ক্লাস-পরীক্ষা আর ইট কনক্রিটে একঘেয়ে শিক্ষাজীবন প্রায়ই ক্লান্ত হওয়ার উপক্রম হয়। অবসর যেন শরীর, মন আর সময়ের একান্ত দাবি। এমন পরিস্থিতে সব কাজ ফেলে কোথাও গিয়ে আনন্দ উল্লাসে কাটাতে কার না মন চায়! আর তা যদি হয় কোন ঐতিহাসিক বা প্রতœতাত্তি¡ক গুরুত্ববহ স্থান ভ্রমণ করার পালা তাহলে তো আর কথাই নেই। তাইতো বেরিয়ে পড়ল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নওগাঁ ছাত্র কল্যাণ সমিতির সদস্যরা। দিনটি ছিল শুক্রবার, গত ১০ ফেব্রæয়ারি। সকাল ৮টায় শহীদ মিনার থেকে বাস ছেড়ে যায় বহু গুণীজন আর সাহিত্যিকদের স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের দিকে। রাস্তায় ভোগান্তির জ্যাম ছিল। কিন্তু আমাদের আনন্দের কাছে তা ছিল তুচ্ছ। বাস যেন ছিল একটা চলমান আনন্দ-উল্লাস এক্সপ্রেস। সাথে বর্তমান শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন শিক্ষকও ছিলেন। বাংলা বিভাগের আহসান ইমাম এবং লোক প্রশাসনের সায়বা ম্যাডাম। শিক্ষক হলে কি হবে তারাও নওগাঁর লোক। সুতারাং নওগাঁর লোক হয়ে নওগাঁর লোকদের আনন্দে কোন প্রকার আপত্তি তাদের ছিল না। শিক্ষক মানেই যেন ফরমালাটিসের অ্যাকাডেমিক গম্ভীর একটা ভাব ভাব ব্যাপার তো তাই বলছিলাম আর কি বিষয়টা।
ক্যাম্পাসের প্রাক্তন ভাই আপুরাও সাথে যোগ দিয়েছিলেন। বাসের মধ্যে অনেক মজা হয়। প্রায় দুপুরে আমরা ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা জমিদার বাড়িতে যেতে সক্ষম হই। বিশাল ও সুন্দর জমিদারবাড়ি। বাংলাদেশ প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তর এখনও কাজ করছে। প্রাসাদটা দেখে মনে হল জমিদার নারায়ণ চন্দ্র এখনও ক্ষমতার মসনদে বসে আছেন। পাশেই দীঘি আছে। যা খুব প্রাচীন বলে মনে হল তার হালের সুরাতে। দীঘির পানিতে মাছের রাজত্ব লক্ষ করা যাচ্ছিল উপর থেকেই। হয়ত জমিদারের অভাবে পানিতে তারা নিজেদের মত এক রাজত্ব গড়ে নিয়েছেন। এখানে খুব সুন্দর মিস্টির মন্ডা পাওয়া যায়।
এরপর আমরা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। সেখানে নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমিতির সভাপতি ড. সামসুল আলম এবং সম্পাদক আজিজুর রহমান আমাদের সাথে যোগ দেন। আমরা সেখানে ফিস মিউজিয়াম পরিদর্শন করি ও মধ্যাহ্ন ভোজ শেষ করি।
এরপরে জাম প্লাজা পরিদর্শন করান বাকৃবি নওগাঁ জেলা সমিতির সভাপতি ড. শামসুল আলম। নবীনবরণ ও জেলার সাবেক শিক্ষার্থীদের বিদায় দেয়ার পর্বটাও সেরে নেয়া হয় এই ভ্রমণে। ছোট্ট একটা পর্বে বক্তব্য প্রদানকালে জাবি নওগাঁ জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির সভাপতি আশিক রিয়াজ এবং সম্পাদক সৈকত আজীম বলেন, আমরা শুধু নিজের জন্যই উচ্চ শিক্ষা নিব না, বরং উচ্চ শিক্ষার সাথে আমাদের কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। একই এলাকার মানুষ একসাথে মিলে মিশে থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ। সেই উদ্দেশ্যেই জেলা সমিতির ব্যানারে একত্রিত হওয়া। এভাবে আমাদের বন্ধন আরও দৃঢ় হবে। র্যাফেল ড্র এর পুরস্কার বিতরণ করা হয়। একদিনের আনন্দ উল্লাস ছেড়ে রাত সাড়ে বারাটা নাগাত আবার আমরা পৌঁছাই সবুজের ক্যাম্পাসে। স্মৃতিতে ততক্ষণে সবাই ভরে ফেলেছে একটা সুন্দর একদিনের ভ্রমণের সতেজ চিত্র।
ষ ওয়ালীউল্লাহ মিঠু
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন