শামীম চৌধুরী : সাংবাদিক হিসেবে বাংলাদেশের ১০০তম টেস্ট কভার করা ছিল স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু। ফিউচার ট্যুর প্রজেক্টে (এফটিপি) বাংলাদেশকে যেখানে প্রতি বছর টেস্ট খেলতে উপেক্ষা করা হয়, সেখানে ১০০ স্পর্শ করা তো এভারেস্টে পা দেয়ার মতোই। ছুঁতো খুঁজে অস্ট্রেলিয়া ২ বার এফটিপি ভঙ করে কর্তন করেছে বাংলাদেশের সঙ্গে ৪টি টেস্ট, বাংলাদেশকে আতিথ্য দিতে ভারত অপেক্ষা করেছে ১৬ বছরেরও বেশি সময়, টি-২০ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বিসিবিও যেখানে কর্তন করেছে টেস্ট সংখ্যা, সেখানে ১০০’র জন্য প্রতীক্ষা বাড়বেÑএটাই স্বাভাবিক। তাই শততম টেস্টকে সামনে রেখে পি সারা ওভালে উঠে এলো স্মৃতিচারণ। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট খেলেছেন, এমন কেউ নেই দলের সদস্যÑঅভিষেক টেস্টের একমাত্র প্রতিনিধি আকরাম খান বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের শততম টেস্টের দর্শক হয়ে ছিলেন উপস্থিত পি সারা ওভালে। বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে ৫০তম টেস্ট খেলে দেশের শততম টেস্টের ল্যান্ডমার্ক ছুঁয়েছেনÑখুঁজে বের করা গেল শুধু মুশফিকুর রহিম এবং তামীম ইকবালকে। বাংলাদেশ থেকে যে সব টেলিভিশন শততম টেস্ট কভার করতে পাঠিয়েছে সাংবাদিক, ক্যামেরা ক্রু, তাদের দৃষ্টি ৬ সাংবাদিকের দিকে। ২০০০ সালের ১০ নভেম্বরে বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেক কভার করেছেন যারা, তাদের মধ্যে শততম টেস্ট কভারের সৌভাগ্য হয়েছে মাত্র ৬ জনের। প্রথম আলোর পবিত্র কুন্ডু, জাগো নিউজের আরিফুর রহমান বাবু, চ্যানেল আই এর সাইদুর রহান শামীম, ইনকিলাবের শামীম চৌধুরী, মানবকণ্ঠের মহিউদ্দিন পলাশ এবং কালের কণ্ঠের মাসুদ পারভেজের আছে শুধু এই অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞ এই ৬জনকে একদল ক্ষুদে সাংবাদিক পি সারা ওভালে ক্যামেরাবন্দি করে নিজেরাও ইতিহাসের অংশ হতে চাইলেন। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট, ৫০তম টেস্ট এবং শততম টেস্টÑএই তিনটি মাইলস্টোন টেস্ট কভারের একমাত্র অভিজ্ঞতা কেবলই শামীম চৌধুরীর।
যেখানে অ্যালিস্টার কুক ১১ বছরে খেলেছেন ১৪০টি টেস্ট, সেখানে বাংলাদেশকে ১০০ টেস্ট এর মাইলস্টোনে পা দিতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ১৬ বছর ৪ মাস ৫ দিন! ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ টেস্ট অভিষেকের পর আইসিসি’র রক্তচক্ষু, আর নানা অজুহাতে ফিউচার ট্যুর প্রজেক্টে (এফটিপি) পায়নি টেস্টে খুব একটা সøট। টেস্ট আঙিনায় পা দিয়ে ১৬ বছর ৩ মাস ২৫ দিনে বাংলাদেশ যেখানে ৯৯টি টেস্ট দিয়েছে পাড়ি, সেখানে এই সময়ে ইংল্যান্ড খেলেছে সর্বাধিক ২১০টি টেস্ট, অস্ট্রেলিয়া সেখানে ১৯৩টি, নিউজিল্যান্ড ১৭৯টি, ভারত ১৭৭টি, দ.আফ্রিকা ১৬৪টি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৫৬টি, শ্রীলঙ্কা ১৫২টি, পাকিস্তান ১৩৭টি টেস্ট করেছে পার। ২০০৬ থেকে ২০১১Ñএই পাঁচ বছর স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকায় জিম্বাবুয়েকে ৫৬ টেস্টে থাকতে হয়েছে সীমাবদ্ধ।
তারপরও অদ্ভুত তথ্য আছে। রেকর্ডস বলছে শততম টেস্টের মাইলফলে বাংলাদেশকেই সবচেয়ে কম সময় অতিবাহিত করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের আগে শততম টেস্ট খেলতে সবচেয়ে কম সময় নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তাদের সময় লেগেছে ১৮ বছর ৩ মাস ২৯ দিন। বাংলাদেশের চেয়ে ২ বছর বেশি। টেস্ট ইতিহাসে তিন অংকের কোটা স্পর্শ করতে সবচেয়ে বেশি সময় লেগেছে দক্ষিণ আফ্রিকার। সময়ের হিসেবে ৫৯ বছর ১১ মাস ২২দিন। দক্ষিণ আফ্রিকার পর বেশি সময় লেগেছে নিউজিল্যান্ডের, ৪২ বছর ২ মাস ১৪দিন। গত বছরের অক্টোবরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে জিম্বাবুয়ের সময় লেগেছে ২৪ বছর ১২দিন। ১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ টেস্ট ইতিহাস রচিত হয়েছে যাদের হাত ধরে, সেই প্রথম টেস্ট খেলা দুই দল অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের শততম টেস্ট খেলতে সময় লেগেছে যথাক্রমে ৩৫ বছর ২ মাস ১৩দিন এবং ৩৫ বছর ৩ মাস ১৭দিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সময় লেগেছে ৩৬ বছর ৮ মাস ৫৯ দিন। শততম টেস্ট খেলতে ভারতের সময় লেগেছিল ৩৫ বছর ১৯দিন। পাকিস্তানের লেগেছিল ২৬ বছর ৪ মাস ২৩দিন। ১৪০ বছর আগে যে দিনে মেলবোর্নে প্রবর্তিত হয়েছে টেস্ট, মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের সেই টেস্টের ১৪০ তম বর্ষে শ্রীলঙ্কার পি. সারায় বাংলাদেশ উদযাপন করেছে শততম টেস্ট।
দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুৃরিতে সাফল্যাঙ্কে বাংলাদেশ (৯টি জয়) শুধু টপকে যেতে পেরেছে নিউজিল্যান্ডকে (৬টি জয়)। দেশের পক্ষে প্রথম ১০০ টেস্টে ১০টি টেস্ট প্লেইং দেশের মধ্যে বাংলাদেশের বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনিন্ম। ১০০ টেস্টের মধ্যে ৭টি জয়ের পাশে নিউজিল্যান্ড যেখানে ড্র’ করেছে ৪৬টিতে, সেখানে বাংলাদেশের ড্র’র সংখ্যা ১৫টি। প্রথম ১০০ টেস্টে সর্বাধিক ৪৫টি জয় ইংল্যান্ডের, অস্ট্রেলিয়া ৪২, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৪, শ্রীলঙ্কা ১৮, পাকিস্তান ১৬, দ.আফ্রিকা ১৩, জিম্বাবুয়ে ১১ ও ভারত ১০টিতে পেয়েছে জয়।
দেশের মাটিতে শততম টেস্ট খেলতে পেরেছে ইংল্যান্ড (১৯০৯ সালে হেডিংলিতে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে), দ.আফ্রিকা (১৯৪৯ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পোর্ট এলিজাবেথে), শ্রীলঙ্কা (২০০২ সালে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে), ওয়েস্ট ইন্ডিজ (জ্যামাইকার স্যাবাইনা পার্কে, ১৯৬৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে), জিম্বাবুয়ে (২০১৬ সালে হারারে ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে)। জয় দিয়ে শততম টেস্ট উদযাপনের অতীত সেখানে অস্ট্রেলিয়ার (১৯১২ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইনিংস এবং ৮৮ রানে জয়), পাকিস্তানের (১৯৭৯ সালে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭১ রানে জয়), ওয়েস্ট ইন্ডিজের (১৯৬৫ সালে স্যাবাইনা পার্কে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৭৯ রানে জয়)।
১শ’ টেস্টে সময়ের হিসেবে দ্রæততম বাংলাদেশ এই মাইলস্টোনে ব্যক্তিগত পারফরমেন্সেও করেছে রেকর্ড। দেশের হয়ে শততম টেস্টের দিনে টেস্টে শ্রীলঙ্কার মুরালীধরন, জিম্বাবুয়ের হিথ স্ট্রিকের পরই ভালো বোলিংয়ের রেকর্ড সাকিব আল হাসানে। লংকান স্পিন লিজেন্ডারি নিজ দেশের একই মাইলফলকের ম্যাচে ৫১ ম্যাচে নামের পাশে শিকার সংখ্যা উন্নীত করেছেন ২৫৩টি, জিম্বাবুয়ের হিথ স্ট্রিকই দেশের হয়ে ১০০তম টেস্টে যেদিন করেছেন প্রতিনিধিত্ব, সেদিন তার নামের পাশে ৬৫ টেস্ট শিকার সংখ্যা ২১৬ উইকেট। সাকিব আল হাসানের সেখানে শিকার করেছেন ১৭৬ উইকেট।
নিজ দেশের ১০০ টেস্টে এসে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক শ্রীলঙ্কার অরবিন্দ ডি সিলভা। শ্রীলঙ্কার প্রথম ১০০ টেস্টের মধ্যে ৮১টি খেলা এই মিডল অর্ডার করেছেন ৫৬১৯। জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ৪৭৯৪ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের এভার্টন উইকস ৪৪৫৫ রান করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। এই রেকর্ডে আছেন বাংলাদেশের তামিম ইকবালও। ১০০ টেস্টে তার রান সংখ্যা ৩৬৭৭।
দেশের শততম টেস্টে সেঞ্চুরির রেকর্ডে সাকিব ৮ম। অস্ট্রেলিয়ার ওয়ারেন বার্ডসলি ও চার্লস কেলওয়ে, নিউজিল্যান্ডের বেভান কংডন ও ব্রায়ান হেস্টিংস, দক্ষিণ আফ্রিকার বিলি ওয়েড পাকিস্তানের মাজিদ খান,, এবং জিম্বাবুয়ের গ্রায়েম ক্রেমারের পর সাকিব করেছেন শততম টেস্টে সেঞ্চুরি। শততম টেস্টে মোসাদ্দেক তার অভিষেক টেস্টে বিরল রেকর্ড গড়েছেন। শততম টেস্টে অভিষেকে হাফ সেঞ্চুরি আছে কেবল একজনেরই। ১৯০৯ সালে ইংল্যান্ডের শততম টেস্টে অভিষিক্ত জ্যাক শার্প দেখা পেয়েছিলেন ফিফটি (৬১)। বাংলাদেশের ৮৬তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্যাপ মাথায় ওঠা মোসাদ্দেকের বাংলাদেশের ১৩তম অভিষিক্ত ক্রিকেটার হিসেবে হাফসেঞ্চুরি করেছেন। শততম টেস্টে অভিষেক হওয়ার নজির আছে আরও ৭টি। অষ্টম ক্রিকেটার হিসেবে গত বুধবার মোসাদ্দেক নাম লিখিয়েছিলেন এই তালিকাতে। এ তালিকায় সর্বশেষ নাম জিম্বাবুয়ের কার্ল মুম্বার। দেশের শততম টেস্টে মুশফিকুর রহিম টেস্ট ক্যারিয়ারে পূর্ণ করেছেন ডিসমিসালের সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের শততম টেস্টে ৫টি ক্যাচে এক ম্যাচে সর্বাধিক ক্যাচের রেকর্ড গড়েছেন সৌম্য সরকার।
শ্রীলঙ্কার অভিষেক টেস্ট ভেন্যুতে বাংলাদেশের অতীত ছিল না মোটেও সুখকর, তিন ম্যাচের তিনটিতেই ইনিংস হারকে নিয়তি বলে মেনে নিতে হয়েছে যে দলকে, সেই বাংলাদেশই কি না অতীতের দুঃসহ ভেন্যুতে উড়াল জাতীয় পতাকা! হেরাথের ফুলটস ডেলিভারিতে মিরাজের সুইপ শটে স্কোয়ার লেগে ২ রানের সঙ্গে সঙ্গেই অন্য এক উৎসবে মেতে উঠল বাংলাদেশ। ৪ উইকেটে জিতে শততম টেস্ট উদযাপনে পেলো ভিন্ন মাত্রা। দেশের শততম টেস্ট বিষাদময় হয়ে থেকেছে ইংল্যান্ড, দ.আফ্রিকা, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং জিম্বাবুয়ের। প্রতিরোধ গড়ে নিউজিল্যান্ড শততম টেস্ট পেরেছে ড্র’ করতে। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর দেশের শততম টেস্ট জয় দিয়ে উদযাপনে অন্য উচ্চতায় উঠল বাংলাদেশ। মেলবোর্নে ১৯৭৯ সালে দেশের শততম টেস্টে পাকিস্তানের কৃতিগাঁথার ৩৮ বছর পর বাংলাদেশ গড়ল আর একটি গৌরবগাঁথা। সাকিব, মুশফিক, তামীম, সৌম্য, মোসাদ্দেক, সাব্বির, মিরাজ, মুস্তাফিজে গৌরবময় অধ্যায় রচিত হলো। ১৯১২ সালে অধিনায়ক সিডনি গ্রেগরের হাত ধরে অস্ট্রেলিয়া প্রথম পেয়েছে দেশের শততম টেস্টে জয়ের স্বাদ, ১৯৬৫ সালে সোবার্সের নেতৃত্বে পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ একই অর্জন, ১৯৭৯ সালে মুস্তাক মোহাম্মদের নেতৃত্বে পাকিস্তানের এই কৃতির পাশে লিখিয়েছেন মুশফিক একই গৌরবগাঁথা।
জানেন, শততম টেস্টে জয়ী ইতোপূর্বে জয়ী তিনটি দলের কেউ ম্যান অব দ্য ম্যাচ কিংবা ম্যান অব দ্য সিরিজে হননি ভুষিত। মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চতুৃর্থ ইনিংসে ৯ উইকেটে পাকিস্তানের অসাধ্য সাধন জয়েও গ্রেট পেস বোলার সরফরাজ খান পাননি ম্যাচ সেরার পুরস্কার। কারণ, তখন ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার প্রবর্তিত হয়নি। সে দিক থেকে ভাগ্যবান তামীম ইকবাল (ম্যান অব দ্য ম্যাচ), সাকিব আল হাসান (ম্যান অব দ্য সিরিজ)।
শ্রীলঙ্কার অভিষেক টেস্ট ভেন্যু পি সারা ওভালের যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের অটোগ্রাফ। ২০০২ সালে এই মাঠে প্রথম টেস্ট খেলা বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করে সযতেœ রেখেছে তামিল ইউনিয়ন ক্রিকেট এন্ড অ্যাথলেটিক ক্লাব। তবে ওই অটোগ্রাফের সঙ্গে মিশে আছে দুঃসহ স্মৃতি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের ১৭টি টেস্টে ছিল না বাংলাদেশের কোন জয়। শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রবল পরাক্রমশালী হয়ে ওঠা স্বাগতিকরা যেখানে ক’মাস আগে অস্ট্রেলিয়াকে ৩-০তে করেছে হোয়াইট ওয়াশ, হোমে টানা ৬ টেস্টের সব ক’টি জয়ে সিরিজের ট্রফি জয়ে চোখ ছিল যাদের, সেই শ্রীলঙ্কার মাটিতে তাদের বিপক্ষে প্রথম জয়ে টেস্টের সেঞ্চুরিটা করেছে মুশফিকুররা উদযাপন। দেশের মাটিতে এমন উৎসবের উপলক্ষ্য পায়নি বলে পি.সারা ওভালে ল্যাপ অব অনার দিতে পারেনি, তবে সমর্থকদের কাছ থেকে পাওয়া লাল সবুজ পতাকা নিয়ে ইতিহাসের ফ্রেমে বন্দি হয়েছে বাংলাদেশ দারুণভাবে। শততম টেস্টের সিরিজের নামকরণ ‘জয় বাংলা’, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিকামী বাংলাদেশীদের সেই সেøাগানের নামে ট্রফিটাও যে স্বাধীনতার মাসকে সারা বিশ্বে নুতনভাবে চিনিয়েছে মুশফিকুররা!
ক্রিকেট দলের এমন ইতিহাসে বাংলাদেশ মিডিয়াও যেনো হয়ে গেছে তার অংশ। সমতার সিরিজের ট্রফি হেরাথের কল্যাণে বাংলাদেশ অধিনায়ককে উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে। সেই ট্রফি হাতে বাংলাদেশ মিডিয়াও অংশ নিয়েছে ফটো সেশনে। বাংলাদেশের কাছে টেস্ট হেরে হোমে টানা ৬ জয়ে থেমেছে শ্রীলঙ্কা। দলের বিপর্যয়ে লংকান মিডিয়া ওই দিনকে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের মৃত্যু দিবস বলে উল্লেখ করেছে !
ভাগ্যবান ৪ অধিনায়ক
অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা
২৭ মে, ১৯১২ (ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, ম্যানচেস্টার)
৩ দিনের ম্যাচ, টস : অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস : ১২২.৩ ওভারে ৪৪৮/১০ (জেনিংস ৩২, ক্যালেওয়ে ১১৪, বার্ডসলি ১২১, গ্রেগরী ৩৭, ম্যাথুউস ৪৯*; পেগলার ৬/১০৫, শেওয়ার্জ ৩/১৪২, হোয়াইট ১/২৯)। দ.আফ্রিকা ১ম ইনিংস : ১১৬ ওভারে ২৬৫/১০ (হার্টিগান ২৫, ফকনার ১২২, বেমন্ট ৩১; হুইটি ৫/৫৫, ম্যাথুউস ৩/১৬) এবং ২য় ইনিংস : ২৮.২ ওভারে ৯৫/১০ (নোর্স ১৮, টেইলর ২১, বেমন্ট ১৭; কেলেওয়ে ৫/৩৩, হুইটি ২/১৫, ম্যাথুইস ৩/৩৮)
ফল : অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ও ৮৮ রানে জয়ী।
অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান
১০ মার্চ, ১৯৭৯ (এমসিজি, অস্ট্রেলিয়া)
৫ দিনের ম্যাচ, টস : অস্ট্রেলিয়া
পাকিস্তান ১ম ইনিংস : ৬১.৭ ওভারে ১৯৬/১০ (মুশতাক মোহাম্মদ ৩৬, ইমরান খান ৩৩, শরফরাজ নাওয়াজ ৩৫; হগ ৪/৪৯, হার্স্ট ৩/৫৫, ক্লার্ক ১/৫৬, ¯িøপ ১/১৬)। অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস : ৬১.৬ ওভারে ১৬৮ (বোর্ডার ২০, ইয়ালোপ ২৫, হোয়াটমোর ৪৩; ইমরান ৪/২৬, শরফরাজ ২/৩৯, ওয়াসিম রাজা ২/২৩)। পাকিস্তান ২য় ইনিংস : ৮১.৫ ওভারে ৩৫৩ (মজিদ ১০৮, জহির ৫৯, আসিফ ৪৪, মুশতাক ২৮, ওয়াসিম ২৮, ইমরান ২৮; হগ ৩/৭৫, হার্স্ট ৩/১১৫, বোর্ডার ২/৩৫)। অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস : ৯২.৪ ওভারে ৩১০/১০ (হিলডিচ ৬২, বোর্ডার ১০৫, হিউজ ৮৪; শরফরাজ ৯/৮৬)। ফল : পাকিস্তান ৭১ রানে জয়ী।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ-অস্ট্রেলিয়া
৩ মার্চ, ১৯৬৫ (সাবিনা পার্ক, জ্যামাইকা)
৬ দিনের ম্যাচ, টস : ওয়েস্ট ইন্ডিজ
উইন্ডিজ ১ম ইনিংস : ৬৯.২ ওভারে ২৩৯/১০ (হান্টে ৪১, বুচার ৩৯, সোবার্স ৩০, হোয়াইট ৫৭; হকি ২/৪৭, মাইনে ৪/৪৩, ফিলপট ২/৫৬)। অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস : ৯৫.৪ ওভারে ২১৭/১০ (কাউপার ২৬, ও’নেইল ৪০, থমাস ২৩, ফিলপট ২২, হকি ৪৫; হল ৫/৬০, গ্রিফিথ ২/৫৯, সোবার্স ১/৩০, হোয়াইট ২/৩৪)। উইন্ডিজ ২য় ইনিংস : ১৫২.৪ ওভারে ৩৭৩/১০ (হান্টে ৮১, বুচার ৭১, সলোমন ৭৬, হেনড্রিকস ৩০; মাইনে ৪/৫৬, ফিলপট ৪/১০৯)। অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস : ৭৮.৫ ওভারে ২১৬/১০ (হাওয়েক ৩৩, ও’নেইল ২২, বুথ ৫৬, ম্যাককেঞ্জি ২০; হল ৪/৪৫, গ্রিফিথ ২/৩৬, সোবার্স ১/৪৬)। ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭৯ রানে জয়ী।
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা
১৫ মার্চ, ২০১৭ (পি.সারা ওভাল, কলম্বো)
৫ দিনের ম্যাচ, টস : শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ১৩৩.৩ ওভারে ৩৩৮/১০ (চান্দিমাল ১৩৮, ধনঞ্জয়া ৩৪, ডিকওয়েলা ৩৪, হেরাথ ২৫, লাকমাল ৩৫; মোস্তাফিজ ২/৫০, শুভাশিষ ২.৫৩, মিরাজ ৩/৯০, সাকিব ২/৮০)। বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ১৩৪.১ ওভারে ৪৬৭ (তামীম ৪৯, সৌম্য ৬১, ইমরুল ৩৪, সাব্বির ৪২, সাকিব ১১৬, মুশফিক ৫২, মোসাদ্দেক ৭৫, মিরাজ ২৪; লাকমাল ২/৯০, হেরাথ ৪/৮২, সান্দাকান ৪/১৪০)। শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস : ১১৩.২ ওভারে ৩১৯/১০ (করুণারতেœ ১২৬, থারাঙ্গা ২৬, কুশল ৩৬, পেরেরা ৫০, লাকমাল ৪২; মোস্তাফিজ ৩/৭৮, সাকিব ৪/৭৪)। বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : ৫৭.৫ ওভারে ১৯১/৬ (তামীম ৮১, সাব্বির ৪১, মুশফিক ২২*, মিরাজ ২*; পেরেরা ৩/৫৯, হেরাথ ৩/৭৫)। ফল : বাংরাদেশ ৪ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা : তামীম ইকবাল (বাংলাদেশ)।
শততম টেস্টে জয়ীরা
দেশ অধিনায়ক প্রতিপক্ষ ফল ভেন্যু সাল
অস্ট্রেলিয়া সিড গ্রেগরী দ.আফ্রিকা ইনিংস ও ৮৮ রানে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, ম্যানচেস্টার মে, ১৯১২
ওয়েস্ট ইন্ডিজ গ্যারি সোবার্স অস্ট্রেলিয়া ১৭৯ রানে সাবিনা পার্ক, জ্যামাইকা মার্চ, ১৯৬৫
পাকিস্তান মুশতাক মোহাম্মদ অস্ট্রেলিয়া ৭১ রানে এমসিজি, অস্ট্রেলিয়া মার্চ, ১৯৭৯
বাংলাদেশ মুশফিকুর রহিম শ্রীলঙ্কা ৪ উইকেটে পি সারা ওভাল, শ্রীলঙ্কা মার্চ, ২০১৭
শততম টেস্টে বাকিদের ভাগ্য...
* ১৯০৯ সালের ১ জুলাই লিডসে চীরপ্রতিদ্ব›দ্বী অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১২৬ রানে হেরে যায় ইংল্যান্ড
* ১৯৪৯ সালের ৫ মার্চ পোর্ট এলিজাবেথে ইংল্যান্ডের কাছে ৩ উইকেটে হেরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা
* ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ ব্রাইটনে নিজেদের মাইলস্টোন ম্যাচ নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
* ১৯৬৭ সালের ১৩ জুলাই বার্মিংহামে ইংল্যান্ডের কাছে নিজেদের শততম টেস্টে ১৩২ রানে হেরে যায় ভারত
* ২০০০ সালের ১৪ জুন ঘরের মাঠ কলম্বোতে পাকিস্তানের কাছে ৫ উইকেটে হেরে যায় শ্রীলঙ্কা
* ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর হারারেতে শ্রীলঙ্কার কাছে ২২৫ রানে হেরে যায় জিম্বাবুয়ে
শততম টেস্টের সাফল্যাঙ্ক
দেশ জয় হার সময়কাল
অস্ট্রেলিয়া ৪১ ৪০ ৩৫ বছর ২ মাস ১৩ দিন
ইংল্যান্ড ৪৫ ৩৭ ৩২ বছর ৩ মাস ১৭দিন
দক্ষিণ আফ্রিকা ১৫ ৫১ ৫৯ বছর ১১ মাস ২২ দিন
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৪ ৩৩ ৩৬ বছর ৮ মাস ৯ দিন
নিউজিল্যান্ড ৭ ৪৬ ৪২ বছর ২ মাস ১৪ দিন
ভারত ১০ ৩৯ ৩৫ বছর ১৯ দিন
পাকিস্তান ১৮ ২৬ ২৬ বছর ৪ মাস ২৩ দিন
শ্রীলংকা ১৮ ৩৯ ১৮ বছর ৩ মাস ২৯ দিন
জিম্বাবুয়ে ১১ ৬২ ২৪ বছর ১২ দিন
বাংলাদেশ ৮ ৭৬ ১৬ বছর ৪ মাস ৫ দিন
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন