সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে : স্বাধীনতার ৪৬তম বার্ষিকীতে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে লাখো জনতার ঢল নেমেছিল।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার ভোর ৬টার দিকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে উপস্থিত হয়ে ফুল দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুন সুর। তিন বাহিনীর সু-সজ্জিত একটি চৌকশ দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে স্মৃতিসৌধে ফুল দেন।
১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর দমন অভিযানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা। বরাবরের মতোই রাষ্ট্রীয়ভাবে দিনটিকে পালন করা হচ্ছে জাতীয় দিবস হিসেবে।
শহীদদের বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে জঙ্গিবাদের ‘প্রধান পৃষ্ঠপোষক’ আখ্যায়িত করে সা¤প্রদায়িক অপশক্তি ও স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি এই জঙ্গিদের মদদ দিচ্ছে এবং পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তা না হলে তাদের (জঙ্গি) এতটা আশকারা পাওয়ার কথা ছিল না।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কারণে মাঝখানে কিছুদিন জঙ্গিরা চুপচাপ থাকলেও চলতি মাসের শুরু থেকে আবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।
সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, আসুন, সা¤প্রদায়িক অপশক্তি, স্বাধীনতার যারা শত্রু এদের প্রতিহত করি।
সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করার পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শুরু হয়।
এদিকে অন্যান্যবার সূর্য ওঠার আগেই জাতীয় স্মৃতিসৌধে সাধারণ মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করলেও এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। লোক সমাগম ছিল খুবই কম। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে সাধারণ দর্শনার্থীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
সকাল সাড়ে ৯টায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এসময় তার সাথে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আমানউল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন ও শামা ওবায়েদ ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, যে জন্য আমরা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলাম, মানুষের সেই স্বাধীনতা আজ নেই, মানুষের ভোটের অধিকার নেই। যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, সেই স্বপ্ন নিয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র রক্ষা করব।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, মানুষের জীবন আজ দুর্বিষহ। সাধারণ মানুষের কথা বলা, গণতন্ত্র যেভাবে পাকিস্তানিরা কেড়ে নিয়েছিল, সেভাবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারও কেড়ে নিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র রক্ষায় যে শক্তি নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, সেভাবে দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামকে সেই শক্তি দিয়েই এগিয়ে নিয়ে যাব।
এছাড়া পরে পর্যায়ক্রমে জাতীয় স্মৃতি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন, জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ, সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, সাভার প্রেসক্লাব, আশুলিয়া প্রেসক্লাব, গণতন্ত্রী পার্টি, গণফোরাম, জাতীয় পার্টি, যুবলীগ, যুবদল, যুব ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, জাসদ ছাত্রলীগ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, কৃষক লীগ, কৃষক দল, কৃষক সমিতি, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, বঙ্গবন্ধু সংসদ, জাসাস, মহিলা পরিষদ, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংগঠন পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানায় শহীদদের প্রতি। একই সাথে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামসহ মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সংগঠন ছাড়াও ফুল দেয় আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা ছাত্র কমান্ড, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংসদ (জাসাস), বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, জাতীয় শ্রমিক লীগ, ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি, ঢাকা জেলা ছাত্রদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠেী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, গণবিশ্ববিদ্যায়, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (সনাক)সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন