বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ। এটি বাঙালির সার্বজনীন একটি লোকউৎসব। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙালির সেই প্রাচীন ঐতিহ্যকে লালন করে প্রতিবছরের মতো এবারো আড়ম্বর পূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষকে উদযাপন করে। পুরাতন বছরকে বিদায় দেওয়া ও নতুন বছর ১৪২৪ কে বরণ উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচী গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ‘মুছে যাক গøানী ঘুছে যাক জরা, অগ্নি¯œানে সূচী হোক ধরা ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে শুক্রবার সকাল ১০টায় প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়।
শোভাযাত্রা শেষে “বাংলা মঞ্চে” সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সমাবেত হয় সকলে। সেখানে সকাল সাড়ে ১০টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ৩ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী। বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ সাইদুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির আহŸায়ক ও ইংরেজি বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. এ.এইচ.এম আক্তারুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রক্টর প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুবর রহমান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তপন কুমার রায় ও শিক্ষার্থী সারজিনা আক্তার দিপার সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীরা নৃত্য, গান, আবৃত্তিসহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাÐ পরিচালনা করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ও বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রাপ্ত বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. আবুল আহসান চৌধুরী বলেন, ‘পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে সারা বাংলায় যে প্রাণ চাঞ্চল্য উৎসব উৎসারিত হয়ে থাকে তা সম্পূর্ণভাবে অসাম্প্রাদায়িক চেতনায় লালিত। বাঙালির বাংলা নববর্ষ, মহান ভাষা আন্দোলন মহান মুক্তিযোদ্ধা এই তিনটি অনুষ্ঠানের সাথে কোন ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, সাম্প্রদায়িকতা, অনুদারিতা, গোষ্ঠীবদ্ধতার সম্পর্ক নেই।
তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা উপলক্ষে ৫০টি স্টল বরাদ্দ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নিñিদ্র নিরাপত্তাসহ মেলার চারদিকে সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। লোক শিল্প, নাগরদোলা, কারুশিল্পসহ ঐতিহ্যবাহী ও বাহারী সব পণ্য ও মুখরোচক খাবার নিয়ে হাজির হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। হঠাৎ চোখ যায় একটি স্টল ঘিরে ভীড়ের দিকে। বায়োস্কোপ নিয়ে হাজির হয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান ও তার বন্ধুরা। তবে আনন্দের সাথে থেমে নেই কিন্তু মানবতা! রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অসুস্থ শিক্ষার্থী আলামীনের সহায়তায় তার বন্ধুরাও স্টল দিয়েছে মেলাতে।
বৈশাখী মেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও ছিলো চমকপ্রদ। প্রথম দিনে মঞ্চস্থ হয় বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার প্রযোজিত ‘জাকির মামার বাকির খাতা’ নাটকটি। দ্বিতীয়দিন অনুষ্ঠিত হয় বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা। দর্শনা, ভেড়ামারা, বিপুল বাড়িয়াসহ পাাঁচটি স্থান থেকে আগত ৭০ জনের অধিক লাঠিয়ালের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় লাঠি নৃত্য, লাঠি ফাইট, ঝাকের নৃত্যসহ নানা রকমের ঐতিহ্যবাহী খেলা। মেলার তৃতীয়দিনে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী কাহিনী সমৃদ্ধ যাত্রাপালা ‘মুঘলে আজম’। বৈশাখী মেলা শেষ হয়ে গেলেও তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যে অভূতপূর্ব সাড়া জাগিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। শত বছরের এই উদযাপন কে একটি কথাতেই বলতে হয় ‘শত বর্ষের অন্তপ্রাণ, ঐতিহ্যের জয়গান’।
ষ রুমি নোমান
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন