বাংলাদেশ কৃষি প্রধান অর্থনীতির দেশ। কৃষির সাথে এদেশের মানুষের সম্পর্কটা তাই অত্যন্ত মজবুত। ধীরে ধীরে হলেও সময়ের সাথে এদেশের কৃষিতে আজ এসেছে নতুন মাত্রা। উন্নত যন্ত্রপাতি ও টেকনোলজি ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের কৃষি ব্যবস্থা আজ অনেকটাই উন্নতির পথে এগিয়েছে। প্রতিনিয়ত কৃষিতে যোগ হচ্ছে আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। এর ফলে প্রাচীন কৃষি যন্ত্রপাতি ও উপকরণগুলোর ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে।
দেশের কৃষি সভ্যতার সূচনা ও বিবর্তনের ইতিহাস-ঐতিহ্য খচিত কৃষি উপকরণ ও প্রযুক্তিসমূহ সংরক্ষণের মাধ্যমে সেগুলোর সাথে নতুন প্রজন্মের পরিচয় করিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ২০০২ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশের প্রথম এবং একমাত্র কৃষি জাদুঘরটি। ২০০২ সালের ১০ মার্চ জাদুঘরটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হলেও ২০০৭ সালের ৩০ জুন তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসাইন মিঞার মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। মিউজিয়ামটির আয়তন ৬৩৫০ বর্গফুট এবং এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪৪ লাখ টাকা।
জাদুঘরটি পরিদর্শনে গেলে খুব সহজেই চোখে পড়ে, এখানে আমাদের কৃষি ঐতিহ্যকে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যেগুলোর সাথে মিলেমিশে আছে আমাদের কৃষি ব্যবস্থা এবং সংস্কৃতির পরিচয়। জাদুঘরে সংরক্ষিত কৃষি উপকরণের মধ্যে বাঁশ ও বেতের তৈরি টুকরি, ওচা, মাথলা, বাঁকসহ ঝুড়ি, টুরং, কুরুম, তেরা, খালই, গরুর ঠোয়া, বিভিন্ন ধরনের হুক্কা, বাঁশের তেরি চালুন, কুলা, ডুলি, লাঙল, জোয়াল, মই, কোদাল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে দা, নিড়ানি, কাস্তে, কাঠের তৈরি ঢেঁকি, পলো, চেং, বাইর, উড়ি, সানকি, বিজয়পুরের চীনা মাটি, এঁটেল মাটি, দোআঁশ মাটিসহ বিভিন্ন ধরনের মাটি, জীবাণু সারসহ বিভিন্ন ধরনের সার। রয়েছে বাকৃবি, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বিভিন্ন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের ধান, পাট, সরিষা, ডাল, ছোলা, টমেটো, বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের শস্য বীজ। বিলুপ্ত এবং বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, অনুষদ ভিত্তিক বিভিন্ন কৃষি উপকরণ, সয়েল টেস্টিং কিট, ইনসেক্ট কালেক্টিং বক্স, বিবর্তনের ধারায় যান্ত্রিক কৃষি কাজের মডেল, পাহাড়ি চাষাবাদ পদ্ধতিসহ কৃষি কাজের বিভিন্ন মডেল। আরো রয়েছে অজগর সাপ, জাতি সাপসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণির কঙ্কাল, মাটির তৈরি বাঘসহ বিলুপ্তপ্রায় অনেক কৃষি উপকরণ। জাদুঘরটিতে গেলে দেখা মিলবে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ব্যবহৃত প্রথম মাইক্রো কম্পিউটারটি। যেটি সর্বপ্রথম ১৯৮০ সালে বাকৃবির কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য আনা হয়। এই কম্পিউটারের সঙ্গে ব্যবহৃত প্রিন্টারটিও খুব যতেœ এখানে রাখা আছে। আছে বিভিন্ন মডেলের কিছু পুরনো ক্যালকুলেটরও।
আমাদের কৃষির ঐতিহ্যকে জানার ইচ্ছে থাকলে যেকেউ ঘুরে যেতে পারেন এই কৃষি মিউজিয়ামটিতে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের জন্যও এটি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
ষ শাহীন মাহমুদ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন