প্রতি বছরই বেশ কিছুসংখ্যক ছাত্রছাত্রী অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অংশ নিচ্ছে। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার সুবর্ণ সুযোগ না পেয়ে যারা স্বল্প খরচে বিশ্ব স্বীকৃত সনদের জন্য স্বপ্ন দেখছেন, তারা নিশ্চিন্তে রাশিয়াকে বেছে নিতে পারেন। চিকিৎসাবিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশলবিদ্যায় রুশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান বিশ্বে প্রথম সারিতে। রাশিয়ায় পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার খরচও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম। তাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে রাশিয়ায় গিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহীদের সংখ্যা এখন বাড়ছে এবং অনেকেই এখন বেছে নিচ্ছেন রাশিয়াকে। আর শিক্ষা ক্ষেত্রে রাশিয়া সবসময়ই এগিয়ে থেকেছে।
বাংলাদেশের যেসব শিক্ষার্থী স্বল্প খরচে বিশ্বস্বীকৃত শিক্ষা লাভ করতে চান, তারা নিশ্চিন্তে রাশিয়াকে বেছে নিতে পারেন। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) মধ্যকার মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার্থে রাশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অংশ নিতে রাশিয়ায় যেতে পারেন। রাশিয়ার পড়াশোনার মান বিশ্বস্বীকৃত। দুটি কারণে আপনি রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। এখানে শিক্ষার ব্যয় কম এবং পড়তে যাওয়ার জন্য টোফেল বা আইইএলটিএস লাগে না।
রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য শাখার সব বিষয়ে পড়া সম্ভব। রাশিয়ায় ব্যাচেলর ডিগ্রির মেয়াদ চার বছর, মাস্টার্স ডিগ্রির মেয়াদ দুই বছর, স্পেশালাইজড ডিপ্লোমার মেয়াদ পাঁচ-ছয় বছর। তবে শুরুতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রথম এক বছর রুশ ভাষা শিখতে হবে। কিছু কিছু বিষয়ে ইংরেজি ভাষায় পড়ারও সুযোগ রয়েছে।
ভর্তির সময় ও শিক্ষাবর্ষ : রাশিয়ার শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় সেপ্টেম্বরে। শিক্ষাবর্ষ ২টি সেমিস্টারে বিভক্ত- প্রথমটি সেপ্টেম্বরে এবং দ্বিতীয়টি ফেব্রুয়ারিতে। সেমিস্টার বিরতিতে রয়েছে ছুটি। জানুয়ারিতে দুই সপ্তাহ ও জুলাই-আগস্টে ছয় সপ্তাহ। এ সময় শিক্ষার্থীদের খ-কালীন চাকরির সুযোগও রয়েছে।
শিক্ষা ব্যয় : রাশিয়ায় পড়াশোনার খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। বিজ্ঞান বিভাগের (স্নাতক) জন্য টিউশন ফি দুই হাজার থেকে সাত হাজার ডলার, কলা বিভাগের (স্নাতক) জন্য তিন হাজার দুইশত থেকে পাঁচ হাজার ডলার এবং বাণিজ্য বিভাগের (স্নাতক) জন্য চার হাজার থেকে ছয় হাজার ডলার। রাজধানী মস্কোর বাইরে টিউশন ফি আরও কম। নিজ খরচে রাশিয়ার খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য গড় নম্বর থাকতে হবে ৬০-৭০ শতাংশ। বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে হোস্টেল-সুবিধা, যার জন্য ব্যয় হবে বছরে চারশত থেকে আড়াই হাজার ডলার।
ভিসা ও ভর্তির তথ্য : ঢাকার রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের মাধ্যমে রাশিয়ার যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে। ভর্তির বিষয়ে ফ্রি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই প্রতি মাসের শেষ কর্ম দিবসে বিকেল ৪টায় ঢাকার রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্রে।
বৃত্তি : রুশ সরকার প্রতি বছর বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছু শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে থাকে, যা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানানো হয়। ৮০ শতাংশ নম্বর পেলে বৃত্তির জন্য আবেদন করা যায়। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে রাশিয়া সরকার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাচেলর ও মাস্টার্সসহ ৫০টি বৃত্তি ঘোষণা করেছে। যা রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। আবেদন করার সময়সীমা ৩১ মার্চ ২০১৬। এছাড়া চলতি বছরের বৃত্তির বিষয়ে আরও জানতে চাইলে রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের রাশিয়ায় উচ্চশিক্ষা বিষয়ক সেমিনারে অংশ নিতে পারেন। পরবর্তী সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে ২৯ ফেব্রুয়ারি ও ২৪ মার্চ ২০১৬।
যোগাযোগ : শিক্ষা বিভাগ, রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্র, ৪২, ভাষাসৈনিক এম এ মতিন সড়ক (সড়ক : ৭) ধানম-ি আ/এ, ঢাকা।
ষ সৈয়দ বজলুল হাসান
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন