শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

জিজ্ঞাসার জবাব

| প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

১। শেখ মোহাম্মদ মোহাইমিনুল ইসলাম মাহির, ভৈসের কোট, কুমিল্লা।
জিজ্ঞাসা : গান বাজনা; কোরআন হাদিস কী বলে?
জবাব : ইসলামের দৃষ্টিতে গান-বাদ্য হারাম পাশাপাশি ক্রীড়া কৌতুকেরও রয়েছে এক নির্দিষ্ট সীমারেখা। কেননা গান-বাদ্য, ক্রীড়া কৌতুক মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রাখে এবং পাপাচার কাজে প্রেরণা জোগায়। মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘এক শ্রেণির লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং তাকে (কোরআন) নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রæপ করে তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি’।
(সুরা লুকমান-০৬) উক্ত আয়াতে অবান্তর কথা দ্বারা এমন কাজ বুঝানো হয়েছে যা মানুষকে আল্লাহর জিকির থেকে বিরত রাখে। অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামগণের মতানুযায়ী এ কথার দ্বারা বিশেষভাবে ‘গান’ বুঝানো হয়েছে। হযরত ইবনে জারীর, ইবনুল মুনযির, ইবনে আবু শায়বা এবং বিশিষ্ট তাবিঈ আবু সাহবীও উপরিউক্ত মত পোষণ করেছেন। আবু সাহবা বলেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কে এ আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এর দ্বারা গানই বুঝানো হয়েছে। অন্যান্য তাফসির বিশাদরগণও অবান্তর কথার ব্যাখ্যা গানই বুঝিয়েছেন। (তাফসিরে রুহল মাআনী৭/৬৭
তাফসিরে মাযহারি-২/২৪ তাফসিরে কুরতুবী-১৪/৫১ তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন-৭/৯) আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন ‘তোমরা ক্রীড়া কৌতুক (গানবাজনা) করছো’-
সুরা নাজম, আয়াত ৬১ : এ আয়াতে ‘সামিদ’ শব্দের অর্থও হলো গানবাজনা করা। রঈসুল মুফাসসির হযরত ইবনে আব্বাস রা. আয়াতের শেষাংশে ‘সামিদ’ শব্দের ব্যাখ্যা গানবাজনা বলেছেন।
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তুই সত্যচ্যুত করে তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস স্বীয় আওয়াজ দ্বারা, স্বীয় অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে তাদের আক্রমণ কর, তাদের অর্থ সম্পদ ও সন্তান সন্ততিতে শরিক হয়ে যা এবং প্রতিশ্রæতি দে। ছলনা ছাড়া শয়তান তাদের কোনো প্রতিশ্রæতি দেয় না।’
(সুরা বনি ইসরাঈল-৬৪) উপরিউক্ত আয়াতের ‘ছাওত’ শব্দের অর্থ আওয়াজ। শয়তানের আওয়াজ কি এ সম্পর্কে ইবনে আব্বাস রা. বলেন, গান বাদ্য, যন্ত্র, রং-তামাশার আওয়াজই শয়তানের আওয়াজ। এর মাধ্যমে সে মানুষকে সত্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। (তাফসিরে কুরতুবি ১০/২৯০ ও মাআরিফুল কোরআন ৭৮৩) হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, হযরত রাসুল সা. ইরশাদ করেন, ‘গানবাদ্য শ্রবণ করা কবিরা গুনাহ এবং গানের অনুষ্ঠানে বসা ফাসিকী আর এর দ্বারা আনন্দানুভব করা কুফরী।
(আবু দাউদ ৬৭৪ শামি ৬/৩৬৯)
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমার উম্মতের মাঝে এমন কিছু লোক হবে যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে’ । (বুখারি ২/৮৩৭) হযরত নাফে রা. বলেন, আমি একদা ইবনে ওমর রা. সাথে পথ চলছিলাম। তখন তিনি বাঁশির শব্দ শুনলে তার আঙ্গুলদ্বয় কর্ণদ্বয়ে স্থাপন করলেন এবং রাস্তা ত্যাগ করে অন্য রাস্তায় অগ্রসর হলেন। কিছু দূরে গিয়ে বলেন, হে নাফে তুমি কিছু শুনতে পাচ্ছ কি? আমি বললাম জ্বি না। তখন তিনি আঙ্গুলদ্বয় কান থেকে সরালেন। অতঃপর বলেন, আমি একদা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন সাথে ছিলাম তখন বাঁশির শব্দ শুনতে পেয়ে আমি যেমন করলাম তিনিও ঠিক
তদ্রæপ করেন। (আবু দাউদ ৬৭৪)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘গায়ক ও গান শ্রবণকারীর ওপর আল্লাহর অভিশাপ। (তিরমিযি শরিফ)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘গান মানব অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে; যেমন পানি রবিশষ্য উৎপাদন করে’। (রুহুল মাআনী ৭/৬৮)
হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস করার জন্য আমি প্রেরিত হয়েছি’।
(আবু দাউদ শরিফ-৬৭৪) ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই এই উম্মত ভূমিধস, উৎক্ষেপণ ও বিকৃতি সাধন হবে, যখন তারা মদ পান করবে, গায়িকা দ্বারা গানের আয়োজন করবে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজাবে’। (মুসাদে আহমদ, রুহল মাআনী ৭/৭৬) তাই! আসুন আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে আদর্শ করে গড়ে তুলতে এসব পাপাচার কাজে নিজেও না জড়াই এবং তাতে কোনোভাবে সহযোগিতা না করে বরং তার প্রতিকারে প্রতিবাদের হাতকে শক্তিশালী করি। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুণ।
উত্তর দিচ্ছেন : মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন