সময়ের প্রয়োজনে যুগে যুগে সব ধরনের অবকাঠামোতেই আসে পরিবর্তন। মাঠের খেলা ক্রিকেটও এর ব্যতিক্রম নয়। এক সময় টেস্ট খেলা হত যার কোনো নির্দিষ্ট সময় বাধা ছিল না। এরপর একসময় তা বেধে দেয়া হয় সময়ের বেড়াজালে। সেই সময় কমতে কমতে এখন পাঁচ দিনে এসে ঠেকেছে। তেমনি ৬০ ওভারের একদিনের ক্রিকেটও এখন অতীত। আর হালের টি-২০ তো আছেই। এছাড়া বিভিন্ন দেশের সাথে পারস্পারিক ক্রিকেট আয়োজনেই আছে অনেক নিয়ম-কানুন।শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের সিদ্ধান্তে আবারো বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে ক্রিকেটে। গত মাসে দুবাইয়ে আইসিসির সভায় এই ধরনের পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় প্রধান নির্বাহীদের কমিটি। তিন ধরনের ফর্মেটেই দেখা যাবে এই পরিবর্তন। দুই বছরের টেস্ট লিগ, ১৩ দলের ওয়ানডে লিগ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অঞ্চলভিত্তিক বাছাইপর্ব চালু করার প্রস্তাবে একমত হয়েছে আইসিসির। এখনো অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে আরো এক মাস। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৯ সাল থেকে কার্যকর হবে এই নিয়ম। এছাড়া খেলার নিয়মেও অনেক পরিবর্তন আনছে ক্রিকেটের আইন প্রণেতা সংস্থা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)। পাঠকদের এসব পরিবর্তনের খবরা-খবর জানানোর দায়িত্ব নিয়েছেন ইমামুল হাবীব বাপ্পি
টেস্ট
স ৯-৩ ফরম্যাটে ১২টি দল দুই বছর মেয়াদে খেলবে লিগ পর্যায়ের টেস্ট। যেখানে শীর্ষ নয়টি দল খেলবে নিজেদের মধ্যে এবং টেস্টের দশ নম্বর দল জিম্বাবুয়ের ও সম্ভব্য দুই দল আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে।
স শীর্ষ নয়টি দল দুই বছরে ঘরে ও বাইরে অন্তত একটি করে সিরিজ খেলবে। শীর্ষ দুই দল নিয়ে হবে ফাইনাল শীর্ষস্থান নির্ধারণী লড়াই।
স পূর্ণ সদস্য দেশগুলো এর বাইরেও সিরিজ আয়োজন করতে পারবে।
ওয়ানডে
স ৩ বছর মেয়াদী ১৩ দলের লিগ নিয়ে হবে একদিনের ক্রিকেট। প্রত্যেক দল অন্য দলের সাথে একটি করে হোম ও অ্যাওয়ে সিরিজ খেলবে। ওয়ানডের পূর্ণ দশ দলের সাথে এক্ষেত্রে যোগ গতে পারে আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড এবং ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগে চ্যাম্পিয়ন দলকে।
স প্রত্যেক দলই বছরে কমপক্ষে ১২টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে।
স লিগ শেষে শীর্ষ৭ দল ও আয়োজক দেশ সরাসরি অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে। বাকি ৫ দলকে বাছাই পর্ব খেলতে হবে সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে। এখাান থেকে ২ দল সুযোগ পাবে মূল পর্বে। মোট ১০ দল নিয়ে হবে মূলপর্বের টুর্নামেন্ট।
টি-টোয়েন্টি
স সবচেয়ে বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে টি-২০ বিশ্বকাপকে ঘিরে। এবার থেকেই ৪ পছর পর পর আয়োজনের কথা ছিল ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণের এই বিশ্বকাপে। সেই হিসাবে বিশ্বকাপ হওয়ার কথা ২০২০ ও ২০২৪ সালে। কিন্তু এই দুই বিশ্বকাপের মাঝে ২০১৮ ও ২০২২ সালেও দুটি বাড়তি বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
স দল নির্বাচন করা হবে অঞ্চল ভিত্তিতে। আইসিসির ৫ অঞ্চলেই হবে এশিয়া কাপের মত কোয়লিফাইং রাউন্ড। এখান থেকে প্রাপ্ত পয়েন্টের ভিত্তিতে শীর্ষ দলগুলো সুযোগ পাবে মূল পর্বে।
স বিশ্বব্যাপী টি-২০র জনপ্রিয়তার কারণে দেয়া হয়েছে এই প্রস্তাব। এছাড়া ওয়ানডে সিরিজ আয়োজনের সময়ও দলগুলো সর্বোচ্চ ৩ ম্যাচের টি-২০ সিরিজ আয়োজন করতে পারবে।
এমসিসির নতুন নিয়ম
* ছোট হচ্ছে ব্যাটের আকার : এই নিয়ম অনুযায়ী ব্যাটের প্রস্থ ১০৮ মিলিমিটারের (৪.২৫ ইঞ্চি) বেশি হতে পারবে না। সর্বোচ্চ পুরুত্ব হবে ৬৭ মিলিমিটার। আর কিনারা হবে ৪০ মিলিমিটার। প্রয়োজনে ‘ব্যাট গজ’ দিয়ে মেপে দেখা হবে ব্যাট।
* আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ও জরিমানা : অতিরিক্ত আবেদন আর আম্পায়ারর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলে সতর্ক করে দেয়া হবে খেলোয়াড়দের। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে পাঁচ রান করে জরিমানা করা হবে।
* ইচ্ছাকৃত ধাক্কায় জরিমানা : প্রতিপক্ষ কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে ইচ্ছা করে ধাক্কা খেলে বা কারও দিকে বল ছুড়ে মারলেও পাঁচ রান করে জরিমানা করা হবে।
* খেলোয়াড় বহিষ্কার বা লাল কার্ড : মাঠে আম্পায়ারকে হুমকি দেয়া বা সহিংসতা দেখালে আম্পায়ার নির্দিষ্ট ওই খেলোয়াড়কে সাময়িক সময়ের জন্য বা চূড়ান্তভাবে মাঠ থেকে বের করে দিতে পারবেন।
* মানকড় আউট : বোলিং করার সময় নন-স্ট্রাইকার ব্যাটসম্যান উইকেট থেকে বেরিয়ে এলে তাঁকে রানআউট করতে হলে বোলারকে আগে ক্রিজে ঢুকতে হয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী ক্রিজে না ঢুকেই বোলার ওই ব্যাটসম্যানকে রানআউট করতে পারবেন।
* রান আউট : ব্যাটসম্যান নিরাপদ সময়ে ক্রিজ পার হওয়ার পর আবারও যদি তাঁর ব্যাট বা শরীর শূন্যে ভেসে ওঠে, সে সময় উইকেট ভেঙে দিলেও আউট হবেন না ওই ব্যাটসম্যান। একবার নিরাপদে ক্রিজে ঢুকে পড়াটাকেই গণ্য করা হবে।
* ১০ থেকে ৯ : ক্রিকেটে মোট আউট দশ রকমের। এখন তা কমে নয়ে চলে আসছে। বল ডেড হওয়ার আগে ব্যাটসম্যান হাত দিয়ে বল ধরলে ফিল্ডারদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ‘হ্যান্ডল দ্য বল’ আউট দেয়া হতো। এই আউট থাকছে, তবে তা এখন ‘অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড’ আউটের আওতায় আনা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন