হরতালের কারণে সৃষ্ট সহিংসতা প্রমাণ করে, এটি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বাইরে চলে গেছে’।
জুডিশিয়াল রিভিউ’র নিষ্পত্তি করতে গিয়ে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক উল্লেখ করে বিচারক হেনরি এস ব্রাউন বলেন, কানাডার আইনে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের যে সংজ্ঞা দেয়া আছে তার আলোকে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই ওই কর্মকর্তা উপসংহারে পৌঁছেছেন।
‘বাংলাদেশের সব সন্ত্রাসীই বড় দুটি দলের সাথে সম্পৃক্ত, তারা হয় আওয়ামী লীগ না হয় বিএনপি’ আবেদনকারীর এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন কি-না এই প্রশ্নে অফিসার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী সংগঠন কি-না সে প্রশ্ন বিবেচনার জন্য আদালতের সামনে নেই’।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন