শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলা ফিচার

মহানায়কের প্রস্থান

| প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নায়ক তৈরি হয় না, জন্মায়। একটি জাতির একটি বিশেষ মুহূর্তেই কেবল নায়কদের জন্ম হয়। তাদের অবদানে আলোকিত হয় সে জাতি। মাশরাফি বিন মর্তুজা তেমনই একজন। বাংলাদেশ ক্রিকেট আর মাশরাফি যেন সমার্থক শব্দ। সেই মাশরাফিই হঠাৎ বিদায় বলেছেন টি-২০ ক্রিকেটকে। তার বিদায়ে সে শূন্যতা বিরাজ করছে গোটা বাংলাদেশজুড়ে তাই যেন ছুঁয়ে গেছে আমাদেরও। ‘ক্যাপ্টেন ম্যাশ’কে বিদায়ী শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ইমরান মাহমুদ-
ঘোষণা দিয়ে গুডবাই না জানালেও টেস্ট ক্যারিয়ার থেমে গেছে মাশরাফির ৮ বছর আগে। ২০০৯ সালে সেন্ট ভিনসেন্ট টেস্টে বোলিংয়ের সময়ে ফলো থ্রুতে পা পিছলে পড়ে মারাত্মক আহত হওয়ার পর আর ফিরতে পারেননি টেস্টে। ৩৬ টেস্টে ৭৮ উইকেটে থমকে গেছে টেস্ট ক্যারিয়ার। সাদা পোশাকে বাংলাদেশের হয়ে দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচ খেলার স্বপ্ন এখন আর দেখেন না নড়াইল এক্সপ্রেস। ওয়ানডে ক্যারিয়ার চালিয়ে নিচ্ছেন, এবং তা তরুণদের সাথে লড়ে, পারফর্ম করে। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বাধিক উইকেটের (১৭২ ম্যাচে ২২৫ উইকেট) মালিক টি-২০ ক্রিকেটকে গুডবাই জানাতে প্রস্তুতি নিয়েছেন প্রায় এক বছর। সর্বশেষ টি-২০ বিশ্বকাপ চলাকালেই এমন সিদ্ধান্তের কথা চেয়েছিলেন জানাতে। তবে তখন দেয়া হয়নি সে সিদ্ধান্ত। প্রেমাদাসায় শ্রীলংকার বিপক্ষে টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে নামার আগে ফেসবুকের মাধ্যমে দিয়েছেন টি-২০ থেকে অবসরের ঘোষণা। ২০১৪ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ দিয়ে ক্যাপ্টেনসির অভিষেক মাশরাফির, সেই শ্রীলংকার বিপক্ষে ফিরতি টি-২০ সিরিজকেই ক্যারিয়ারের শেষ টি-২০ সিরিজ বলে ঘোষণা দিয়েছেন সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল (২৮ ম্যাচে ১০ জয়) অধিনায়ক।
২০০৬ সালে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টি-২০ অভিষেক ম্যাচে করেছেন প্রতিনিধিত্ব। বাংলাদেশের ৬৭টি টি-২০ ম্যাচের মধ্যে ৫৪টিতেই করেছেন প্রতিনিধিত্ব। ১১ বছরের লম্বা টি-২০ ক্যারিয়ারে ৪২ উইকেটের পাশে ৩৭৭ রান-সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে যথেষ্ট নয়। তবে সর্বশেষ টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশ সুপার টেন এ খেলেছে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তার ম্যাচ উইনিং বোলিংয়ে (৪-০-১৪-১)। ২০১২ সালে বেলফাস্টে ম্যাচ সেরা বোলিংয়ের (৪/১৯) সুখস্মৃতি নিয়ে কাটিয়েছেন আরো ৫ বছর। টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৩ ম্যাচের ক্যাপ্টেনসিকে ৮ জয়ে মুশফিকুর রহিমের সাফল্যকে টপকে গেছেন মাশরাফি ২৮ ম্যাচে ১০ জয়ে। গত বছর এশিয়া কাপ টি-২০তে পাকিস্তান, শ্রীলংকাকে হারিয়ে বাংলাদেশের ফাইনালে ওঠা তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ জয়ের পাশে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২টি সিরিজ ড্র করেছে বাংলাদেশ তার নেতৃত্বেই। সংক্ষিপ্ত ভার্সনের টুয়েন্টি-২০ আসর বিপিএলে ২০১৫ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স শিরোপা জয়ে অসাধ্য সাধন করেছে যার অধিনায়কত্বে। বয়স ৩৬ বছর, পাঁচ পাঁচবার হাঁটুর লিগামেন্টে জটিল অপারেশন নিয়ে টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর কতোদিন চালিয়ে নিবেন? এ প্রশ্ন থেকে মাশরাফির অবসর ঘোষণাকে যারা যথার্থ মনে করছেন, তাদের উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন- ক্রিকেটারদের মোটিভেটর মাশরাফিকে সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে অপাঙ্ক্তেয় ভাবার সময় কি এসেছে?
কী এমন হলো যে, ঘোষণা দিয়ে টি-২০ ক্যারিয়ারকে মাশরাফি জানালেন গুডবাই? সিনিয়র বিদ্বেষটা যেভাবে সংক্রমিত হয়েছে দলে, হাতুরুসিংহের ক্ষমতা যেভাবে বাড়ছে, বোর্ডের হস্তক্ষেপে যেভাবে দলে একটার পর একটা পরিবর্তন আসছে। তার অনেক কিছুর সঙ্গেই যে মাশরাফির দ্বিমত পোষণ করেছেন অতীতে। টি-২০ সিরিজকে সামনে রেখে এমন ঘোষণায় তাই অন্য কিছুর আলামতও যে পাচ্ছে মাশরাফি ভক্তরা। ওয়ানডে ক্রিকেটে তার নেতৃত্বে টানা ৬টি সিরিজ জয়ের অতীতের পাশে স¤প্রতি শ্রীলংকার মাটিতে ১-১ এ সিরিজ ড্রর সুখস্মৃতি আছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য কোয়ার্টার ফাইনালিস্টও তার অধিনায়কত্বের আমলে। আইসিসির দুরূহ চ্যালেঞ্জ পাড়ি দিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের হিসেব মিলিয়ে ১১ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার টিকিট পেয়েছে বাংলাদেশ, সেখানেও অধিনায়ক মাশরাফির জয়গান। বিশ্ব ক্রিকেটকে বিস্মিত করে ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে ৭-এ উঠে এখন ৬-এর জন্য লড়ছে বাংলাদেশ-সেখানেও অধিনায়ক মাশরাফির কৃতিত্বকে সবাই আনছে সামনে। কিন্তু যে ফরমেটের ক্রিকেটকে বাংলাদেশের জন্য যথার্থ বলে গণ্য করেছে ক্রিকেট বিশ্ব, সেই টি-২০তে যে বাংলাদেশ এখনো আফগানিস্তানের পেছনে। ওয়ানডের পারফরমেন্সের সঙ্গে মিল নেই টি-২০তে। র‌্যাংকিংয়ে ১০-এ থাকার কষ্ট, টি-২০তে ধারাবাহিক হতে না পারার সেই আক্ষেপটা নিয়েই দিলেন আবেগী বিদায়ের ঘোষণা।

টি-২০তে মাশরাফি (২০০৬-২০১৭)
বোলিং ম্যাচ/ইনি. উইকেট সেরা গড় ইকো ৪/৫
৫৪/৫৩ ৪২ ৪/১৯ ৩৬.৩৫ ৮.০৪ ১/০
ব্যাটিং ম্যাচ/ইনি. রান সর্বোচ্চ গড় স্ট্রাইক ১০০/৫০
৫৪/৩৯ ৩৭৭ ৩৬ ১৩.৪৬ ১৩৬.১০ ০/০
ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মাশরাফির আবেগময় বিদায়ী ঘোষণা-
‘বাংলাদেশ দলকে টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিনিধিত্ব করা আমার জন্য অনেক গর্বের। আমি বিশ্বাস করি বর্তমান দলটি একটি ভালো দল এবং দলে কিছু উদীয়মান খেলোয়াড় আছে। আমার উপর আস্থা রাখার জন্য এবং আমাকে চমৎকার একটি দলের নেতৃত্বের সুযোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আমি আমার সকল ভক্ত, পরিবার এবং বন্ধুদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ আমাকে সবসময় সমর্থন করার জন্য। এই সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে উত্থান এবং পতন ছিল। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি আমার ফ্যানদেরকে খুশি করতে। আমি আমার প্রত্যেক ফ্যান এর কাছে তাদের প্রতি ম্যাচে খুশি করতে না পারার জন্য ক্ষমা চাইছি। এই মুহূর্তে দল হিসেবে আমরা ভালো খেলছি। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ সামনের দিনগুলোতেও ভালো ক্রিকেট খেলবে। আমি মনে করি টি-২০ ফরমট থেকে অবসর নেয়ার জন্য এটাই আমার উপযুক্ত সময় যাতে অনেক তরুণ উদীয়মান ক্রিকেটাররা তাদের প্রতিভা তুলে ধরতে পারে এবং বিসিবি তাদেরকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারে। আমি বাংলাদেশের টি-২০ দলের নতুন অধিনায়ককে আগাম অভিনন্দন জানাই এবং আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা সময় সামনে আসবে। শিগগিরই আবার দেখা হবে। সকলের জন্য রইল আমার আন্তরিক ভালোবাসা।’

সতীর্থদের কান্না
‘যেতে নাহি দিতে চাই, তবু চলে যেতে হয়, তুব চলে যায়’। কবির এই পঙ্ক্তিটির সত্যতা কতটা কষ্টদায়ক সেটা যেন এবারের সফল শ্রীলঙ্কা সফর শেষে হাড়ে হাড়ে বুঝলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, পুরো বাংলাদেশও কী নয়! বিদায় সবসময়ই করুণ, বেদনার। এই সত্য মেনে নিয়েই সামনে এগিয়ে যতে হবে। তবুও কিছু বিদায় যেন মেনে নেয়া যায় না। টি-২০ ক্রিকেট থেকে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার বিদায়টা ঠিক তেমনই এক ঘটনা। ২০০৬ সালের নভেম্বরে নিজের অভিষেক টি-টোয়েন্টির নায়ক ছিলেন তিনি। সেটা ছিল বাংলাদেশেরও প্রথম টি-টোয়েন্টি। গেলপরশু নিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচের নায়ক হতে পারেননি ঠিকই। তবে এই ম্যাচের পুরো আলোটা মাশরাফি বিন মর্তুজার ওপরই ছিল। বিদায়ী টি-টোয়েন্টিতে ‘মাশরাফি ভাই’কে জয় উপহার দিতে চেয়েছিলেন সতীর্থরা। তাঁরা কথা রেখেছেন। কলম্বোর প্রেমাদাসায় শ্রীলঙ্কাকে ৪৫ রানে হারিয়ে সিরিজে সমতা এনেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ১৭৬ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা অলআউট ১৩১ রানে।
ওয়ানডে খেলবেন, তুবও যেন অনেকেই দেখে ফেলেছেন অদূর ভবিষ্যৎ- হয়তো দেখ ফেলেছেন একটি শেষের শুরুও। ৮ বছর আগ থেকেই নেই টেস্টে। আর তখন থেকেই গোটা দেশের ক্রীড়াঙ্গনে যেন নেমে এসেছে শূন্যতা। এবার শ্রীলঙ্কা সফরে সেই শূন্যতা স্পর্শ করেছে সতীর্থদেরও। তাসকিন আহমেদকে মজা করে মাশরাফি বিন মর্তুজা ডাকেন ‘হিরো’ বলে। শুধু ক্রিকেটই নয়, মাঠের বাইরেও যে কোনো সমস্যা, প্রয়োজন, পরামর্শে তাসকিনের আশ্রয় মাশরাফি। সেই মানুষটি অবসরের কথা জেনে তাৎক্ষণিক নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি তাসকিন। সতীর্থদের যখন নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানান মাশরাফি, টিম হোটেলের কক্ষে তখন বয়ে যায় আবেগের উথাল-পাথাল ঢেউ। শুধু তাসকিন নয়, চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, নুরুল হাসান সোহানরা। সিনিয়র ক্রিকেটাররা মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন প্রায় সবাই। তার পরও নিশ্চিত জেনে বিষণœ ছিলেন সবাই। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকেই জানিয়েছেন প্রতিক্রিয়া।
এই যেমন মাশরাফি ছাড়া বাংলাদেশ দল ভাবতেই পারছেন না টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, ‘অসাধারণ সব কিছুই একটা সময় শেষ হয়- এটাও সম্ভবত সেটিরই একটি। ম্যাশ, আপনাকে ছাড়া বাংলাদেশ দল ভাবাও আমাদের প্রত্যেকের জন্য কঠিন। আপনি সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন। আমি নিশ্চিত, আমার মতো দলের সবাই আপনার নেতৃত্বে খেলতে পেরে গর্বিত। আমরা যখনই হতাশ ছিলাম, প্রতিবারই আমাদের উজ্জীবিত করার জন্য এবং আমাদের সবার অনুপ্রেরণা হওয়ার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমরা যতটা হতাশ, জানি টি-টোয়েন্টি জার্সিটা আপনিও মিস করবেন।’
শুধু দীর্ঘদিনের সতীর্থই নয়, মাশরাফির কাছের বন্ধুও টেস্ট সহ-অধিনায়ক তামীম ইকবাল। বাঁহাতি ওপেনার বিদায় জানানোর সঠিক ভাষাই খুঁজে পাচ্ছেন না ড্যাশিং এই ওপেনার, ‘প্রসঙ্গ যখন আমাদের অধিনায়ক মাশরাফি ভাই, যত বেশিই বলি না কেন, কম মনে হবে। তার হয়ত বিশ্বরেকর্ড নেই, অন্য দেশের কিংবদন্তিদের মতো নেই ৪০০-৫০০ উইকেট, কিন্তু নিজের মতো করেই ছাপ রেখেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে যে পরিবর্তন ও মর্যাদা আমরা দেখি, সেটি সম্ভব হয়েছে তার নেতৃত্বেই। আমার মতে সেটি বিশ্বরেকর্ড বা ৪০০ উইকেটের মতোই। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে একটি ড্রেসিং রুমকে পরিবার হিসেবে গড়ে তোলা যায় এবং একই সঙ্গে ফলও এনে দেওয়া যায়। অনুসরণীয় একজন, আমার মতে মাশরাফি একজন জীবন্ত কিংবদন্তি।”
আপনজনকে হারানোর হাহাকর যেন ফুটে উঠলো মাহমুদউল্লাহর কণ্ঠে, ‘আমরা সবাই আপনাকে মিস করব, বিশেষ করে আমি। আপনি আমার ভাই, আমার বন্ধু, যার সঙ্গে আমি সবকিছু ভাগাভাগি করতে পারি। আপনি একজন যোদ্ধা, একজন অসাধারণ নেতা, অধিনায়ক ও সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন। সত্যিই ভীষণ খারাপ লাগছে, কিন্তু আমাদের জীবনটিই এমন! আপনি আমাদের দেখিয়েছেন কিভাবে একটি দলকে পরিবার হিসেবে গড়ে তুলতে হয়। আপনার কাছ থেকে এত কিছু শিখেছি! আপনি অসাধারণ একজন ক্রিকেটার, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খুব ভালো একজন মানুষ। ম্যাশ, আমরা সবাই আপনাকে ভালোবাসি।’
মাঠে নিজের পিঠে মাশরাফির হাত রাখার একটি ছবি দিয়ে তাসকিন আহমেদ জানিয়েছেন তার ভালোবাসা ও আবদার, ‘জানি না আর কতদিন এই হাতটা খেলার মাঠে আমার কাঁধে পাব...জাতীয় দলের অভিষেক হওয়ার আগে থেকেই আপনি আমার আইডল... আর গত তিন বছর ধরে একজন অভিভাবকের থেকেও অনেক বেশি কিছু ... সব সমস্যার সমাধক হিসেবেও বার বার আপনাকেই জ্বালাবো ১০০% সিওর ...। ভাইয়া জীবনে যাদেরকে অফুরন্ত ভালবাসি এবং যাদেরকে মানি তার মধ্যে আপনি অন্যতম ... অনেক কিছু নেওয়ার বাকি আছে আপনার কাছে থেকে... শিখার আশার অপেক্ষায় থাকলাম ...।’

মাশরাফিনামা...
জাতীয় দলের সাকেব কোচ ডেভ হোয়াটমোর একদিন বলেছিলেন, ‘মাশরাফির সাথে পৃথিবীর কোনো খেলোয়াড়ের তুলনা চলে না, তার তুলনা সে নিজেই’। কারণটা বর্ণনা না করে দিলেও, অনুমেয়। আসুন একনজরে দেখে নেয়া যাক, কেন?

■ নিউজিল্যান্ডের গতিদানব শেন বন্ড দুইবার সার্জারীর পরই ভয়ে ক্রিকেট ছেড়ে দেন...
■ বিশ্ববিখ্যাত ইংলিশ অলরাউন্ডার এন্ড্রু ফ্লিন্টফ মাত্র একটি সার্জারীর ভয়েই ক্রিকেটকে গুডবাই জানিয়েছেন...
■ মাশরাফি একমাত্র ক্রিকেটার যিনি পরপর ৭টা মারাত্মক সার্জারী করেও এখনো ক্রিকেট চালিয়ে যাচ্ছেন... বিশ্বের কোন ফার্স্ট বোলারই দুইবারের বেশি সার্জারী করে খেলতে পারেননি
■ একমাত্র পরিশ্রমী ক্রিকেটার যার ওজন বেড়ে যাচ্ছে বলে ক্রিকেট ছাড়ার আশংকা ছিল তাই তিনি ১ মাসে ১২ কেজি ওজন কমিয়ে সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়েছিলেন।
■ যে কোন আঘাতে তার বাম পা পঙ্গু হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা থাকা সত্তে¡ও তিনিই একমাত্র সাহসী মানব যিনি প্রতিটি ম্যাচে এখনো হিং¯্র বাঘের মত বোলিং করে যাচ্ছেন!
■ তিনিই এমনই দেশপ্রেমিক ক্রিকেটার যার একমাত্র আদরের ৫ মাস বয়সী ছেলে এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হয়ে টাইফয়েডের সঙ্গে মূত্রাশয়ের সংক্রমণ রোগে মৃত্যুর মুখোমুখি অথচ দেশের স্বার্থে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকে একমাত্র ছেলের সুস্থতার জন্য দু’হাত তুলে দোয়া করে দেশের জন্য মাঠে নেমেছেন।
■ একমাত্র ক্রিকেটার যে প্রতি ম্যাচ শেষে হাঁটুতে জমে যাওয়া রস নিজে সিরিঞ্জ দিয়ে বের করে ফেলেন।
■ তিনিই সেই ক্রিকেটার যার প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গার পর ১৫ মিনিট সময় লাগে হাঁটু ভাঁজ করে বিছানা থেকে নামতে।
■ একমাত্র প্লেয়ার যে কিনা ইনজুরি বিধ্বস্ত অবস্থায় বোলিং এর কষ্টকে ভুলতে নিজেকে সান্ত¡না দেন এই বলে ‘মুক্তিযোদ্ধারা পায়ে গুলি নিয়েও যুদ্ধ করে যেতে পারলে আমি কেন সামান্য অপারেশন নিয়ে বোলিং করতে পারবো না?
■ জাতীয় বীর আখ্যা পেয়ে খুশি হবার বদলে যার প্রতিক্রিয়া ছিলো ‘বাংলাদেশের জাতীয় বীর কেবল মুক্তিযোদ্ধারাই। যারা দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আমরা কেবল এন্টারটেইনার’।

এমন একজন মানুষকে কী করে ভুলে যাবে বাংলাদেশ? স্যালুট মাশরাফি, তোমায় হাজারো সালাম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন