বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষাঙ্গন

বিষাদের মুহূর্তে রঙের উৎসব

| প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দেখতে দেখতে ফুরিয়ে গেল চারটি বছর। শেষ হলো জীবনের বড় একটি অধ্যায়-ক্যাম্পাস জীবন। মনে হয় এইতো সেদিনই এলাম। অথচ চোখের পলকে হারিয়ে গেল সেই সময়গুলো। প্রিয় ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কত না মজার, কত না আনন্দ-বেদনার টুকরো টুকরো স্মৃতি, কত ঘটনা। ইট-পাথরের প্রতিটি দেয়ালের পরতে পরতে জমে আছে অফুরন্ত আবেগ আর ভালোবাসা। এবার যাবার পালা। ছাড়তে হবে প্রিয় ক্যাম্পাস। বেজে উঠেছে বিদায়ের সুর। মনের কোণে জমেছে একরাশ চাপা কষ্ট। তারপরও দুঃখ ভুলে বিদায়লগ্নে খানিকটা আনন্দ আর স্মৃতিবিজরিত করার লক্ষেই শিক্ষার্থীরা পালন করে র‌্যাগ বা শিক্ষা সমাপনী উৎসবের। প্রতিবছরের মতো এবারও টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের (বিটেক) ২০১২-২০১৩ শিক্ষা বর্ষের (৬ষ্ঠ ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা আয়োজন করে এক বর্ণাঢ্য র‌্যাগ উৎসবের। এ উপলক্ষে পুরো ক্যাম্পাস রঙ-বেরঙের বেলুন দিয়ে যেমন সজ্জিত করা হয় তেমনি নানা নকশার আলপনা এঁকে বর্ণিল করে তোলা হয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোও।
বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই চলে প্রস্তুতি। উৎসবকে যে করেই হোক সাফল্যমÐিত করতেই হবে। অন্যবারের চেয়ে করতে হবে আকর্ষণীয়ও। কোনো খামতি রাখা চলবে না-র‌্যাগ ডে কমিটি প্রধান সিরাজের কড়া হুঁশিয়ারি। তাইতো প্রায় প্রতিদিনই নাওয়া-খাওয়া, ঘুম বাদ দিয়ে মিটিংয়ের পর মিটিং করে কাটান ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। একেকজনের ঘাড়ে পরে একেক দায়িত্ব। উত্তেজনার পারদ আরও এক ধাপ চরাতে র‌্যাগ ডের সপ্তাহ দেড়েক আগেই প্রত্যেকের ফেইসবুক প্রোফাইলে যুক্ত হয় ব্যাচের প্ল্যাকার্ড সম্বলিত ফটো।
ভোরের আলো ফুটতেই শুরু হয়ে যায় তোড়জোড়। হলে হলে বাজতে থাকে হরেক রকম গান। পুরো ক্যাম্পাস জুড়েই আমেজ আমেজ ভাব। প্রিন্সিপাল ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. আতাউল ইসলাম কেক কেটে উদ্বোধন করেন র‌্যাগ ডের। যোগ দেন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকমÐলীও। এরপর নানা রঙে মুখ রাঙিয়ে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। শোভাযাত্রায় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে আঁখি, সারা, সুমি নিজেদের সুপ্ত প্রতিভার জানান দেন সকলের সামনে। ফটোসেশন আর সেলফির মাতামাতি স্মৃতির অ্যালবামে ফ্রেমবন্দি করতে সবসময়ই প্রস্তুত থাকে সজীব।
র‌্যালি শেষে চলে কালার ফেস্ট পর্ব। সবাই মেতে ওঠে রং মাখামাখি, কাঁদা ছোড়াছুড়ি খেলায়। হৈ-হুল্লোড়ে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ আবিরের রঙয়ে রাঙিয়ে দেয় একে অন্যকে। রঙয়ের ছটায় তখন চেনার উপায় নেই কে শীর্ষা আর কে সাদিয়া। বাদ যায়নি একে অন্যের টি-শার্টে স্মৃতিকথা লেখাও। কাছের মানুষগুলোর ভালবাসামাখা অব্যক্ত কথাবার্তায় ভরে ওঠে ধবধবে সাদা শার্টগুলো।
বেলা ১২টায় শুরু হয় আনন্দভ্রমণ। গন্তব্যস্থল যমুনার পাড়। আলসে দুপুর নদীর ধারে কাটিয়ে পড়ন্ত বিকেলেই তাগিদ পড়ে ক্যাম্পাসে ফেরার। সান্ধ্য কর্মসূচিতে রাখা হয় বাডি কনফারেন্স, স্মৃতিচারণমূলক প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী, মুভি ফেস্ট, আলোচনা সভা, আতশবাজি ও ফানুস উড়ানো পর্ব।
সত্যিই ক্যাম্পাসে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত কখনোই ভোলার নয়। প্রতিটি মুহূর্তই স্বর্ণের মতোই উজ্জ্বল, দীপ্ত। দলবেঁধে এক সাথে ঘুরা, এক সাথে গলা ছেড়ে গান, আড্ডা, আরও কত কি! জীবনের বাঁকে বাঁকে সেই স্মৃতিগুলোই উঁকি দেবে প্রত্যেক ৬ষ্ঠের-ই হৃদয়পটে।
ষ আবীর বসাক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন