মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নি¯œানে শুচি হোক ধরা’- কবিগুরু রবী ঠাকুরের এই বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়েই যেন প্রতি বছর ফিরে ফিরে আসে পহেলা বৈশাখ। বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক হয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উৎসব এই পহেলা বৈশাখ। বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ সর্বস্তরের বাঙালিরা এদিন বর্ষবরণের আনন্দে জেগে উঠেন নতুন করে। বর্ষবরণ মানেই পুরনো দিনের সকল দুঃখ, গøানি, হতাশাকে ভুলে নতুন রঙে জেগে উঠা। নতুন মনন ও চেতনা নিয়ে জেগে উঠার এই উৎসবে লাল পাহাড়ের চিরসবুজ ক্যাম্পাস কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ও তার পরিপূর্ণ আড়ম্বর নিয়ে হাজির হয়েছিল এবার। বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের পহেলা বৈশাখের দিনব্যাপি নানা আয়োজন প্রমাণ করেছে বাঙালি মানেই এক অভিন্ন সত্তা, যাদের নেই কোনো ভেদাভেদ।
বাংলা নববর্ষ-১৪২৪ কে বরণ বর্ণিল সাজে বরণ করতে সপ্তাহ দুয়েক পূর্ব থেকেই চলছিল কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের নানা প্রস্তুতি। আল্পনা, দেয়াল লিখন, রঙ-বেরঙের ব্যানার, ফ্যাস্টুন, টেপা পুতুল, সমৃদ্ধির প্রতীক হাতি, ঘোড়াসহ আবহমান গ্রাম-বাংলার নানা ধরনের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক উঠে আসে এসব কারুকার্জে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পহেলা বৈশাখের দিন সকাল ৯টায় শুরু হয় বর্ণাঢ্য ও জাঁকজমকপূর্ণ মঙ্গল শোভাযাত্রা। ‘এসো মিলি প্রাণের উৎসবে’ এই প্রতিপাদ্য নিয়েই বর্ণিল এই শোভাযাত্রা প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় ক্যাম্পাসের বৈশাখী চত্বরে।
চত্বরকে ঘিরে দেওয়া বিশ^বিদালয়ের বিভিন্ন বিভাগের স্টলগুলো দর্শকদের নজর কাড়ে। এসব স্টলে বিভিন্ন খেলনা, পানীয়, বাহারি রঙের পিঠার আয়োজন যেন গ্রাম-বাংলার চিরচারিত মেলার কথা মনে করিয়ে দেয়। এদিকে বাংলা বিভাগের আয়োজনে চলে পান্তা-রুই ভোজ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদেশেই ইলিশ বর্জন করে বিভাগটি। বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আলী আশরাফ বাংলা বিভাগের সভাপতি ড. জিএম মনিরুজ্জামানের আমন্ত্রণে বিভাগে যান এবং পান্তা ভোজের উদ্বোধন করেন। পান্তা পর্ব শেষে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের স্বরচিত ‘হালখাতা-১৪২৪ বঙ্গাব্দ’ নামের নান্দনিক একটি দেয়ালিকারও পর্দা উন্মোচন করেন ভিসি।
দুপুরের পর ‘আনন্দলোকে...মঙ্গলালোকে...বিরাজো...সত্য সুন্দরো....’ গানের মাধ্যমেই শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে একে একে বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের পরিবেশনা নিয়ে আসে। এসব পরিবেশনায় প্রস্ফুটিত হয় বাঙালি সংস্কৃতির নানা দিক। একবিংশ শতাব্দীতে এসে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আগ্রাসনের বিপরীতে আবহমান গ্রাম-বাংলার নিত্যদিনের স্মৃতি রোমন্থন যেন এক মুহূর্তের জন্য হলেও মনে করিয়ে দেয়Ñ একদিন বাঙালি ছিলাম রে! একইসাথেÑ সংস্কৃতি চর্চাই পারে মানুষকে জঙ্গিবাদসহ যাবতীয় অনাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেÑ এই ¯েøাগানও আন্দোলিত হয় সাংস্কৃতিক পর্বে মঞ্চ থেকে।
অনুষ্ঠানের শেষের দিকে মূল আকর্ষণ ছিল ‘থিয়েটার কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়’র পরিবেশনায় ‘বৌ’ নাটক। নাটকটিতে গ্রামীণ মুসলিম পরিবারের কিছু অপসংস্কৃতি তুলে ধরা হয়।
ষ মাহফুজ কিশোর
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন