বসন্তের আগমনে প্রকৃতি যেন রঙিন চাদর গায় দিয়ে সাজে নবরুপে। গাছের ডালের রঙিন ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ায় বুলবুলি, শালিক, ফিঙেসহ নানা রকমের পাখি। আনন্দে এক ডাল থেকে লাফ দিয়ে অপর ডালে ঘুরে বেড়ায়। আর তারই সাথে পাল্লা দিয়েই বলা যায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও যুক্ত হয়েছে একঝাঁক নবীন শিক্ষার্থী। যাদের আগমনে ক্যাম্পাসে এসেছে প্রাণের জোয়ার। ওরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম ব্যাচ। নিজের মনে লালিত স্বপ্নকে রূপ দেয়ার জন্যই এখানে এসেছে ওরা। তারা যেন নতুন ফুলের পাপড়ি স্বরূপ যুক্ত হয়েছে কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের সঙ্গে।
নবীন এ সকল শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে পাহাড়চুম্বী অপার সম্ভাবনা। ভোরের রক্তিম সূর্য যেমন বেলা বাড়ার সাথে সাথে পৃথিবীর বুকে তার বলিষ্ঠ অস্তিত্বের জানান দেয় তেমনি এই শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকেই সেই দৃঢ় প্রত্যাশা নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা মাঠ পেরিয়ে বিশ^বিদ্যালয় নামক আলোর ঘরে তাদের অবস্থান করে নিয়েছে।
দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় হিসেবে ২০০৬ সালে উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করেছিল কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয় তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছরই ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে কিছু মেধাবীদেরকে নিজের পরিবারের সদস্য করে নিচ্ছে দেশের মধ্য-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ। বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই প্রথমেই চোখে পড়ে আধুনিক নয়নাভিরাম একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন। ইট বিছানো রাস্তা ধরে সোজা হাটলে দেখা মেলে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং তার পরে সিমেন্ট ঢালা রাস্তা ধরে হাটলে দেখা যায় বিজ্ঞান অনুষদ। ভবন গুলো পাহাড়ের উপরে হওয়ায় ভবনে ওঠার পথ ও সিঁড়িগুলোকে তৈরি করা হয়েছে শৈল্পিক ধাঁচে।
ছোট-বড় পাহাড়ের উপরে-নিচে, সমতল ভূমিতে স্থাপিত এসব স্থাপনা, বিশ^বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ মনোরম পরিবেশ যে কেউকেই বিমোহিত করে। তাইতো শিক্ষা জীবনের শুরুতেই ¯িœগ্ধ-শীতল পাহাড়ী ক্যাম্পাসের প্রেমে পড়তে বাধ্য হন নবীনরা। যেমনটা বলেছিলেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী জেরিন সুলতানা ও সিরাজুম মনিরা ‘কোলাহলমুক্ত পাহাড়ঘেরা ক্যাম্পাসের এই প্রকৃতি ছোঁয়া পরিবেশ সবচেয়ে বেশি ভাল লাগছে। উচ্চশিক্ষা লাভের পাশাপাশি প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্য উপভোগের অংশীদার হতে পেরেছি যা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যের বিষয়।
নতুন ক্যাম্পাস, নতুন পরিবেশে এসে অনেকেই নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে নানা রকম সমস্যায় পড়তে হয়। আর এসব সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ভাইয়েরা বলছিলেন রসায়ন বিভাগের মাসুদ রানা। কিভাবে সহপাঠীদের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেবো? বড়-ভাইবোনদের সাথে কিভাবে কথা বলবো? এইরকম নানাবিধ জল্পনা-কল্পনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো সিলেট থেকে আসা আইসিটি বিভাগে ভর্তি হওয়া শামিমা খানম তমার। কিন্তু প্রথমদিনে বিভাগে গিয়েই দেখলেন ভিন্ন চিত্র। বিভাগের পক্ষ থেকে আয়োজিত পরিচিতি অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের আন্তরিকতা, বড় ভাই-আপুদের ¯েœহার্দ আচরণে মুগ্ধ তিনি। তিনি বললেন, ‘প্রথমদিনেই ক্যাম্পাসকে ভাল লেগে গেছে। বিভাগের ভাইয়া-আপুদের সৌহার্দ্যতার আভিভ‚ত আমরা। আশা করি আগামী দিনেও এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। ছোট্ট-ছিমছাম এই ক্যাম্পাসকে স্বপ্ন পূরনের হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহার করতে চাই।’
মাত্র পঞ্চাশ একরের ছোট্ট ক্যাম্পাস কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়। বয়সেও নবীন। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য বিশ^বিদ্যালয়ে আবাসিক হল রয়েছে মাত্র চারটি। যেখানে মেয়েদের জন্য মাত্র একটি হলের ব্যবস্থা হয়েছে। এটিই যেন মন খারাপের কারণ হয়ে দাঁড়ালো নবীন শিক্ষার্থী তাসনিম ইসলামের কাছে। বলছিলেন, ‘মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র একটি আবাসিক হল যা আমাদের আবাসন সংকটে ফেলেছে। যদি আরও একটি হল থাকতো তাহলে হয়তো আমরা স্বাচ্ছন্দে আশ্রয় নিতে পারতাম এই চিরসবুজ ক্যাম্পাসে।’
বিশ^বিদ্যালয় জীবনের প্রতিটি সিঁড়িই অত্যন্ত মধুর। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, চায়ের টেবিলে গল্প-খুনসুটির ঝড়, সবাই মিলেমিশে একসঙ্গে চড়–ইভাতি-পিকনিকের আয়োজন এগুলো যেন ক্যাম্পাস জীবনের প্রতিদিনের নিত্য অনুষঙ্গ। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রত্যেকেই ক্যাম্পাসের কোন না কোন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হচ্ছেন। নিজেদের প্রতিভা বিকশিত করছেন বিভিন্নভাবে। এভাবেই প্রতি বছরই কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা থেকে উচ্চশিক্ষা নেিয় বের হচ্ছে দেশের প্রথম শ্রেণির একদল মেধাবীরা। যারা দেশ এবং দেশের বাহিরে সেবা দিচ্ছেন। এই মেধাবীদের পরিশ্রম ও নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে আগামীর বাংলাদেশ।
ষ মাহফুজ কিশোর
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন