বস্ত্র শিক্ষায় দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্রিটিশ আমলে ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় টাঙ্গাইল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট (টিটিআই)। তবে জন্মলগ্নে বয়ন বিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করার পরে ১৯৫৪ সালে নামকরণ করা হয় জেলা বয়ন বিদ্যালয়। পরবর্তীতে স্বাধীনতার পরে ১৯৮০ সালে স্কুলটিকে জেলা টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে উন্নীত করে দুই বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্স চালু করা হয়। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স প্রবর্তন করা হয়। পরে ২০০১ সালে এই কোর্সকে চার বছরে উন্নীত করে টাঙ্গাইল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট নামে নবোদ্যমে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যেই হাঁটি হাঁটি পা পা করে ১০৫ বছর পূর্ণ করেছে।
শহরের প্রাণকেন্দ্র হতে ২ কি.মি দক্ষিণে বাজিতপুর রোডে কোলাহলমুক্ত সবুজ পরিবেশে ৫ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে এই ক্যাম্পাস। একাডেমিক, প্রশাসনিক, আবাসিক ভবনযুক্ত এই প্রতিষ্ঠানটিতে কোর্স পরিচালনার জন্য রয়েছে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকÐলী। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম ও পৃথক ল্যাব। বর্তমানে ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পাশাপাশি দেশের একমাত্র ডিপ্লোমা ইন জুট টেকনোলজি ডিগ্রি গ্রহণের ব্যবস্থা আছে এখানে। ফ্যাশন ও ডিজাইনের উপর উচ্চতর কোর্স চালু করার অপেক্ষায় প্রতিষ্ঠানটি। সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর এই বিদ্যাপীঠে মেয়েদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের জন্যে আছে ১০ শতাংশ সংরক্ষিত আসন। তাত্তি¡ক শিক্ষার পাশাপাশি হাতে-কলমে শেখার জন্যে রয়েছে ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং ল্যাব, ওয়েট প্রসেসিং ল্যাব, ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ল্যাব, অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ল্যাবসহ পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন ল্যাব। নিজস্ব পরিবহন সুবিধা, সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট ব্যবস্থাসহ রয়েছে প্রায় ৫ সহস্রাধিক বই সংবলিত সমৃদ্ধ ডিজিটাল লাইব্রেরি।
১০৫ বছরের পথ পরিক্রমায় শিক্ষার্থীরা ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশসমূহ সফরের সুযোগ পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে চালু আছে মেধাবী বৃত্তি ব্যবস্থার। তাছাড়া বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি-বৃক্ষরোপণ, মাদকবিরোধী সমাবেশ, এসিড সন্ত্রাসবিরোধী মানববন্ধনে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের স্বত্বঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। প্রতিষ্ঠানটির সাথে ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের টেলফোর্ড-কার্ডোনাল্ড কলেজের রয়েছে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। বিভিন্ন সময় নানা দেশ থেকে প্রতিনিধিবৃন্দের আগমন ঘটে থাকে প্রতিষ্ঠানটিতে।
রাজনীতিমুক্ত এই ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষকের গভীর মৈত্রী প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। শিক্ষার্থীদের বন্ধন সুদৃঢ় ও অধিকার সুরক্ষার জন্যে রয়েছে প্রাণের সংগঠন “ইসাথি”। স¤প্রতি প্রতিষ্ঠানটির ১০৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে সংগঠন ইসাথির উদ্যোগে এক পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়। এদিন নবীন-প্রবীণদের আড্ডা-আনন্দ এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো ক্যাম্পাস।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলী তৈরীর সূতিকাগার এই প্রতিষ্ঠান থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দশ হাজার প্রকৌশলী কোর্স সম্পন্ন করে দেশে-বিদেশে সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। কেউ গড়ে তুলেছেন নিজের পোশাক কারখানা আবার কেউবা নিজ কর্মক্ষেত্রে আলো ছড়াচ্ছেন।
এই দীর্ঘসময়ে প্রতিষ্ঠানটি পার করেছে নানা চড়াই-উতরাই পথ। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্তে¡ও দেশের অর্থনীতিতে নীরব ভূমিকা রেখে চলেছে প্রতিনিয়তই। শতবর্ষী এই বিদ্যাপীঠের ভবিষ্যত চলার পথ আরো উজ্জ্বল হবে এমন প্রত্যাশা সকলের।
ষ আবীর বসাক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন