মো. আলতাফ হোসেন : খেলাধুলা যে মানুষকে সুস্থ দেহী, সবল ও কর্মক্ষম করে তোলে তা প্রাচীনকাল থেকেই সর্বজন স্বীকৃত। শরীর ও জীবন গঠনে খেলাধূলার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দেহের সঙ্গেই রয়েছে মনের অত্যন্ত নিবিড় সংযোগ। দেহকে সতেজ না রাখলে মন দূর্বল হয়ে পড়ে। একটি জাতির প্রাণশক্তির পরিচয় পাওয়া যায় খেলাধুলায় সাফল্যের উপর। তাই পড়া-শোনার অধ্যয়নের পাশাপাশি নিয়মিত খেলাধুলায় অংশগ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। রয়েছে শরীর চর্চা বা ব্যায়ামের প্রয়োজন। আমরা অনেকেই আছি যারা নিয়মিত খেলাধুলা ও শরীর চর্চা করতে ভালোবাসি। আমি নিজেও তাদের একজন। ব্যায়াম করার জন্য আমাদের শরীরকে কিছু নিয়ম অনুসারে নাড়াচাড়া করতে হয়। একঘেয়েমি কাটানো এবং ব্যায়াম দুটোই একসাথে করার জন্য শিখতে পারেন মার্শাল আর্ট। এই খেলাটি একদিকে যেমন উচ্চ মাত্রায় ব্যায়াম তেমন এর সাথে পাবেন আত্মরক্ষার নানা কৌশল। মার্শাল আর্ট আপনার হার্টকে অনেক শক্তিশালী করবে। এটার অনুশীলনে একজন প্রক্ষিণার্থী ঘণ্টায় ৬০০ থেকে ৮০০ ক্যালরি পোড়াতে (বার্ন করতে) পারবেন। সেই সঙ্গে তিনি পাবেন অনেক বেশী আত্মবিশ^াস। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় আপনার কখনো একঘেয়েমি লাগবে না। কারণ এর সব কিছুই একেবারে ভিন্ন। অনুশীলনে বেশ মজা পাবেন এবং মানসিক জোর বাড়বে আপনার। মার্শাল আর্ট নানা রকমের আছে যেমন- কারাতে, কুংফু, তায়কোয়ান্ডো, জুডো ইত্যাদি। সবার জন্য সব মার্শাল আর্ট ঠিক নাও হতে পারে। তাই বুঝে-শুনে অনুশীলন করা উচিত। যারা দ্রæত ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য মার্শাল আর্ট মহৌষধ। মার্শাল আর্ট অনুশীলনের পাশাপাশি চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তবে শরীর থেকে মেদ কমে যাবে। যে কোন বয়সীরা মার্শাল আর্ট অনুশীলন করতে পারেন। প্রিয় পাঠক ‘আত্মরক্ষায় কারাতে’ ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ষষ্ঠ পর্বে আজ থাকছে ‘সায়মন সখী’।
সায়মন সখী......
সায়মন সখী শুরুর পূর্বে ঠিক আগের মতো কিছু ব্যায়াম করে নিলে ভালো হয়। ব্যায়াম হলো শারীরিক কার্যক্রম, যা শারীরিক সুস্থতা রক্ষা বা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। বিভিন্ন কারণে ব্যায়াম করা হয়। তবে যে কোনো খেলাধুলা শুরু করার আগে ওয়ার্মআপ জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পুনারুদ্ধার হতে সাহায্য করে। ওয়ার্ম আপের উদ্দেশ হলো শরীরকে ব্যায়ামের উপযুক্ত করে তোলা। কারাতে প্রশিক্ষণের পূর্বে অবশ্যই শরীরকে নমণীয় ও অনুশীলনের উপযোগী করে নিতে হবে। প্রশিক্ষণের শুরুতে আমরা প্রথমে ছালাম বা বো ও কিবাডাসীর মাধ্যমেই প্রশিক্ষণ শুরু করবো। শিক্ষার্থীরা তোমরা মনে রাখবে ছালাম দেওয়ার সময় প্রথমে হাত ২টি মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় বাম ও ডান পায়ের পাশে লাগা-লাগি অবস্থায় থাকবে। তারপর পা থাকবে ভি পজিশনে। ছালাম দেওয়ার সময় কোমড় থেকে সোজা ডান হাতটি কপালের পাশে চলে আসবে। এবং বাম হাতটি বাম পায়ের পাশে লাগা-লাগি অবস্থায় থাকবে। কপালে থাকা ডান হাতটি হোইস শব্দের মাধ্যমে আবার কোমড়ে চলে আসবে। উল্লেখ্য যে ডান হাতটি কোমড়ে আসতেই এক সঙ্গে আবার কোমড় থেকে আঙ্গুল ছাড়া অবস্থায় একটু সামনের দিক যেয়ে আবার মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় কোমড়ে। সেই সঙ্গে বো করে কিবাডাসী পজিশনে চলে যেতে হবে। এরপর পূর্বের ন্যায় আজকের প্রশিক্ষণের শুরুতে ইতিপূর্বে যা শেখানো হয়েছে অর্থাৎ সবগুলো লেসন অনুশীলন করতে হবে। মনে রাখবে কিবাডাসী অবস্থায় বডি যেনো সোজা থাকে এবং হাটুর উপর ভর করে দুই হাত কোমড়ের দুই পাশে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় থাকবে। এরপর অন্যান্য দিনের ন্যায় নতুন লেসনে যাওয়ার আগে আজকেও প্রতিটি লেসনই একাধিক বার করে নেবো। এরপর আজকের ষষ্ঠ লেসন শুরু করবো। শিক্ষার্থীরা মনে রাখবে মার্শাল আর্ট একটি কৌশল তাই আমরা প্রতিটি লেসনই গুরুত্ব দিয়ে পারফেক্ট করে নেবো। যাতে প্রতিটি কৌশলই হয় প্রাণবন্ত। এবার কিবাডাসীতে মুষ্টিবদ্ধভাবে থাকা হাত দুটি এক সঙ্গে ক্রোস অবস্থায় ডান পাটি বাম পায়ের সাথে টাচা করে সোজা বরাবর পিছে চলে যাবে এবং সেই সঙ্গে বাম হাতটি মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় বাম হাটুর সামনে পজিশনে থাকবে অর্থাৎ খাসিডাসী বেøক অবস্থায় এবং ডান হাতটি মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় কোমড়ে চলে আসবে। মনে রাখতে হবে বাম হাটুটি ভাঙা অবস্থায় থাকবে আর পিছনে থাকা ডান পা-টি সোজা থাকবে। পজিশনে যাওয়ার সময় অবশ্যই হোইস শব্দের মাধ্যমে যেতে হবে।
এখন প্রথমে বাম হাটুর সামনে থাকা মুষ্টিবদ্ধ বাম হাতটি কোমড়ে চলে আসবে সেই সাথে কোমড়ে থাকবে ডান হাতে সোডন সাথী অর্থাৎ সিঙ্গেল পাঞ্চ করতে হবে বাম হাত কোমড়ে চলে আসবে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় এভাবে একই সাথে তিন বার পর্যায়ক্রমে, সোডন সাথী অর্থাৎ সিঙ্গেল পাঞ্চ করতে হবে। যেমন ইচ অর্থাৎ ১, নি অর্থাৎ ২, সান- অর্থাৎ ৩। ১, ২, ৩ হোইস, হোইস, হোইস। এভাবে পর্যায় ক্রমে হাত বদল করে পরপর ৩ বার মারতে হবে। এরপর ডান হাত সোডন সখী থাকা অবস্থায় আবার চেঞ্জ করে করতে হবে। অর্থাৎ কিবাডাসী পজিশনে চলে আসবে। অর্থাৎ মুষ্টিবদ্ধ হাত দুটি চলে আসবে দু কোমড়ের পাশে। আমরা প্রথমে সায়মন সখীটি যখন করেছি তখন ডান হাতটি কোমড়ে ছিল এবং পেছনে সোজা অবস্থায় ছিলো ডান পা টি আর বাম হাতটি ছিলো হাটু ভাঙা বাম পায়ের সামনে। এবার তার ঠিক বিপরীত মারতে হবে। এবার হোইস শব্দের মাধ্যমে কোমড়ে থাকা হাত দুটি ক্রোস হবে বাম হাতের উপর দিয়ে ডান হাত। প্রথমে আমরা ক্রেস করেছিলাম ডান হাতের উপর দিয়ে বাম হাতটি এবার ঠিক উল্টো।
প্রথমে সায়মন সখী করার সময় ডান পা টি ছিল সোজা অবস্থায় পেছনের দিকে। এবার বাম পা দিয়ে ডান পা টাচ করে সোজা পেছনে দিকে সোজা অবস্থায় চলে যাবে। পক্ষান্তরে ডান পা টি থাকবে হাটু ভাঙা অবস্থায়। আর হাটু ভাঙা পা টির উপর থাকবে মুষ্টিবদ্ধ ডান হাতটি। বাম হাতটি থাকবে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় কোমড়ে। সায়মন সখী করার সময় হোইস শব্দের মাধ্যমে করতে হবে। প্রথমবারে আমরা সায়মন সখীতে ডান হাতে প্রথম সোডন সখী করেছিলাম বাম হাত কোমড়ে ছিল মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায়। এবার কোমড়ে থাকা বাম হাতটি প্রথমে সোডন সখী মারতে হবে অর্থাৎ সিঙ্গে পাঞ্চ। ডান হাটুর উপর ডান হাটি কোমড়ে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় চলে আসবে। পরপর ৩ বার হাত বদল করে করতে হবে। যেমন- ইচ, নি, সান, অর্থাৎ ১, ২, ৩ পর্যায় মারার সময় অবশ্যই হোসই হোইস হোইস শব্দের মাধ্যমে মারতে হবে। পরপর ৩ বার হাত বদল করে মারতে হবে। পর্যায়ক্রমে একাধিকবার করা যেতে পারে সায়মন সখী। কিবাডাসী থেকে এভাবে পজিশন ঠিক রেখে হাত ও পা বদল করে সায়মন সখী করতে হয়। একটু মনোযোগ দিয়ে অনুশীলন করলেই আয়ত্ব হবে সায়মন সখী। কোনো কাজই কঠিন নয়। নেপোলিয়ান বলেছেন- অসম্ভব কথাটি শুধু বোকাদের অভিধানেই থাকে। সায়মন সখী যত বেশি করবে তার আর্ট হবে নিখুঁত। কারণ মার্শাল আর্টে ব্যবহৃত প্রতিটি মারই একটি কৌশল। সায়মন সখীতে হাত ও পায়ের ব্যবহার দেখানো হয়েছে। হাত ও পায়ের সমন্বয় করে সায়মন সখী করতে হয়। হাতে প্রতিটি অংশের শক্তি বৃদ্ধিতে সায়মন সখীর কার্যকরিতা ব্যাপক। এছাড়াও হাতের গতি বৃদ্ধিতে সহয়ক ভূমিকা পালন করে সায়মন সখী। (চলবে)
লেখক : সাবেক জাতীয় ক্রীড়াবিদ, কারাতে কোচ ও
চেয়ারম্যান, মানিকগঞ্জ গ্রীন ক্লাব
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন