১। মোহাম্মাদ হাসানুল বারী ফেরদাউস রামপুরা, ঢাকা।
জিজ্ঞাসা : জঙ্গি নির্মূলে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা জরুরি কিনা জানতে চাই?
জবাব : জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস নিয়ে দেশের জনগণ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়! জঙ্গিরা কখন-কোথায় হামলা করে এ নিয়ে জনগণ ভীত-আতঙ্কিত। গত ১ জুলাই, শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা অতর্কিত ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালায়। হামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ দেশি-বিদেশি ২০ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালীয়, ৭ জন জাপানি ও একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি ছিলেন। (দৈনিক যুগান্তর : ২ জুলাই ’১৬) গত ৭ জুলাই, বৃহস্পতিবার ঈদের দিন ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের প্রায় চারশ গজ পশ্চিমে আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে পুলিশের ওপর জঙ্গিরা হামলা চালায়। জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ চারজন নিহত হয়েছেন। (দৈনিক প্রথম আলো, ৮ জুলাই ’১৬) গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় ‘নব্য জেএমবির’ শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীসহ পুলিশের এক সদস্য অভিযানে নিহত হন। (যুগান্তর : ২৮ আগস্ট ’১৬) গাজীপুরের নোয়াগাঁওয়ের আফারখোলা পাতারটেক এলাকায় একটি জঙ্গি আস্তানায় যৌথবাহিনীর অভিযানে সাত জঙ্গি এবং টাঙ্গাইলে র্যাবের অভিযানে দুইজন নিহত হয়। (সমকাল : ৮ অক্টোবর ২০১৬) গত ২৭ ডিসেম্বর শনিবার, রাজধানীর আশকোনার জঙ্গি আস্তানায় পুলিশি অভিযানে দুজন নিহত হয়েছেন। (কালের কণ্ঠ : ২৮ ডিসেম্বর ’১৬) গত ১৬ মার্চ, চট্টগ্রামের সীতাকুÐ উপজেলার কলেজ রোডে ছায়ানীড় নামে একটি বাড়িতে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নারীসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। (ইত্তেফাক : ১৬ মার্চ ২০১৭) সম্প্রতি গত ২৫ মার্চ, রোববার সিলেটের শিববাড়ি এলাকার জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহলে’ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলাকালে দুই দফা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা অন্তত ৪০ জন। হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, আহত অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। (দৈনিক যুগান্তর : ২৬ জানুয়ারি ২০১৭) দৈনিক কাগজে প্রায়ই দেখা যায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী-জঙ্গিরা বিভিন্নভাবে প্রশাসনসহ নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা জঙ্গি আস্তানা গড়ে তুলে সক্রিয় হয়ে ওঠার খবর দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন মিডিয়ায়! এ কলামটি লেখা পর্যন্ত (৩০ মার্চ ’১৭) চট্টগ্রাম-ঢাকা, সিলেট, মৌলভীবাজারের পর কুমিল্লায়ও জঙ্গিদের আস্তানায় যৌথবাহিনী কর্তৃক ঘেরাও এবং অভিযান পরিচালনার খবর পাওয়া গেছে। সরকার, প্রশাসন, গোয়েন্দাদের সজাগ দৃষ্টি থাকার পরও জঙ্গি মূসা, আজিনা-মর্জিনা প্রমুখ জঙ্গিরা কীভাবে দেশে একের পর এক আস্তানা গড়ে তুলে ভয়ঙ্কর হামলা চালায় এ বিষয়টি প্রশ্ন থেকেই যায়! জঙ্গি-সন্ত্রাসী এবং উগ্রবাদীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে। জঙ্গিরা একের পর এক ভয়াবহ ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আক্রমণ চালাচ্ছে প্রশাসন এবং নিরীহ মানুষের ওপর। জঙ্গি ইস্যুটি বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি আলোচিত। দেশে জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদের নেটওয়ার্ক বিস্তার ও হামলার পর হামলা জটিল ও বহুমুখী সংকটে পরিণত হয়েছে। দুর্বল অর্থনীতির বাংলাদেশকে আইএসের মতো সন্ত্রাসবাদী গ্রæপগুলো ব্রিডিং জোন হিসেবে টার্গেট করে একের পর এক জেলা-শহর, এলাকায় হামলা অব্যাহত রাখছে। তাদের বহুমুখী হামলায় দেশবাসী চরম উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছেন। ইসলাম ও মুসলিম জাতিকে কলঙ্কিত করতেই জঙ্গিরা একের পর এক সন্ত্রাসী-জঙ্গি কর্মকান্ড সক্রিয়ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বে নতুন গজিয়ে ওঠা কিছু সংগঠন জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দিচ্ছে।
তারা জিহাদ শব্দ ব্যবহার করে ইসলামের নামে বিভিন্ন অরাজকতামূলক কর্মকান্ড সংগঠিত করছে। জঙ্গিদের আক্রমণে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ নিহত হচ্ছেন সাধারণ মানুষও। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঘরবাড়ি, অর্থ-সম্পদ। জঙ্গিরা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বিভিন্ন ধরনের জঘন্য কর্মকান্ড সংগঠিত করে ইসলাম ও মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দেয়। এতে করে ধর্ম-দেশ-জাতির বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। তাদের এহেন কার্যক্রম রাষ্ট্র ও ধর্মরোধী। পাশ্চাত্য ষড়যন্ত্রের কারণেই এই নব্য সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের উত্থান। আইএস নামধারী জঙ্গি সংগঠনটি সম্প্রতি বেশকটি জঙ্গি-সন্ত্রাসী হামলার মধ্যদিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় বেশ আলোচনায় চলে এসেছে। জঙ্গি বা সন্ত্রাসী নামে কোনো খবর প্রকাশিত হলেই সমাজের একশ্রেণির মানুষ ধরে নেয় এটা মুসলিমদের কান্ড। শুধু তাই নয়, যারা সুন্নতি লিবাস পরিধান করে, দাড়ি রাখে, টুপি পরে এবং আল্লাহু আকবারের তাকবীর উচ্চারণে তারাই সাধারণত এই কাজের সাথে জড়িত ধারণা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে লেবাসধারীরা তারা সত্যিকার মুসলমান নয়, তারা দাড়ি-টুপি-পরে আলেম সেজে- ধরেছে মুসলমানের বেশ। আল্লাহু আকবারের তাকবীর’ ¯েøাগান এবং ইসলামী বইপুস্তক, সুন্নতি লিবাস পরিধান দাড়ি-টুপিধারী ব্যক্তিদের ঢালাওভাবে জঙ্গি বানানো কোনো সচেতন-বুদ্ধিমান এবং প্রকৃত মুসলমানেরও কাজ নয়!
উত্তর দিচ্ছেন : এহসান বিন মুজাহির
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন