বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

জিজ্ঞাসার জবাব

| প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

১। মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ সাফওয়ান, শাহাপুর, কুমিল্লা।
জিজ্ঞাসা : নবজাতকের সুন্দর নাম রাখার গুরুত্ব কতখানি?
জবাব : বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কেয়ামত দিবসে তোমাদেরকে তোমাদের নাম এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের নামানুসারে ডাকা হবে। সুতরাং তোমাদের নামগুলো উত্তম দেখে রাখ। -আবু দাউদ : হাদিস নং ৪৯৪৮
নাম। ছোট্ট একটি শব্দ। এর গুরুত্ব অসীম। অপরিসীম। বিশ্বকাননে নাম একেকটি সুগন্ধি ফুল। নাম বিশ্বালোকের একেকজন সদস্য। আত্মপরিচয়ের প্রধান নিয়ামক হচ্ছে নাম। নাম মানুষের সত্তার পরিচয় বহন করে। শুধু মানুষ নয়; পশুপাখি, গাছপালা, কীটপতঙ্গসহ সবকিছুরই পরিচয় মিলে তার নামের মাধ্যমে। তাই প্রতিটি ভাষায়ই রয়েছে নামের গুরুত্ব। নামের মাধ্যমে যেমন একজন মানুষকে শনাক্ত করা যায়, তেমনি তার ঐতিহ্যের শেকড়ও আবিষ্কার করা যায়। শুধু তাই নয়, নাম স্বীয় অস্তিত্বের সঙ্গেও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
মানুষের নামকরণের ইতিহাস তেমন অস্পষ্ট নয়। পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত মানুষ সৃষ্টি হয়েছে তাদের সবারই একটা নির্দিষ্ট নাম আছে। তবে বিভিন্ন ভৌগোলিক পরিবেশ, ধর্ম, কৃষ্টি, গোষ্ঠী, বংশ ইত্যাদির প্রেক্ষিতে নামের বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। নাম মানুষের পরিচয় বহন করে। নামের মাধ্যমেই মানুষের ধর্ম-কৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়। তাই নাম রাখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
সুন্দর নাম দ্বারা নিজের পরিচয় দিতে ভালো লাগে। তাই যে ভাষারই হোক নাম অর্থবোধক ও সুন্দর হওয়া বাঞ্ছনীয়। একথা অনস্বীকার্য যে, ভাষার কোনো ধর্মাধর্ম নেই। ভাষার কারণে নাম মুসলিম কিংবা অমুসলিম হয় না। নামকরণের ক্ষেত্রে ভাষা মুখ্য নয়। মুখ্য হলো ধর্ম। আর মুসলমানের নামের জন্য পূর্বশর্ত হলো তা শিরকমুক্ত হওয়া। অর্থাৎ নামের অর্থ যদি শিরকযুক্ত হয়, যে ভাষারই হোক তা পরিত্যাজ্য। বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারো অসুন্দর নাম শুনলে আরবি হওয়া সত্তে¡ও তা পরিবর্তন করে সুন্দর ও অর্থপূর্ণ নাম রেখে দিতেন। আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মন্দ নাম পরিবর্তন করে দিতেন। Ñতিরমিযী : হাদিস নং ২৮৩৯
প্রতিটি শিশু কিংবা নবজাতকই সবার কাছে অমূল্য সম্পদ। সবার কাছেই সে আদরের দুলাল। এ আদুরে ধনের প্রতি অভিভাবকের অন্যতম প্রধান কর্তব্য হলো তার সুন্দর ও অর্থপূর্ণ নাম রাখা। অসুন্দর নাম বহন করে যাতে সন্তানকে আজীবন পস্তাতে কিংবা লজ্জিত হতে না হয়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সচেতন অভিভাবকের। নবজাতকের সুন্দর ও অর্থপূর্ণ নাম রাখা মুসলমানের প্রতি ধর্ম কর্তৃক আরোপিত কর্তব্য। এ কর্তব্য পালনে সবার যতœবান হওয়া আবশ্যক।
অর্থবহ ও ঐতিহ্যবাহী নামের প্রভাব অনস্বীকার্য। এ জন্য সমাজ দরদি, গবেষক ও ওলামায়ে কেরাম আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নামের সাথে মিলিয়ে নামকরণের তাগিদ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মনীষীগণ বিশ্বব্যাপী মুসলিম হিসেবে পরিচিতি লাভ করার জন্য আরবি শব্দের নামকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। পরবর্তীতে ফারসি শব্দেও নামকরণের প্রচলন হয়। বাংলাদেশে এমন অসংখ্য পিতামাতা ও অভিভাবক আছেন যারা নিজ সন্তানসন্ততির সুন্দর ও অর্থবহ নামকরণে আগ্রহী। কিন্তু প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও নাম নির্বাচনে কোনো সঠিক নির্দেশনা না থাকার কারণে তাদের পক্ষে তা হয়ে ওঠে না। তাছাড়া ভুলভ্রান্তিমুক্ত অর্থবহ নাম খুঁজে পাওয়াও সহজসাধ্য নয়। সুন্দর অর্থবোধক হলে যেকোনো ভাষার শব্দেই নাম রাখা যেতে পারে। শ্রæতিমধুর ও অর্থবহ একটি নামের জন্য মানুষ উদগ্রীব থাকে। ভালো নাম সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ, রুচি ও কৌতূহল সীমাহীন। যা নিবারণ করা সহজ কাজ নয়। তবে হ্যাঁ! এতদঞ্চলে আরবি কিংবা ফার্সি ভাষায় নাম রাখা ঐতিহ্যগত নিয়মে পরিণত হয়েছে।
প্রতিটি মানুষ তার নামের অর্থ জানতে চায়। শৈশবকালে এর গুরুত্ব বোঝার বয়স না হলেও বড় হয়ে প্রত্যেকেই নিজ নামের অর্থ জানতে উদগ্রীব থাকে। এমনকি নানাজনের কাছে নামের অর্থ জানতে ধরনা দেয়। অনেকে একটি মূল বড় নাম এবং দেশজ শব্দে সহজ ও ছোট একটি ডাকনাম পছন্দ করে থাকে। এ কারণেই প্রতিটি নবজাতকের নাম শ্রæতিমধুর ও অর্থবহ হওয়া বাঞ্ছনীয়। বেখাপ্পা ও অশ্রæতপূর্ব নাম কেউ পছন্দ করে না।
উত্তর দিচ্ছেন : এমএম আনওয়ারুল করীম

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন