স্টাফ রিপোর্টার : সংসদ ও রাজনীতিতে তরুণ সমাজের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে কাজ করবে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ)। সংস্থাটির তরুণ এমপিদের ফোরাম ‘ফোরাম অব ইয়ং পার্লামেন্টারিয়ানস’-এর দাবির প্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মেলনের সমাপনী সেশনে ‘সংসদ এবং রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ’ বিষয়ক আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সেশন থেকেই তরুণ এমপিদের প্রস্তাব গ্রহণ করে আইপিইউ সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের নিজ নিজ সংসদে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
সেশন শেষে আইপিইউর সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুংগং বলেন, এ সংস্থায় তরুণদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত করছি। তরুণদের সংসদ এবং রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে হবে। সব ফোরামে তাদের বেশি বেশি কথা বলার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। তিনি বলেন, আইপিইউ এবং জাতিসংঘের মধ্যে সমন্বয় রয়েছে। জাতিসংঘের কাঠামোর বাইরে আমরা কিছু করতে চাচ্ছি না। তবে তাদের সহায়তা নিয়ে আইপিইউর প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য তাদের নীতিগুলো সহায়ক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
তরুণদের সেশনে আইপিইউ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আইপিইউতে নারীদের অংশগ্রহণ খুবই কম। সারাবিশ্বে ৩০ ভাগের কম তরুণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব করছে। সংসদসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে তরুণদের যদি অন্তর্ভুক্ত করতে পারি তাহলে আরো ভালো হবে।
এ বিষয়ে নামিবিয়া সংসদের স্পিকার কার্টিন বলেন, তরুণদের সমাজের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হলে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে তাদের রক্ষা করতে হবে। আর অশিক্ষিত জাতির দুর্নাম ঘুচাতে হলে প্রাইমারি পাস করার আগে যে স্টেপগুলো রয়েছে সেখানে মনোযোগ বেশি করে দিতে হবে, যাতে একজন কিশোর-কিশোরীও শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়। এসব বিষয় নিশ্চিত হলে সামাজিক উন্নয়নে তরুণদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
সম্মেলনের চতুর্থ দিনে গত মঙ্গলবার ১২৮টি দেশের এমপিদের ওপর ‘ইয়ুথ পার্টিসিপেশন ইন ন্যাশনাল পার্লামেন্ট ২০১৬’ শীর্ষক এক গবেষণা জরিপ তুলে ধরে ফোরাম অব ইয়ং পার্লামেন্টারিয়ানস। ওই জরিপে বলা হয়, বিশ্বে ১২০ কোটি তরুণ ভোটার রয়েছে। যাদের ৫৭ শতাংশের বয়স ২০ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে। কিন্তু বৈশ্বিকভাবে ৩০ বছরের কম বয়সী মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ এমপি প্রতিনিধিত্ব করছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হওয়ায় এমপি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তুলনামূলক চিত্রে দেখা যায়, বিশ্বে এমপিদের মধ্যে ৩০ বছরের নিচে রয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ, ৪০ বছরের নিচে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং ৪৫ বছরের নিচে বয়স রয়েছে ২৬ শতাংশ এমপির। যদিও গবেষণা তথ্যে বলা হয়েছে, ২০ থেকে ৪৪ বয়সসীমার ভোটার রয়েছে ৫৭ শতাংশ, যার সংখ্যা ১২০ কোটি।
প্রতিবেদনে তরুণ পুরুষ ও নারী এমপিদের অনুপাত নির্ণয় করে বলা হয়েছে, বৈশ্বিকভাবে তরুণ এমপিদের মধ্যে পুরুষ ও নারীর অনুপাত হচ্ছে ৬০ অনুপাত ৪০। মাত্র ৯টি দেশের সা¤প্রতিক নির্বাচনে ৪৫ বছরের নিচের বয়সী ৫০ শতাংশের অধিক এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আবার বিশ্বের ১ তৃতীয়াংশ দেশের নি¤œ কক্ষে কোনো তরুণ পার্লামেন্টারিয়ান নেই, যাদের বয়স ৩০-এর নিচে।
তরুণ এমপিদের সংগঠন ‘ফোরাম অব ইয়ং পার্লামেন্টারিয়ানস’- এর প্রেসিডেন্ট উগান্ডার ২৬ বছর বয়সী তরুণ এমপি মাউরিন অসরো জানান, সংসদে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব খুবই নগণ্য, যা খুবই হতাশাজনক।
আইপিইউ সম্মেলনে মাত্র ৩০ বছরের নিচে পার্লামেন্টারিয়ান রয়েছেন ১২ জন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তরুণরা রাজনীতিতে আসতে চাইলেও তাদের নানা ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। বিশেষ করে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নমিনেশন পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে। এছাড়া রাজনীতি চর্চার সুযোগ কম থাকা, অর্থের অভাব, ভোটারদের আস্থার অভাব ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এসব কারণে পার্লামেন্টে তরুণরা রাজনীতিতে আসতে অনীহাও প্রকাশ করেন। তিনি তরুণদের পার্লামেন্টে আনতে প্রয়োজনে কোটার ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন