১। মোহাম্মাদ আবদুল্লাহ সাফওয়ান তালুকদার, শাহাপুর, কুমিল্লা।
জিজ্ঞাসা : অপ্রয়োজনে সেলফি তোলা হারাম কিনা জানতে চাই?
জবাব : সেলফি বা ছবি আরবিতে ‘তাসবীর’, ইংরেজিতে ‘চযড়ঃড়, চরপঃঁৎব’ ইত্যাদি বলা হয়। একটি ছবি (আলোকচিত্র) যা নিজেরই তোলা নিজের প্রতিকৃতি। সাধারণত স্মার্টফোন বা ওয়েব ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণ করা হয় এবং কোন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড দেওয়া। বর্তমানে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তথা ফেসবুক এর সোহবাতে পড়ে কে কত ইউনিকভাবে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথা ফেসবুকে পোস্ট করতে পারে তা নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। সেলফি না তুললে কি আর ভদ্র হওয়া যায়? তাইতো ভদ্রলোকেরা গায়ের গেঞ্জি খুলে মশারিতে ঢুকতে যাবে, এমন সময়ও তুলছে সেলফি, হজ করতে গিয়ে কাবা ঘরের সামনে তুলছেন সেলফি। এখানেই কি শেষ? না! বন্ধুদের নিয়ে হোটেলে খেতে বসে এক হাত দিয়ে খাবার খাচ্ছে আরেক হাত দিয়ে সেলফি তুলছে, মাসজিদে নামাজ পড়তে যেয়ে সেলফি, নামাজ শেষে বাম হাত দিয়ে মুনাজাত আর ডান হাত দিয়ে সেলফি তুলছে, রুগী দেখতে হাসপাতালে যেয়ে রুগীর সাথে সেলফি, জানাযায় যেয়ে লাশের সাথে সেলফি, একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে পেলে তার সাথে সেলফি, মাহফিলে যেয়ে সেলফি, দুআ করার সময় সেলফি, ঘুড়তে যেয়ে সেলফি, পড়ার সময় সেলফি, গোসল করতে যেয়ে সেলফি, খুতবার সময় সেলফি, ওয়াজের সময় সেলফি, গাড়িতে বসে সেলফি, হুন্ডায় বসে সেলফি, মোবাইলে কারো সাথে কথা বলার সময় সেলফি, নেক কাজ করার সময় সেলফি। এ যেন বর্তমানে সেলফির হাট-বাজার বসেছে। শুধু সেলফি আর সেলফি। আর তা আপলোডও করছেন অকপটে। গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসে সেলফি তুলতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় শিকার হয়েছেন অগণিত। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সানডিয়াগো শহরের ডট ফ্যাসলারের সাপের সঙ্গে সেলফি তোলার খবরটিতে তোলপার সৃষ্টি হয়েছিল অনেক। সেলফি তুলতে গিয়ে সাপের কামড়ে হাসপাতালে বিল গুনেছেন এক লাখ ৫৩ হাজার ১৬১ ডলার যা আমদের দেশের হিসেবে এক কোটি ১৭ লাখ টাকা প্রায়। সেলফি তোলার এই নোংরা প্রতিযোগিতায় আলেম সমাজ, মাদরাসার ছাত্ররাও পিছিয়ে নেই। অথচ কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআতের আকীদা মোতাবেক না হলেই নয় এমন প্রয়োজন ছাড়া কোন প্রাণীর ছবি তৈরি করা, তোলা, তোলানো, আঁকা, রাখা, দেখা, দেখানো ইত্যাদি হারাম ও নাজায়েয। হাদীসে এসেছে, হযরত ইবনে আব্বাস রাদি-আল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ইরশাদ ফরমান, প্রত্যেক ছবি তুলনে ওয়ালা জাহান্নামী। (মুসলিম শরীফ) আরও বর্ণিত রয়েছে, হযরত আবূ মুয়াবিয়া রাদি-আল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় কিয়ামতের দিন দোযখীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আজাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে। (মুসলিম শরিফ : ৭ম খÐ, পৃষ্ঠা ১৮৮, হাদিস নং ৫৩৭৬) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তিকে কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আকে। (বুখারী, মিশকাত) ইসলামে অপ্রয়োজনে ছবি তোলা হারাম। এমন তো নয় যে ছবি না তুললে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে! তবুও মুসলমানদের সেলফিকাÐ থেমে নেই। ছবি বা সেলফি অপ্রয়োজনে যে কোন জায়গায় তোলা অন্যায়, তা যদি আবার পবিত্র কোন আঙ্গিনায় তথা মাসজিদে, নামাজের সময়, দুআর সময়, খুতবার সময়, বয়ানের সময় হয়, তা শিষ্টাচার বহির্ভূত নয় কি? আমরা তো অনেকে আবার নিজেরা ছবি না তুললেও অন্যের সেলফিতে লাইক দিতে ভুল করছি না। কারো সেলফিতে লাইক দেয়া মানে তাকে সমর্থন করা। উৎসাহ দেয়া। আর গুনাহের কাজে কাউকে সমর্থন কিংবা উৎসাহ দেয়া মারাত্মক অন্যায়, সমপরিমাণ গুনাহ। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা তাকওয়ার কাজে একে অন্যকে সাহায্য করো। তবে গুনাহ ও শত্রæতার কাজে কেউ কাউকে সাহায্য করো না।” (সূরা মায়িদা : ২) আমরা জানি, জরুরত এর কারণে অনেক সময় হারামটা মুবাহ হয়ে যায়। যেমন জীবন বাঁচানো ফরজ। এখন কেউ যদি তিনদিন পর্যন্ত হালাল খাদ্য না পেয়ে অনাহারে থাকে তার জন্য হারাম খাদ্য মুবাহ হয়ে যায়। ঠিক নামাজ, রোজার ক্ষেত্রেও কেউ অসুস্থ বা শরীয়তের দৃষ্টিতে মাজুর বলে গণ্য হলে তার জন্য নামাজ বা রোজা ফরয থাকে না। একইভাবে যেহেতু হালাল রুজি অন্বেষণ করা ফরয, তাই হালাল রুজি উপার্যন করতে গিয়ে যদি ছবি তোলা বাধ্যতামূলক হয়ে যায় সেক্ষেত্রে ছবি তুলে যতকপি প্রয়োজন ঠিক ততকপিই করতে হবে। আর একটি কথা না বললেই নয়। বর্তমানে একটি শিশু জন্মের পর থেকেই কোন না কোন প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে বড় হচ্ছে। প্রযুক্তির সহজতর মাধ্যম হচ্ছে মুঠোফোন। বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ মুঠোফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেটভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রযুক্তি মানুষের উপকার যেমন করে, তেমনি ক্ষতিও করে। উত্তর দিচ্ছেন : মুহাম্মদ বশির উল্লাহ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন