শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষাঙ্গন

নবীন পরশে টুকরো স্মৃতি!

| প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ যাত্রা শুরু করে ১৯৮৮-৮৯ শিক্ষাবর্ষে। এরইমধ্যে বিভাগটি ২৯ বছর পার করেছে। এরইমধ্যে অনেকেই বিচারপতি হয়েছেন কেউ বা ব্যারিস্টার আবার কেউ বা বিখ্যাত আইনজীবী আবার কেউবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন। কিন্তু কেউই নিজের নীড়কে ভুলে যাননি। তাইতো আইন বিভাগের প্রথম অ্যালামনাই সম্মেলনে যোগ দিতে ছুটে এসেছেন দূর থেকে। প্রথম অ্যালামনাই সম্মেলন উপলক্ষে আইন বিভাগ সেজেছিল বর্ণিল সাজে। বিভাগের মেঝেতে আল্পনা অঙ্কনসহ আরও কত কি! সিঁড়ি, প্রবেশপথ বেলুন ও ফুলের রঙিন সাজে মোড়ানো হয়।
তাই বলে নিজেদেরকে সাজাতে কিন্তু ভুল করেনি কেউ! মেয়েরা লাল শাড়ি আর ছেলেরা লাল পাঞ্জাবি বা স্যুটÑকোর্ট-টাই। এবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় বহু কাক্সিক্ষত সম্মেলনের মূল কর্মসূচি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতল বাসে অ্যালামনাইগণ মীর মোশাররফ হোসেন আইন অনুষদের আগমন করেন। বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সারি বদ্ধভাবে তাদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। সাবেক শিক্ষার্থীরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন বিভাগ তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমূল পরিবর্তন। তাদের সাথে আসা নিজেদের ছেলেমেয়েদেরকে দেখান নিজেদের ক্যাম্পাস। সাবেক শিক্ষার্থী শুয়াইব আহমেদ এসেছিলেন তার দুই ছেলে কে নিয়ে। তিনি বলেন, “নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ছেলেমেয়েদের পরিচয় করিয়ে দিতে, ক্যাম্পাসের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো দেখাতেই সন্তানদের সাথে নিয়ে আসা।” বিভাগের দিকে এগিয়ে যেতেই বেজে ওঠে সাঁনাই আর ঢোল। নবীনÑপ্রবীণ সকলে মেতে ওঠে এক চিরচেনা উচ্ছাসে। এ যেন একটা চক্র যা সাইক্লিক আকারে ঘূর্ণায়মান নবীনÑপ্রবীণের বন্ধন। সকাল ১০টায় শুরু হয় র‌্যালি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসন ভবনের সামনে আসে সুদীর্ঘ র‌্যালিটি। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারীর নেতৃত্বে সকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান কেন্দ্রীয় মিলানায়তনে প্রবেশ করে।
বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও মুসলিম বিধান বিভাগের অ্যালামনাই এসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত ১ম অ্যালামনাই সম্মেলনের আলোচনা সভা শুরু হয়। বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিদা আক্তার ও শাকিল আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত¦ করেন আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. জহুরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান, কোষাধ্যাক্ষ ও বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক ড. সেলিম তোহা। এছাড়াও সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মাদ আলী, সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ রুমী প্রমুখ।
এরপর সকলের মাঝে দুপুরের খাবার বিতরণ করা হয়। আইন বিভাগের কৃতি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কর্ম ও আড্ডার স্থলগুলোও কিন্তু ভুলে যাননি। বিরতির এক ফাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করেন জাকারিয়া হায়দার ও আলতাফ হোসেন। তারা বলেন, “আমাদের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। অনেক প্রতিক‚লতার ভেতরেও আমরা সাংস্কৃতিক আন্দোলন চালিয়েছি। বর্তমান প্রজন্ম যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে আরও বেশি সমৃদ্ধ ও এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে সে কামনা রইল।” এ সময় তারা কিছু সুমধুর স্মৃতি চারণ করেন। বিকাল ৪টার দিকে বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. খন্দকার তৌহিদুল আনাম ও অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রুমীর নেতৃত্বে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিকাল ৫টা থেকে শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মনোমুগ্ধকর সব উপস্থাপনে মেতে ওঠে সকলে। নবীন-প্রবীণ সকলের সম্মিলিত উচ্ছ¡াস দেখে একটা কথায় মনে পড়ছিলÑ “অদ্য নবীন হবে যে প্রবীণ, সূর্য পাটের কাল, উদ্যমী নবীন থাকবে অটুট, ছাড়বে না তরীর হাল।” সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র‌্যাফেল ড্র শেষে বেজে ওঠে বিদায়ের সানাই। একে ওপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে ওঠে “ভালো থাকিস, ভালো রাখিস”।
ষ রুমি নোমান

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন