দাম বৃদ্ধির খড়গ দুই ধাপে চাপল জনগণের কাঁধে : কার্যকর ১ মার্চ ও ১ জুন
বিশেষ সংবাদদাতা : সরকার আবারো আরেক দফা গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। নতুন করে এই দাম বৃদ্ধির খড়গ জনগণের কাঁধে দুই ধাপে চাপানো হয়েছে। প্রথম ধাপের অর্ধেক ১লা মার্চ এবং বাকি অর্ধেক ১লা জুন ২০১৭ থেকে কার্যকর হবে। গড়ে এই দাম বাড়ানো হয়েছে ২২ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
এতে করে আবাসিকে এক চুলায় গড়ে ৫০ ভাগ এবং দুই চুলায় গড়ে ৪৬ ভাগ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয়েছে আবাসিকের মিটার ব্যবহারকারীদের। মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের দাম বেড়েছে গড়ে ৬০ ভাগ।
গৃহস্থালি খাতে প্রথম দফায় আগামী ১ মার্চ থেকে এক চুলার মাসিক বিল ৭৫০ টাকা ও দুই চুলার ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় আগামী ১ জুন থেকে মাসিক বিল এক চুলার ক্ষেত্রে ৯০০ টাকা ও দুই চুলার ক্ষেত্রে ৯৫০ টাকা ধার্য করা হয়েছে।
এ ছাড়া সিএনজির দাম ১ মার্চ থেকে প্রতি ঘন মিটার হবে ৩৮ টাকা ও ১ জুন থেকে হবে ৪০ টাকা। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার কারখানা, শিল্প, বাণিজ্যিক, চা-বাগান প্রভৃতি সব ক্ষেত্রেই গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবাসিকসহ কয়েকটি শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। বর্তমানে দুই চুলার বিল ৬৫০ এবং এক চুলার বিল ৬০০ টাকা দিচ্ছেন গ্রাহকেরা। ওই সময়ের আগে দুই চুলায় ৪৫০ ও এক চুলায় ৪০০ টাকা দিতেন গ্রাহকরা। এ ছাড়া সব গ্রাহকশ্রেণির ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম সর্বশেষ বাড়ানো হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে।
গত বছর গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য পেট্রোবাংলার প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়। সেখানে আবাসিকে ২ চুলার জন্য মাসিক বিল ১ হাজার ২০০ টাকা, ১ চুলার জন্য ১ হাজার ১০০ টাকা করার প্রস্তাব করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে এই খাত থেকে সরকারের বছরে ৪ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা আয় বাড়বে বিইআরসি জানায়। তবে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জানায়, এমনিতেই বিতরণ কোম্পানিগুলো এখন লাভে আছে। নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর এই লাভ আরও বাড়বে।
বিইআরসি গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকালে নিজস্ব কার্যালয়ে গ্যাসের নতুন এই দাম ঘোষণা করে। নতুন দাম ঘোষণা করার সময় বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, জ্বালানি ব্যবহারে বৈষম্য কমাতে দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে সহনীয় পর্যায়ের এই মূল্য বৃদ্ধি জীবনযাত্রার মানে তেমন প্রভাব ফেলবে না।
অপরদিকে, দেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গ্যাস মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও একধাপ বেড়ে যাবে। নি¤œ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষগুলোকে জীবন চালাতে হিমশিম খেতে হবে। বেড়ে যাবে শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়। পরিবহন ভাড়া বাড়বে। যার বিরূপ প্রভাব পড়বে অর্থনীতির সকল সূচকে।
গ্যাস দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে আরও বলা হয়, বিদ্যুতে প্রতি ঘনমিটার ছিল ২টাকা ৮২ পয়সা। নতুন মূল্য বৃদ্ধিতে গ্যাসের দাম প্রথম ধাপে ২ টাকা ৮২ পয়সা এবং দ্বিতীয় ধাপে ৩ টাকা ১৬ পয়সা করা হয়েছে। একইভাবে সার এখন আছে ২ টাকা ৫৮ পয়সা। এখন প্রথম ধাপে ২ টাকা ৬৪ পয়সা দ্বিতীয় ধাপে ২ টাকা ৭১ পয়সা বাড়বে।
শিল্পে এখন আছে ৬ টাকা ৭৪ পয়সা। এখন প্রথম ধাপে ৭ টাকা ২৪ পয়সা দ্বিতীয় ধাপে ৭ টাকা ৭৬ পয়সা বৃদ্ধি পাবে। একইভাবে চা বাগানে এখন আছে ৬ টাকা ৪৫ পয়সা। নতুন মূল্য তালিকায় প্রথম ধাপে ৬ টাকা ৯৩ পয়সা দ্বিতীয় ধাপে ৭ টাকা ৪২ পয়সা বাড়বে।
বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এখন আছে ১১ টাকা ৩৫ পয়সা। নতুন দাম অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৪ টাকা ২০ পয়সা এবং দ্বিতীয় ধাপে ১৭ টাকা ০৪ পয়সা বাড়বে।
ক্রমান্বয়ে দ্বিতীয় ধাপে বিদ্যুৎ ৩ টাকা ১৬ পয়সা, ক্যাপটিভ পাওয়ার ৯ টাকা ২২ পয়সা, শিল্প খাত ৭ টাকা ৭৬ পয়সা বাণিজ্যিক ১৭ টাকা ৪ পয়সা, সিএনজি ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশ রেগুলেটরি কমিশন আইন ২০০৩ এর ধারা ২২ (খ) ও ৩৪ এ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে কমিশন ভোক্তা পর্যায়ে গ্রাহক শ্রেণিভিত্তিক অভিন্ন মূল্যহার পুনঃনির্ধারণ করেছে, যা গড়ে ২২ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। যা দুই ধাপে কার্যকর হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য আব্দুল আজিজ খান, রহমান মুরশেদ, মাহামুদুল হক ভূঁইয়া, মিজানুর রহমান প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন