আব্দুর রহমান : আনন্দ-উচ্ছ্বাসে রঙিন একটি দিন কাটল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের। প্রিয় ক্যাম্পাসে স্মৃতির রোমন্থনে পুরো একটি দিন আনন্দের ভেলায় ভাসলেন দেশসেরা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক-সহপাঠী ও দেশ বরেণ্যদের সঙ্গে মাতলেন ক্ষাণিকটা সময়। প্রাণের বন্ধনে একে অন্যের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে প্রত্যেকেই যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য ফিরে গিয়েছিলেন সেই সব হারানো দিনে। হাতড়ে ফিরেছেন ক্যাম্পাস জীবনের বিগত বছরগুলোর সেই উচ্ছল, বাধাহীন, তারুণ্য ও যৌবনের ছোট গল্পগুলোকে। লিখেছেন মো. আব্দুর রহমান :
বর্ণাঢ্য ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসমুখর পরিবেশে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হলো। মঙ্গলবার সকাল থেকে সমাবর্তন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন থেকে বঙ্গবন্ধু চত্বর মাঠে ছিল বর্ণাঢ্য আয়োজন।
শিক্ষাজীবনের বহু কাক্সিক্ষত এই মাহেন্দ্রক্ষণে আনন্দ ভাগাভাগি করতে নতুন-পুরনো শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়েছিলেন দলবেঁধে। অনেকেই ক্যাম্পাস জীবনের ফেলে আসা সেই সোনাঝরা দিনগুলোতে ফিরে যান। শিক্ষক-সহপাঠী ও দেশ বরেণ্য ব্যক্তিদের সংমিশ্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্থান মহোৎসবে পরিণত হয়। সমাবর্তনে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের চোখেমুখে উচ্ছ্বাস ছাপিয়ে উঠে। বিজয়’৭১, মরণ সাগর, টিএসসি, শহীদ মিনার, জব্বার মার্কেট, কে.আর মার্কেট, করিম ভবনসহ ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটি জায়গায় দেখা যায় আড্ডা। ক্যাম্পাস জীবনের প্রাণের সতীর্থদের স্মৃতি ধরে রাখতে ছবি তোলার মহড়া চলে; ক্যাম্পাসের আনাচ কানাচ থেকে ভেসে আসে ক্যামেরার ‘ক্লিক ক্লিক’ শব্দ।
কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের গ্র্যাজুয়েট এম আনোয়ারুল হক বলেন, ‘গাউন পড়ে ক্যাম্পাসে ঘুরতে ভালো লাগছিল। কিন্তু যখন মনে হচ্ছে আজ থেকে প্রাক্তন হয়ে গেলাম তখন মনটা একটু খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসের সেই দিনগুলোর কথা আজ খুব মনে পড়ছে’।
সমাবর্তনের সময়সূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে শোভাযাত্রাসহ উপস্থিত হন প্রেসিডেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আব্দুল হামিদ। এরপর সকাল ১১টা ৭ মিনিটে সমাবর্তনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট। এরপরই স্বাগত বক্তব্য দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো. আলী আকবর। পরে ১১টা ২৩ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আব্দুল হামিদ গ্র্যাজুয়েটদের হাতে সনদ তুলে দেন। দুপুর ১২টার দিকে চ্যান্সেলরের ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ।
প্রেসিডেন্ট বলেন, সর্বাধিক গৌরবম-িত শিল্প হচ্ছে কৃষি, তাই দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন যুদ্ধে জয়লাভের জন্য কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন অপরিহার্য। দেশের কৃষি খাতে অভাবনীয় সাফল্যের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রেসিডেন্ট বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটসহ অন্যান্য কৃষিবিদ, যারা নিরন্তর গবেষণার মাধ্যমে পরিবেশ উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ সব পর্যায়ে তা দ্রুত হস্তান্তর ও বিস্তারের কাজে নিজেদের সারাক্ষণ নিয়োজিত রেখেছেন।
১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ৫৪ বছরে বাকৃবিতে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র ছয়বার। সর্বপ্রথম ১৯৬৮ সালের ২৮ মার্চ তৎকালীন চ্যান্সেলর আব্দুল মোমেন খানের সভাপতিত্বে বাকৃবিতে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭২ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে দ্বিতীয়, ১৯৯৪ সালের ৫ জুন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে তৃতীয়, ১৯৯৭ সালের ২০ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে চতুর্থ, ২০০৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের সভাপতিত্বে পঞ্চম এবং ২০১১ সালের ৮ মার্চ মো. জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সমাবর্তনে এক হাজার ৯১৯ শিক্ষার্থীকে স্নাতক এবং দুই হাজার ৮৫১ শিক্ষার্থীকে স্নাতকোত্তর এবং ৩৮ শিক্ষার্থীকে পিএইচডি ডিগ্রির সনদ দেওয়া হয়। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। এছাড়া অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। এছাড়া জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপি, মোসলেম উদ্দিন এমপি, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহ উদ্দিন, ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আলী, ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী, পুলিশ সুপার মঈনুল হকসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন