চট্টগ্রাম ব্যুরো : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি বেপরোয়া ড্রাইভারের মতো রাজনৈতিক দুর্ঘটনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোন সময় কোনটা ঘটিয়ে ফেলে, বলা যায় না। বিএনপির এখন আর ইস্যু নেই। এরা ক্ষমতা পাওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে গেছে। গতকাল (শনিবার) বিকেলে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, তাদের নাকি নির্বাচনে ডাকতে হবে। আরে ডাকব কেন? তোমরা যখন ক্ষমতায় ছিলে আমাদের কি ডেকেছিলে? নির্বাচন আমার অধিকার। এটা কারো দয়াও না, করুণাও না। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার গরজ আপনাদের। গত সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি ‘ভুলের চোরাবালিতে’ আটকে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভুল গতবার করেছেন। চোরাবালি থেকে বের না হলে আপনাদের রাজনৈতিক অস্তিত্বই আগামীতে হুমকির মুখে পড়বে।
বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, এরা জিতেও বলে আরো ভোট পেতাম যদি নির্বাচন নিরপেক্ষ হতো। কে এদের বোঝাবে? তিনি উল্লেখ করেন, মাঝে মাঝে এখানে-ওখানে যা হয়; সিলেটে, মিরসরাইয়ে, সীতাকুন্ডে, ঢাকার আশকোনায়। এর পেছনে কারা? বিএনপি প্রধান পৃষ্ঠপোষক। বিএনপিকে নিয়ে ‘বিচলিত’ না হতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচনে ব্যর্থ। একটা কুমিল্লা পেয়ে মনে হয় সারাদেশ জয় করে ফেলেছে। নারায়ণগঞ্জে আমাদের এত বড় বিজয় আমরা তো এত উচ্ছ¡াস দেখাইনি। এরপরে ইউনিয়ন পরিষদে ৯০ শতাংশ আমরা। এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। তৃণমূলে আওয়ামী লীগ আছে। তিনি বলেন, তৃণমূলে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হচ্ছে, এ নির্বাচনকে বিজয়ের কাছে ঐক্যবদ্ধভাবে নিয়ে যেতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ পারবে না বিজয় ঠেকাতে।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, অপকর্ম আর খারাপ আচরণের মাধ্যমে যারা দলের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করছেন, তাদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আর সময় আছে মাত্র দেড় বছর। চা দোকানে বসে পার্টির সমালোচনা, নেতার সমালোচনা করলে ইজ্জত বাড়বে না, দলের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হবে। ছোটখাটো ভুলত্রæটি ঘরোয়াভাবে বসে সমাধান করুন। কথায় কথায় মুখোমুখি, মারামারি, খুনোখুনি যেন না হয়। দল করলে দলের নিয়ম-শৃঙ্খলা মানতে হবে। যত বড় প্রভাবশালী হোন, দলের নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের ভেতরে কিছু নেতা বিদ্রোহের উস্কানি দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করছে বলে মন্তব্য করে সেতুমন্ত্রী বলেন, কিছু আছে আওয়ামী লীগ করে, আবার নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। আওয়ামী লীগ করে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ যারা করে তাদের দলের প্রতি কোনো আনুগত্য, ভালোবাসা নেই। সেতুমন্ত্রী বলেন, যে নেতারা এ বিদ্রোহীদের মাঠে নামান, দলের গলা কাটেন, ছুরিকাঘাত করেন, সে নেতারা বিদ্রোহীদের চেয়েও বেশি দলের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। বিদ্রোহী এবং বিদ্রোহের উস্কানিদাতাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রিপোর্ট আছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, সময়মতো সবাই টের পাবেন, কত ধানে কত চাল। বিদ্রোহের উস্কানি যারা দেয়, তারা ভাবছে আমি দিচ্ছি প্রমাণ কি। কিন্তু শেখ হাসিনার কাছে প্রমাণ আছে। তাদের কেউই পার পেয়ে যেতে পারবে না।
প্রতিনিধি সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, পত্রিকায় দেখলাম একজন বিএনপি নেতা বলছেন নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন। এটি পুরনো কথা আবার বলছেন।
এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপির সভাপতিত্বে প্রতিনিধি সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও এনামুল হক শামীম, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, দিদারুল আলম এমপি, মাহফুজুর রহমান মিতা এমপি, উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম প্রমুখ।
ছাত্রলীগকে স্বার্থরক্ষার পাহারাদার করবেন না
ছাত্রলীগকে স্বার্থরক্ষার পাহারাদার না করতে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমি ছাত্রলীগকে বলছি। দলের ভাবমর্যাদা নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ হলে সাংগঠনিকভাবে, প্রশাসনিকভাবে আমরা কাউকে রেহাই দেবো না। নেত্রী আমাকে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন- ছাত্রলীগের প্রতি নির্দেশনা দিন। ছাত্রলীগকে আবারো বলছি- খারাপ খবরের শিরোনাম হবে না, সুনামের ধারায় ফিরে আসবে। তা না হলে আরো কঠিন আরো কঠোর ব্যবস্থা আমরা নেবো।
‘টর্চারে বিধস্ত’ ছিলেন ওবায়দুল কাদের
ওয়ান ইলেভেনের সময়ে ডিজিএফআইয়ের ‘টর্চারে’ আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘আর্তনাদ’ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। গতকাল নগরীর উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। প্রতিনিধি সভার প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও জানান, সে সময় তার চেহারা ‘বিধ্বস্ত’ হয়ে পড়েছিল। প্রতিনিধি সভায় অতীতের কঠিন সময় পেরিয়ে আসার কথা দলীয় নেতাকর্মীদের জানাতে গিয়ে বিষয়টির অবতারণা করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের মাঝে ওয়ান ইলেভেন এসেছিল। আজকের সাধারণ সম্পাদক, আমি আর উনি এক রুমে ছিলাম। আমি দেখেছি তার অবস্থা। তাকে যখন ডিজিএফআই নিয়ে যায়, চারদিন পর ফেরত আনে। আমাকে বলছে যে- মোশাররফ ভাই, আমি ১২ বছর জেল খাটতে রাজি আছি। কিন্তু আমি আর ডিজিএফআইয়ের কাছে টর্চারিংয়ে যেতে চাই না। তিনি বলেন, এরকমভাবে আমার কাছে আর্তনাদ করে বলেছেন। সেই ওবায়দুল কাদের আজকে এখানে আছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যৌবনে দেখেছি, বিশাল হৃদয়। বঙ্গবন্ধু কন্যার হৃদয় আরো বিশাল, সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। সবাইকে নিয়ে আজকে উনি দেশকে গড়ছেন এবং এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
কওমি সনদের স্বীকৃতিতে বিএনপির গায়ে জ্বালা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি ঘোষণা করায় বিএনপির ‘গায়ে জ্বালা’ ধরেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। গতকাল উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএনপির সমালোচনা করে হানিফ বলেন, যে গোলাম আযম সারাজীবন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, তাকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। বেগম জিয়া ক্ষমতায় আসার পর মতিউর রহমান নিজামী ও মুজাহিদকে মন্ত্রী করেন। বিএনপির উদ্দেশে হানিফ বলেন, বিএনপি মুখে ধর্মের কথা বললেও তাদের অন্তরে ধর্ম নেই। কওমি মাদরাসায় লাখ লাখ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। এতদিন তাদের কোনো ভবিষ্যত ছিল না। কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই বিএনপির গায়ে জ্বালা, তারা খুশি হতে পারেনি। এর কারণ ব্যাখ্যা করে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, এর ফলে ইসলামপন্থী সব দলের জননেত্রীর প্রতি আস্থা আসবে। বিএনপি-জামায়াত ভোটের রাজনীতিতে ফায়দা লুটতে চায়। তাই তারা খুশি নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন