* গোটা জাতি যখন স্তম্ভিত তখন প্রধানমন্ত্রীর মুখে হাসি
* মোদীর কাছে এটি সোনালি পর্ব আমাদের কাছে ধূসর
স্টাফ রিপোর্টার : জনমতকে তাচ্ছিল্য করে ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক সই করে সরকার দেশের জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। নরেন্দ্র মোদীর কাছে ঘটনাটি সোনালি পর্ব, কিন্তু এদেশের মানুষের কাছে এটি অমানিশার পর্ব, একটি ধূসর পর্ব। গোটা জাতি নির্বাক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখে তখন ক্ষমতায় টিকে থাকার হাসি দেখেছে দেশবাসী। গতকাল দুপুরে দিল্লিতে দুই দেশের মধ্যে তিনটি প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারকসহ ২২টি চুক্তি সইয়ের পর বিকালে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, জনগণকে অন্ধকারের মধ্যে রেখে, কোনো কিছু না জানিয়ে গণমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ভারতের সাথে ২২ চুক্তি এবং ৪ সমঝোতা স্মারকে সই করছেন। এর মধ্যে তিনটি প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারকে সই করা হয়েছে।
আমরা মনে করি, এটা সম্পূর্ণভাবে জনমতকে তাচ্ছিল্য করে এই প্রতিরক্ষা সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করা হলো। এটি দেশ ও জনগণের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। প্রতিরক্ষা সহযোগিতাবিষয়ক সমঝোতা স্মারকে সই করার আগে দেশের জনগণকে একটি শব্দও অবহিত না করাÑ এটা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে অভিযোগ করেন রিজভী।
রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশ ও দেশের জনগণকে কোনো মর্যাদা দেয় না। তারা শুধুমাত্রই রক্ষা করতে চায় এদেশের একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে যারা এখন জোর করে ক্ষমতায় আছে। তাদেরকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য তারা (ভারত) কূটনীতিক পাঠিয়েছিলেন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রাক্কালে। তাদের অশুভ ইচ্ছা একটি রাজনৈতিক দলকে যেনতেন। আমরা ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা সেটারই ক্রমাগতভাবে প্রতিফলন এখন দেখতে পারছি।
তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে অহংকারের যে জায়গা, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার যে বিষয়টি সেটি হচ্ছে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সেই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উন্মোচন করে দেয়া হলো ভারতের কাছে। আমাদের নিরাপত্তা, আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন করার মতো একটি জায়গায় উপনীত হলো এই প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারকে সই করে। এই সরকার জনমত ও মানুষের প্রতি যে মর্যাদা, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে তাচ্ছিল্য করে এই স্মারকে সই করা হয়েছে।
দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউজে সংবাদ সম্মেলনে সঞ্চালকের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাসির বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রিজভী বলেন, আমরা গণমাধ্যমে এও দেখেছি, সঞ্চালকের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রীর হাসি আর থামছে না। কারণ তিনি এমন একটি কাজ করেছেন, গোটা জাতি যখন স্তব্ধ, গোটা জাতি নির্বাক স্বীয় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব যখন বিপন্ন হওয়ার পথে তিনি তখন তার সহযোগীদের সন্তুষ্ট করাতে এই হাসি হাসছেন।
কিন্তু বাংলাদেশের হৃদয়ে যে কান্না ঝরে পড়ছে, সেটি তিনি উপলব্ধি করতে পারছে না। কীভাবে একটি দেশকে ক্রমান্বয়ে আরেকটি দেশের নিরাপত্তা কাঠামোর মধ্যে ঠেলে দিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাকে দুর্বল করলেন, সেটি তিনি (শেখ হাসিনা) উপলব্ধি করেছেন ঠিকই কিন্তু তিনি তার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এটি করেছেনÑ এজন্য তিনি হাসছেন।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন সোনালি পর্বে- ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, উনি (নরেন্দ্র মোদী) ঠিকই বলেছেন। কারণ বাংলাদেশ থেকে যা পেয়েছেন, এটা তাদের কল্পনাতীত ছিল। কোনো জাতীয়তাবাদী সরকার থাকলে এতটা পেতেন না। অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকত, বৈদেশিক সম্পর্ক থাকত, কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকত, বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকত। কিন্তু কোনো দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী সরকার নিজের দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অন্য দেশের হাতে তুলে দিত না।
যেহেতু ভোটারবিহীন সরকার এটি করেছেন, এজন্য এটি একটি সোনালি পর্বে আছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের কাছে এটি একটি অমানিশার পর্ব, এটি একটি ধূসর পর্ব।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিরক্ষার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জনগণকে অন্ধকারে রেখে এটা করেছে। তাহলে নিশ্চয়ই জনস্বার্থে করা হয়নি, দেশের স্বার্থে করা হয়নি। জনস্বার্থে করলে আগেই এ বিষয়টা জনগণকে জানাতেন। জোর করে যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের স্বার্থেই এই স্মারকে সই করেছেন। নিরাপত্তা বা প্রতিরক্ষা এটি একেবারে নিজস্ব ব্যাপার। এটাকে আমরা কিভাবে আধুনিকায়ন করব, এটাকে কীভাবে আরো বেশি শক্তিশালী করব, বিশ্বের সাথে কমপিট করার জন্য গড়ে তুলব, এটা একেবারে আমাদের দেশের পলিসি মেকারদের ব্যাপার।
তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তির বিষয়ে রিজভী বলেন, তিস্তা চুক্তি এ দেশের মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন। যেটা জীবন-মরণের প্রশ্ন, সেটা নিয়ে তো বাংলাদেশের সরকারের কোনো সংগ্রাম নেই। এটা নিয়ে তো তারা করবেন না। কারণ এটা নিয়ে যদি দর কষাকষি করেন, তাহলে তার বন্ধুরা বিরক্ত হবেন, অসন্তুষ্ট হবেনÑ এই কারণে তারা এই চুক্তি করছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কেন্দ্র নেতা হারুনুর রশীদ, আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন