শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সঙ্কট বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার

| প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের : রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রফতানি আয় অব্যাহতভাবে কমে যাওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট দিন দিন বাড়ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে ডলারের বিনিময় মূল্য যা চাপ সৃষ্টি করছে অর্থনীতিতে। গতকাল আমদানি পর্যায়ে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৩ টাকা ৩০ পয়সা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো ইচ্ছে মাফিক নিজেদের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা ধরে রাখতে পারে না। এজন্য নির্ধারিত সীমা বেঁধে দেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। নীতিমালা অনুযায়ী একটি ব্যাংক দিন শেষে তার মোট মূলধনের ১৫ শতাংশ সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের কাছে সংরক্ষণ করতে পারে। দিনশেষে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ডলার থাকলে বাজারে বিক্রি করছে হবে। বাজারে বিক্রি করতে না পারলে ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জরিমানা গুনতে হয়।
গত কয়েক বছর যাবত বিনিয়োগ স্থবিরতার মাঝে বাজারে ডলারের বাড়তি কোনো চাহিদা ছিল না। ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ ডলার আহরণ করে তা প্রতিটি ব্যাংকের হাতেই উদ্বৃত্ত থেকে যায়। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনেছে। কিন্তু এখন এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, একদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে, পাশাপাশি রফতানি আয়েও ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। সামনে পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতির লক্ষণ নেই। একই সাথে ধারাবাহিকভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। যে হারে মধ্যপ্রাচ্য থেকে শ্রমিক ফিরে আসছে ওই হারে যাচ্ছে না। ফলে কমে যাচ্ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। সবমিলে বাজারে ডলারে কিছুটা টান ধরেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের মান ধরে রাখার জন্য গত কয়েক বছরে বাজার থেকে উদ্বৃত্ত ডলার কিনে রিজার্ভের ভাÐার সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু এখন রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। আগে যেখানে প্রতি মাসে দেড়শ’ কোটি ডলার আসতো এখন তা ১০০ কোটি ডলারের নীচে নেমে গেছে। অপরদিকে রফতানি আয়ও কমে গেছে। এদিকে, অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ নেয়া হয় সর্বোচ্চ ৬ মাস মেয়াদে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের (৭২ হাজার কোটি টাকা) ঋণ রয়েছে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। এ ঋণও ধারাবাহিকভাবে মেয়াদ শেষে পরিশোধ শুরু হয়েছে। সবমিলে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু এর বিপরীতে সরবরাহ না বেড়ে বরং কমে গেছে। ফলে বেশিরভাগ ব্যাংকেরই ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে।
ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণ ও এ থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রফতানি আয় কমে যাওয়ার কথা। একটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী গতকাল বলেছেন, আমাদের রেমিট্যান্স কমে গেছে। রফতানি আয়ও কমে যাচ্ছে। কিন্তু আমদানি ব্যয় কমছে না। ফলে এর প্রভাব পড়েছে মুদ্রাবাজারে। তিনি মনে করেন, এ পরিস্থিতি সাময়িক। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংক সচেতন রয়েছে। বাজার বেশি খারাপ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করেই হোক আর যে কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করেই হোক তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি গতকাল জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে হস্তক্ষেপ করে থাকে। বাজারে যখন উদ্বৃত্ত ডলার ছিল তখন তা কিনে নিয়ে বাজারকে স্বাভাবিক রাখে। এখন ডলারের সংকট। কিন্তু এর বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার ছাড়ছে না। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ না করলে অর্থাৎ বাজারে ডলার না ছাড়লে আমদানি পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে। এতে মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে বলে তিনি মনে করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন